এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীরা কি এই দেশের সবচেয়ে সহজ লক্ষ্যবস্তু? যাদের নিয়ে ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, আবার পরক্ষণেই ভুলে যাওয়া যায়? যদি তা না হয়, তাহলে তাদের বিষয়ে প্রায় প্রতিটি সিদ্ধান্তই কেন বিতর্কিত হয়?
বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা তার শেষ সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন—এ পেশায় এমন বৈষম্য বিরাজমান, যা এক বা দুইটি বাজেট দিয়ে দূর করা সম্ভব নয়। তবে পরিবর্তনের সূচনা জরুরি, আর সেই সূচনার দায়িত্ব তারা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন। এ বক্তব্যে শিক্ষক ও কর্মচারীরা আশার আলো দেখেছিল।
এরপর চলতি মাসে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সেখানে কেবল শিক্ষকদের উৎসব ভাতা ২৫% বাড়ানোর প্রস্তাব ছিল, কর্মচারীদের ভাতা পূর্বের মতোই রাখার সুপারিশ করা হয়। যুক্তি দেওয়া হয়, কর্মচারীরা ইতোমধ্যে ৫০% হারে ভাতা পাচ্ছেন, অর্থ সংস্থানের সমস্যাও একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
তবে ২৮ এপ্রিল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী পরিষদের মুখপাত্র জাফর আলী জানান, কর্মচারীদের ভাতা বৃদ্ধির কোনো প্রস্তাব এখনো অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে কেবল আশ্বাস পাওয়া গেছে।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে—শিক্ষকরা কখনও কর্মচারীদের বাদ দিয়ে কোনো সুবিধা দাবি করেছেন কি? আমাদের জানা মতে, কখনোই কোনো শিক্ষক সংগঠন কর্মচারীদের বাইরে রেখে দাবিপত্র উত্থাপন করেনি। তাহলে কেন এই ভাতার প্রস্তাবে শিক্ষক ও কর্মচারীদের ভিন্নভাবে বিবেচনা করা হলো? এর মাধ্যমে কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভাজন তৈরির চেষ্টা চলছে?
একই প্রস্তাবে শিক্ষক থাকবেন, কর্মচারীরা থাকবেন না—এ সিদ্ধান্তের পেছনে কারা? অর্থসংস্থানের অজুহাত তিন দিন আগে ছিল, তিন দিন পর তা আবার কীভাবে মিলে গেল? তাহলে কি এটা ছিল কেবল কথার কথা, যার বাস্তবায়নে কোনো আগ্রহই ছিল না?
এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের প্রায় প্রতিটি বিষয়ে কেন এত বিতর্ক তৈরি হয়? এটি কি নিছক কাকতালীয়, নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত? কেন তাদের স্বার্থ রক্ষায় বারবার দেনদরবার করতে হয়, যেখানে অন্যান্য সরকারি খাত স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুবিধা পেয়ে থাকে?
বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা কিন্তু কোথাও বলেননি, শুধুমাত্র শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বাড়ানো হবে। তিনি সমস্ত এমপিওভুক্তদের কথা বলেছেন—তাহলে কর্মচারীদের উপেক্ষা করে কেন বিতর্ক উসকে দেওয়া হলো?
এই পেশাকে বারবার বিতর্কিত করা, অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখার পরেও অবহেলিত করে রাখা—এটি কাদের উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে? এ দেশের উন্নয়নে শুধু আমলাদের নয়, শিক্ষকদেরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। উন্নয়নের অংশীদার সব পেশাজীবীদের মর্যাদা নিশ্চিত না হলে রাষ্ট্র কাঠামো দুর্বল হবে।
তাই আবারও অনুরোধ, দয়া করে বিভাজনের রাজনীতি নয়—সমতার ভিত্তিতে, ন্যায়ের পথে সিদ্ধান্ত নিন। যাতে শিক্ষক ও কর্মচারী উভয়েই সম্মান নিয়ে কাজ করতে পারেন, এবং ভবিষ্যতে আর কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক না জন্ম নেয়।
Leave a Reply