আবারও একটি মাস শেষের দিকে, আর আবারও সেই পুরোনো দুঃস্বপ্ন—বেতন নিয়ে দুশ্চিন্তা! এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছে মাসের শেষ মানেই চরম অনিশ্চয়তা, এক ভয়ংকর অপেক্ষা—সময়মতো বেতন আসবে তো? কারণ বেতন না এলে, পাওনাদারদের মুখে কড়া কথা শুনে নিজেদের অপমান গিলে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। অথচ প্রতিবারই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) একই বুলি আউড়ে যায়, “আগামী মাস থেকে আর দেরি হবে না!”—একটা আশার বীজ বুনে দিয়ে আবারও তা মাটিতে পুঁতে রাখে।
এবারেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। মাউশি আবারও নিশ্চিত করল—তারাই নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভাঙার রেকর্ড ভাঙতে চলেছে!
গত ১৭ এপ্রিল মাউশির ইএমআইএস সেল এক বিবৃতি দেয়—এপ্রিল মাসের বেতন যেন মাসের শুরুতেই দেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। তাদের ঘোষণার ভাষায়:
“এমপিওভুক্ত স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা যাতে এপ্রিল মাসের শুরুতেই বেতন পেতে পারেন, সে লক্ষ্যে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে ইএমআইএস সেল। মার্চের মধ্যেই প্রস্তাব পাঠানোর চেষ্টা চলছে যাতে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বেতন প্রদান সম্ভব হয়।”
কথা কত মিষ্টি, কিন্তু বাস্তবতা ঠিক তার উল্টো! ইএমআইএস সূত্রই আবার জানায়, শিক্ষক-কর্মচারীদের মৃত্যু, অবসর ও বদলি সংক্রান্ত জটিলতার অজুহাত দেখিয়ে তারা প্রক্রিয়া পিছিয়ে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছ থেকে হালনাগাদ তালিকা চাওয়া হয়েছে—এতদিন পর!
এক কর্মকর্তা জানান, কিছু প্রশাসনিক জটিলতা আছে, সমাধান হচ্ছে, সব ঠিক থাকলে মে মাসের ৮ তারিখের মধ্যে এপ্রিলের বেতন দেওয়া যাবে। শুনে হাসি পায়! কারণ বাস্তবতা হলো—এখনও পর্যন্ত (আজকের তারিখ পর্যন্ত) মাউশির ইএমআইএস সেল বেতন প্রদানের কার্যক্রম শুরুই করেনি।
এদিকে সামনে ২৫ ও ২৬ এপ্রিল সরকারি ছুটি। এরপর অফিস খুলবে ২৯ তারিখ। তারপর আবার মে দিবসের ছুটি (১ মে), ফলে অফিস খুলবে ৪ মে। ৪ তারিখ অফিস খোলার পর যদি কার্যক্রম শুরু করে, তাহলে বেতন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে হতে ১০-১২ তারিখ পার হয়ে যাবে। ব্যাংক হিসাবে টাকা পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় ১৫ মে হয়ে যাবে।
এই হলো এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ভাগ্য! প্রতিবারের মতো এবারও মাউশি প্রতিশ্রুতি ভেঙে, মুখে ঝাঁপসা হাসি দিয়ে আমাদের ধোঁকা দিচ্ছে। একদিকে তারা আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার গুরুদায়িত্ব দেয়, অন্যদিকে নিজেদের দাপ্তরিক ব্যর্থতায় শিক্ষকদেরকেই ভিক্ষুকের মতো অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রাখে!
সত্যি কথা বলতে কি, মাউশির কাছ থেকে আশাবাদী হওয়ার মতো আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তাদের বারবার দেওয়া মিথ্যা আশ্বাসের ভারে আমাদের সম্মান, আত্মসম্মান—সব কিছুই চাপা পড়ে যাচ্ছে। প্রতিবারই কথা দিয়ে কথা রাখে না। মুখে বলে ‘সমস্যার সমাধান’, বাস্তবে দেয় ‘বিলম্ব আর বিড়ম্বনা’।
এটা কোনো ব্যক্তিগত ক্ষোভ নয়, এটি এমপিওভুক্ত হাজারো শিক্ষক-কর্মচারীর হৃদয়ের রক্তক্ষরণের চিৎকার! যে প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের সম্মান দিতে ব্যর্থ, তাদের কাছ থেকে কী আশা করা যায়?
আমরা যারা দিনরাত পাঠদান করে শিক্ষার্থীদের আলোকিত করার স্বপ্ন দেখি, আমাদেরকেই সবচেয়ে বেশি অবহেলা আর প্রতারণার শিকার হতে হয়। মাস শেষে দু’টাকা হাতে পেতে চাইলে যে অপমানের পাহাড় ডিঙাতে হয়, তার কথা বুঝবে কে?
শেষ কথা—মাউশি আবারও কথা রাখেনি। রাখবে বলেও বিশ্বাস করার মতো কোনো কারণ আর আমাদের হাতে নেই। এই দুর্ভাগ্য, এই প্রতারণা আর এই অপেক্ষার জীবনই যেন হয়ে উঠেছে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়তি!
Leave a Reply