এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ও অন্যান্য ভাতা সংক্রান্ত জটিলতা যেন এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার নিত্যদিনের ঘটনা। প্রতিবছরই উৎসবের আগমনে শিক্ষকদের মধ্যে আশা জাগে, কিছুটা স্বস্তি মিলবে—কিন্তু সেই আশার পাশে জুড়ে থাকে একরাশ অনিশ্চয়তা, বিলম্ব আর প্রশাসনিক ‘ধোঁয়াশা’। যার ব্যতিক্রম এবারও এখনও ঘটেনি।
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা পূর্বের ২৫% এর সঙ্গে আরও ২৫% যোগ করে ৫০% করা হবে। তবে এখানে দুইটি শ্রেণিতে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে:
শিক্ষকদের উৎসব ভাতা ২৫% বৃদ্ধি করতে সরকারের প্রয়োজন প্রায় ২২৯ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার মতো। বাকিটা কোথা থেকে আসবে? যে টাকার সংস্থান এখনও করা সম্ভব হয়নি বিভিন্ন সুত্র মোতাবেক যে কারণে বলা হয়েছে কিঞ্চিত ধোঁয়াশা রয়েছে উৎসব ভাতার বিষয়ে। তবে এবিষয়ে বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টার জোর প্রচেষ্টা ও তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে অন্য কিছু প্রকল্প থেকে টাকা স্থানান্তর হলেও তা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
এ বিষয়ে দুই-তিন দিনের মধ্যে মিটিং হওয়ার কথা, তারপরই চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে। তাই এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না—সব কিছুই “কিঞ্চিত ধোঁয়াশা”।
শিক্ষক-কর্মচারীদের আশা ছিল বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, এবং শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতাও বাড়বে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, এগুলো দ্বিগুণ করতে লাগবে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা, যা বর্তমান বাজেট থেকে সংস্থান করা এক কথায় অসম্ভব। তাই এই ভাতাগুলো এই বাজেটে বাড়ানো হচ্ছে না, কিন্তু পরবর্তী বাজেটে বাড়ানোর জন্য চাপ অব্যাহত রাখা জরুরি। চাপ যদি অব্যাহত না রাখা যায় তাহলে এই ভাতাগুলো বাড়ানো নিয়ে অনিশ্চয়তাও দেখা দিতে পারে। কারণ এদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কোন সুবিধা প্রদানে বিরোধিতা করার লোকের অভাব নাই। এদেশের আমলারা কখনই চায় না এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের কোন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হোক। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় যা তা হলো এই যে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক সংগঠনের বিভিন্ন নেতারা বা বিভিন্ন সংগঠনও এ ব্যাপারে বিভিন্ন ভাবে বিরোধিতা করতে পারে। কারণ অনেক সংগঠনই চায় না যে, বর্তমানে এই সরকারের আমলে কোন সুগোগ সুবিধা বৃদ্ধি হোক তাহলে তাদের মুরব্বিগিরি থাকবে না তাই।
বিদায়ী শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আগামী বাজেটে ভাতাগুলো বাড়ানো হবে। বিশেষ করে উৎসব ভাতাকে ১০০% করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে গোপন সূত্র জানিয়েছে। সেই সাথে অন্যান্য প্রতিশ্রুতি দেওয়া ভাতাগুলো বৃদ্ধি করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
এই খবরে নিঃসন্দেহে শিক্ষক মহলে আশার আলো জ্বলছে। তবে অতীতে এমন অনেক প্রতিশ্রুতি ব্যর্থতায় রূপ নিয়েছে, তাই এবার সবাই বলছেন—
“চাপ অব্যাহত রাখতে হবে, নাহলে আবারও হয়তো স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাবে।”
আমাদের দেশের বাস্তবতা হলো—যে দাবি যত বেশি সোচ্চার, তার বাস্তবায়ন ততটাই সম্ভব। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও অবহেলা নতুন কিছু নয়। তাই উৎসব ভাতা ও অন্যান্য ভাতা বৃদ্ধির দাবিকে ধারাবাহিক আন্দোলন, প্রচারণা ও আলোচনার মাধ্যমে টিকিয়ে রাখা জরুরি।
আজ শিক্ষকরা বলছেন—
“উৎসব ভাতা যেন উৎসবের প্রতীক হয়, ক্লান্তির প্রতীক যেন না হয়।”
বৈষমবিহীন বাংলাদেশে আমরা চাই—সম্মানিত পেশায় যুক্ত থেকে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে। সময়মতো, সঠিকভাবে ও উপযুক্ত হারে ভাতা প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্র যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায়, তবে শুধু একজন শিক্ষকই নন—গোটা জাতিই উপকৃত হবে।
Leave a Reply