এপ্রিল মাসের বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা, প্রস্তাব পাঠায়নি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর
বেসরকারি স্কুল ও কলেজে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীরা এখনো এপ্রিল মাসের বেতন পাননি। কারণ, এপ্রিল মাসের বেতনের প্রস্তাব এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়নি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। চলতি সপ্তাহেই প্রস্তাব পাঠানোর কথা থাকলেও এক কর্মকর্তার অসুস্থতার কারণে পুরো প্রক্রিয়াটি অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) মো. মিজানুর রহমান বলেন, “মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ইএমআইএস (Education Management Information System) সেলের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে বেতনের প্রস্তাব তৈরির কাজ বিলম্বিত হয়েছে। এই কারণেই এখনো প্রস্তাব মন্ত্রণালে পাঠানো সম্ভব হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।”
বেতন প্রক্রিয়া বিলম্বিত, অনিশ্চয়তায় শিক্ষকরা
কবে নাগাদ বেতনের প্রস্তাব পাঠানো হবে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব জানান, “আমরা নির্দেশনা দিয়েছি যেন চলতি সপ্তাহেই প্রস্তাব পাঠানো হয়। তবে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে আসার পর তা একাধিক দফতরের অনুমোদনের মাধ্যমে ব্যাংকে পাঠাতে হয়। সে কারণেই পুরো প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগে। আশা করছি আগামী সপ্তাহের মধ্যেই শিক্ষক-কর্মচারীরা এপ্রিল মাসের বেতন পেয়ে যাবেন।”
‘অ্যানালগ’ পদ্ধতির ভোগান্তি থেকে মুক্তির চেষ্টা
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেখানে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (EFT) পদ্ধতির মাধ্যমে সরাসরি বেতন-ভাতা পান, সেখানে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এখনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতিতে বেতন পাচ্ছেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছিলেন।
এই ভোগান্তি লাঘবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ঘোষণা দেয় যে, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওর টাকা ধাপে ধাপে EFT পদ্ধতিতে প্রদান করা হবে। প্রথম দফায় ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে অক্টোবর মাসের বেতন EFT’র মাধ্যমে দেওয়া হয়। পরে, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রায় ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক EFT পদ্ধতিতে বেতন-ভাতা পেতে শুরু করেন।
ধাপে ধাপে EFT বাস্তবায়ন, তবুও বিলম্ব
এরপর দ্বিতীয় দফায় ৬৭ হাজার, তৃতীয় দফায় ৮৪ হাজার এবং চতুর্থ ধাপে আরও ৮ হাজার ২০০ এর বেশি শিক্ষক-কর্মচারী ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের বেতন EFT-এর মাধ্যমে পেয়েছেন। কিন্তু এপ্রিল মাসের বেতন এখনো কেউ পাননি। যদিও আগামী সপ্তাহে বেতন পাওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, বেতনের প্রস্তাব এখনো না পাঠানোয় সেই সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে এসেছে।
শিক্ষকদের মধ্যে বাড়ছে অসন্তোষ
বেতনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বারবার বিলম্ব এবং তথ্য স্বচ্ছতার অভাব শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। সময়মতো বেতন না পেলে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত নানা সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানিয়েছেন অনেকেই। তারা দ্রুত প্রস্তাব পাঠিয়ে বেতন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি।
Leave a Reply