এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) পদ্ধতির মাধ্যমে আইবাস++ সফটওয়্যারে তাদের বেতন প্রদান করা হবে। এর ফলে সাময়িক বরখাস্ত, মৃত্যুবরণকারী বা বেতন বন্ধ থাকা শিক্ষকরা আর পুরো মাসের বেতন পাবেন না।
নতুন পদ্ধতিতে প্রতিমাসে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা অনলাইনে শিক্ষক-কর্মচারীদের তালিকা জমা দেবেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ইএমআইএস সেল সেই তথ্য যাচাই-বাছাই করে হিসাব তৈরি করবে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে সরকারি আদেশ (জিও) জারির মাধ্যমে নির্দিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতন পাঠানো হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পূর্বে আইবাস++ সফটওয়্যারে বেতন দেওয়ার কারণে বরখাস্ত বা মৃত শিক্ষক-কর্মচারীদের অ্যাকাউন্টেও টাকা চলে যেত। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে নতুন পদ্ধতির প্রবর্তন।
২০২৩ সালের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এক ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। কেউ ক্লাসে না গিয়েও বেতন পেয়েছেন, আবার কেউ ক্লাসে উপস্থিত থেকেও বেতন পাননি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিছু নির্দেশনা দিলেও বাস্তবায়নে গতি আসেনি।
বর্তমানে দোষী প্রমাণিত শিক্ষকরা বাদ পড়লেও, অনেকের নাম এখনো ইএফটি তালিকায় থেকে যাচ্ছে, ফলে তারা পূর্ণ বেতন পাচ্ছেন—যা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতির কারণ হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানেই নতুন বেতন প্রক্রিয়া কার্যকর হচ্ছে।
ইতোমধ্যে ইএফটির আওতায় বেতনের ডিসেম্বরের ৭ম ধাপ, জানুয়ারির ৪র্থ ধাপ, ফেব্রুয়ারির ৩য় ধাপ ও মার্চের ২য় ধাপের প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। টেকনিক্যাল কারণে কিছুটা বিলম্ব হলেও প্রস্তাবগুলো দ্রুত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর এপ্রিল মাসের বেতন নিয়ে কাজ শুরু হবে।
জানা গেছে, যারা প্রোফাইল সংশোধন ও হালনাগাদ করেছেন, তারা ডিসেম্বরের ৭ম ধাপে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। ষষ্ঠ ধাপে বাদ পড়া শিক্ষক-কর্মচারীরাও এতে যুক্ত হয়েছেন। এসব ধাপ শেষ হলেই ঈদের বোনাস ও উৎসব ভাতার বিষয়ে কাজ শুরু হবে।
এর আগে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য ইএফটি পদ্ধতিতে বেতন দেওয়ার ঘোষণা আসে ২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবসে। প্রাথমিক পর্যায়ে ২০৯ জন শিক্ষকের বেতন ইএফটিতে ছাড়া হয়। এরপর জানুয়ারিতে আরও ১ লাখ ৮৯ হাজার এবং দ্বিতীয় ধাপে ৬৭ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ইএফটির মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে।
পরিশেষে যে কথা বলতে চাই তা হলো যে কোন সিষ্টেম বা পদ্ধতি চালু করা হয় নির্দিষ্ট কিছু ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর উপকার স্বার্থে, কিন্তু তা যদি হিতে বিপরীত হয়ে দেখা দেয় তাহলে কিন্তু বড়ই উদ্বেগের বিষয়। আর একটা কথা সকল সিষ্টেম পরিচালিত হয় মানুষ দ্বারা কাজেই সবার আগে সেই মানুষদের মনোজগতের সিষ্টেম যদি পরিবর্তন না আসে তাহলে কোন পরিবর্তন আসবে না। আগে বেতন পেতে এমপিওভুক্তদের দীর্ঘ প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ও ব্যাংকে দৌড়ঝাঁপ করতে হতো। নতুন এই উদ্যোগের ফলে শিক্ষকদের ভোগান্তি কমার কথা এবং সরকারি অর্থের অপব্যবহারও রোধ হবার কথা কিন্তু উদ্বেগের বিষয় সেটার কোনটাই ঘটেছে কি?
Leave a Reply