বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তা, ঈদের আগে মে মাসের বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা কম
এপ্রিল মাসের বেতন দেওয়ার সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বেসরকারি স্কুল ও কলেজে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের প্রস্তাব পাঠায়নি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। ফলে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেতন দেওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এপ্রিলের বেতন না হলে ঈদুল আজহার আগে মে মাসের বেতন এবং উৎসব ভাতা পাওয়া নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা ও উৎকণ্ঠা।
বেতন প্রক্রিয়ার ধীরগতি ও জটিলতা
এ বিষয়ে মাউশির এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ইএমআইএস) সেল জানিয়েছে, শিক্ষক-কর্মচারীরা ঈদের আগেই মে মাসের বেতন এবং উৎসব ভাতা পাবেন বলে তারা আশা করছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদের আগেই উৎসব ভাতা দেওয়া গেলেও মে মাসের বেতন দেওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক অনুবিভাগ-২) মো: মিজানুর রহমান জানান, “এপ্রিল মাসের বেতনের প্রস্তাব চলতি সপ্তাহের মধ্যেই পাঠানো হবে। এরপর আগামী সপ্তাহে শিক্ষকদের এপ্রিলের বেতন পরিশোধ হতে পারে। তবে ঈদের আগে মে মাসের বেতন দেওয়া যাবে কি না, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।”
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের প্রস্তাব প্রথমে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে ইএমআইএস সেলে পাঠানো হয়। এরপর ইএমআইএস সেল তা সংকলন করে মাউশির সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেয়। সেখান থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়, যেখানে কয়েকটি পর্যায় পেরিয়ে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে যায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর এটি চিফ অ্যাকাউন্টস অফিস হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে পৌঁছায়। পুরো প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ ও সময়সাপেক্ষ।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, “যদি মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এপ্রিল মাসের বেতনের প্রস্তাব পাঠানো না হয়, তাহলে মে মাসের বেতনের প্রস্তাবেও একই বিলম্ব হতে পারে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৭ বা ৮ জুন ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হতে পারে। আর ৫ জুন হবে ঈদের আগের শেষ কর্মদিবস। তাই স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে যে ঈদের আগেই মে মাসের বেতন পরিশোধ সম্ভব না হলেও উৎসব ভাতা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
ইএফটি চালু হলেও অগ্রগতি ধীর
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এখনো পুরোপুরি আধুনিক পদ্ধতিতে দেওয়া হয়নি। সরকারি কর্মচারীরা যেখানে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) পদ্ধতিতে সরাসরি বেতন-ভাতা পান, সেখানে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এখনও ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতির মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন উত্তোলন করতে বাধ্য হন। এতে তাঁদের ভোগান্তি বাড়ছে।
এই সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবসে, বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ইএফটি পদ্ধতিতে প্রদানের ঘোষণা দেয়। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমে ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের বেতন ইএফটির মাধ্যমে দেওয়া হয়। পরে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক এই সুবিধার আওতায় আসেন।
ধাপে ধাপে আরও ৬৭ হাজার, ৮৪ হাজার এবং ৮ হাজার ২০০ জন শিক্ষক-কর্মচারী ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের বেতন ইএফটি-র মাধ্যমে পেয়েছেন। কিন্তু এপ্রিল মাসের বেতন তারা এখনও পাননি। সংশ্লিষ্টদের মতে, আগামী সপ্তাহে এপ্রিলের বেতন দেওয়া হলেও মে মাসের বেতন ঈদের আগেই হবে, এমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
Leave a Reply