শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান, পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রস্তুত, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, শিক্ষার্থীদের তথ্য ব্যবস্থাপনা ও এমপিওভুক্তি—শিক্ষা খাতে এসব গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলেছেন সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অথচ সরকারিভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের আওতায় থাকা প্রায় ১২০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী টানা চার মাস ধরে বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত। ফলে অর্থকষ্টে তাদের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় সাময়িকভাবে বেতন-ভাতা বন্ধ ছিল। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সেসিপ প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে। এখন বকেয়াসহ বেতন-ভাতা পরিশোধের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (উন্নয়ন-১) মনিরা বেগম।
বেতন বন্ধ থাকলেও কাজ থেমে নেই। নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন সেসিপ প্রকল্পের কর্মীরা। কেউ কেউ পরিবার চালাতে ধারদেনায় পড়েছেন, কেউবা ওষুধ কেনার টাকাও জোগাড় করতে পারছেন না।
ইএমআইএস সেলের এক কর্মকর্তা বলেন, “ঈদের আগের রাতে তিনটা পর্যন্ত কাজ করেছি বেতন প্রসেসিংয়ে। অথচ নিজেরাই বেতন পাচ্ছি না। সন্তানের জন্য কিছু কিনে দিতে পারিনি, ফার্মেসিতে ওষুধের বাকি জমেছে। এমন অবস্থায় কীভাবে চলছি, আল্লাহই জানেন।”
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এক কর্মকর্তা জানান, “সরকারি চাকরির ছাপ থাকায় কেউ ধারও দেয় না, আবার নিজের কষ্টের কথাও বলা যায় না। ঈদের সময় ঋণ করে চলেছি। এখন বাসাভাড়া বাকি, ঋণের কিস্তি দিতে হচ্ছে, আবার ধার করতে হচ্ছে। প্রতি মাসে দুই হাজার টাকার ওষুধ লাগে—সবই এখন বাকিতে চলছে।”
সেসিপ প্রকল্পের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি—চাকরিগুলো দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হিসেবে রাজস্বখাতে স্থানান্তর করতে হবে। তাদের ভাষায়, অনেক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পকর্মীদের চাকরি রাজস্বখাতে নেওয়া হলেও সেসিপ প্রকল্পে তা হয়নি। ২০১৭ সালে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে মৌখিক সম্মতি মিললেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের টালবাহানায় সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।
তারা বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন কাজ করায় অভিজ্ঞ, দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে উঠেছি। আমাদের কাজে লাগালে শিক্ষা খাত আরও এগিয়ে যাবে। রাজস্বখাতে চাকরি স্থানান্তর না হলে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেই বারবার বেতন বন্ধের শিকার হতে হবে।”
সেসিপ প্রকল্পটি শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) যৌথ অর্থায়নে ২০০১-২০০৭ মেয়াদে চালু হয়। এরপর ২০১৪ সাল পর্যন্ত এটি এসইএসডিপি নামে বাস্তবায়িত হয়। পরে ২০১৪ সাল থেকে সেসিপ নামে নতুন রূপে প্রকল্পটি চালু হয় এবং এর মেয়াদ সাত দফা বাড়িয়ে ২০২4 সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। বর্তমান মেয়াদ বৃদ্ধির অনুমোদন একনেক দিয়েছে, কিন্তু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন—শুধু মেয়াদ বাড়ালে হবে না, স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।
Leave a Reply