উৎসব ভাতা নিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না। শিক্ষক ও কর্মচারীরা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নন। প্রকৃত কারসাজি আমলাদের, যারা বাজেট ঘাটতির অজুহাতে আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে। একতাবদ্ধ হই, যৌক্তিক দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে চলি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানে শিক্ষক ও কর্মচারী—উভয়ের সম্মান।
সম্প্রতি দেশের এদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এক আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে তা হলো এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা সংক্রান্ত একটি ইস্যু। সরকার ২০২৫ সালের বাজেটে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা ২৫% থেকে বাড়িয়ে ৫০% করেছে, কিন্তু কর্মচারীদের ভাতা যেখানে ইতিমধ্যে ৫০% ছিল, সেখানে রয়ে গেছে তাদের উৎসব ভাতা সুবিধার কোন পরিবর্তন হয় নি। বিষয়টি খুব দৃষ্টিকুটু হলেও প্রকৃত অর্থে এর কোনো সমাধান কি শিক্ষকদের মধ্যে বা শিক্ষক নেতাদের হাতে রয়েছে ভাল করে ভেবে বলুনতো প্রিয় কর্মচারী ভাইয়েরা। উচিত ছিল আপনাদেরও ২৫% বাড়িয়ে ৭৫% করা।
এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। দুঃখজনকভাবে, কিছু কর্মচারী সরলভাবে দোষারোপ করছেন শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের। অথচ প্রকৃতপক্ষে শিক্ষকরা কিংবা তাদের নেতারা এ সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কোনো ভূমিকা রাখেননি। এমপিওভুক্ত শিক্ষক নেতারা যখনই কোন দাবীর কথা বলেছেন তখনই শিক্ষক কর্মচারীদের কথা উল্লেখ করেই বলেছে। বরং এই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে শিক্ষা পরিবারকে বিভক্ত রাখার পিছনে রয়েছে একটি সুক্ষ্ম আমলাতান্ত্রিক কৌশল। এই কৌশলে আমরা যদি পা দিয়ে আমরা আমাদের নিজেদের ঐক্য থেকে বিচ্যুতি হই তাহলে সামনের কঠিন পথ পাড়ি দেওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে। সামনে আমাদের রয়েছে আরও অনেক কঠিন পথ যা পারি দিতে হবে একসাথে একহয়ে।
এই লেখায় আমরা চেষ্টা করবো আসল পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিষয়টি সকলের কাছে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে।
প্রথমত, উৎসব ভাতা হলো একটি বার্ষিক বিশেষ ভাতা, যা সরকারি, বেসরকারি ও এমপিওভুক্ত বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের জন্য সরকার নির্ধারিত করে থাকে। সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চাকুরীজীবিরা প্রতি বছর ২টি উৎসব ভাতা পায় মুল বেতনের সমপরিমাণ অর্থাৎ ১০০%।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা এতদিন ২৫% ছিল এবং কর্মচারীদের জন্য ৫০% ছিল। এ বছর শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ভাতা বাড়িয়ে কর্মচারীদের ন্যায় (৫০%) আনা হয়েছে, যাতে দুই পক্ষের মধ্যে ভাতার দিক দিয়ে কোনো বৈষম্য না থাকে। তবে এখানে একটি অসন্তোষ তৈরি হয়েছে যা তা হলো এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা প্রদান শুরু হয়েছিল যথাক্রমে ২৫% ও ৫০% হারে সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের বর্তমানে ২৫% বাড়িয়ে ৫০% করা হয় তাহলে কর্মচারীদেরও তো কমপক্ষে ২৫% বাঁড়িয়ে ৭৫% করা উচিত ছিল।
প্রিয় কর্মচারী ভাইয়েরা আপনাদের উদ্দেশ্য বলছি এখন যে আপনারা আমাদের যে, অন্যায়ভাবে দোষারোপ করছেন, বিষেদাগার করছেন তাতে প্রকৃত অর্থে আমাদের কি কোন দোষ আছে। একটু ভাবুন তো উৎসব ভাতা প্রদান যখন শুরু হয় আপনাদের ৫০% এবং শিক্ষকদের ২৫% করা হয় তখন কি আমরা আপনাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম, দাঁড়ায়নিতো। তাহলে এখন আমাদেরকে দোষারোপ কেন করছেন। যেখানে আমাদের বিন্দু মাত্র কোন সংশ্লিষ্টতা নাই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে। এ ব্যাপারে যারা হস্তক্ষেপ করেছে তারা হল আমলাতন্ত্র। তারা সুকৌশলে এই বিভ্রন্ত্রির সৃষ্টি করেছে।
আর একটা বিষয় এমন তো নয় আমাদের বাড়তি কোন সুবিধা দেওয়া হয়েছে আপনাদের পূর্বে যা ছিল এখন আপনাদের কাতারে নিয়ে গেছে। সুতরাং, এখানে শিক্ষকদের বাড়তি কোনো সুবিধা দেওয়া হয়নি—শুধু কর্মচারীদের স্তরে তুলনামূলকভাবে আনা হয়েছে।
এখানে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছেঃ
১. আমলাতান্ত্রিক কারসাজি:
সরকারি প্রশাসনে কিছু উচ্চ পর্যায়ের আমলা আছেন, যারা শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমাতে নানা অজুহাত তৈরি করেন। শিক্ষকদের ও কর্মচারীদের মধ্যে কৃত্রিম বিভেদ সৃষ্টি করে তারা দাবি ও আন্দোলনের শক্তি দুর্বল করতে চান। এদেশের আমলারা শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাঁড়াতে আগ্রহী নয় কারণ শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ালে তারা কোন লাভাবান হবে না। কারণ এখানকার বিনিয়োগের টাকার ভাগ তারা পাবে না। অন্য কোন সেক্টরে বিনিয়োগ বাড়ালে সেখানে রাজনৈতিক নেতাদের হাতিয়ার করে তাদের মাধ্যমে সেই বিনিয়োগের একটা অংশ তাদের পকেটে আসবে। বিধায় তারা শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাঁড়াতে আগ্রহী নয়।
২. বাজেট ঘাটতির অজুহাত:
বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চাপে রয়েছে। বাজেট ঘাটতি দেখিয়ে শিক্ষা ও মানবসম্পদ খাতে ব্যয় সংকোচনের একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু এই সংকটের আসল কারণ ভুল নীতিমালা এবং অপ্রয়োজনীয় খাতে অতিরিক্ত ব্যয়—not শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। তবে প্রকৃত চিত্র যা তা হলো কর্মচারীদের উৎসব ভাতা বাড়ালে যে পরিমাণ টাকার ব্যয় হত তা খুবই নগন্য। মাত্র হয়ত ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা।
অনেক কর্মচারী মনে করছেন শিক্ষক নেতারা নাকি শুধু নিজেদের স্বার্থ দেখেছেন। অথচ বাস্তবতা হলো—
তাই, শিক্ষকরা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নয়, বরং কর্মচারীদের সাথে নিয়েই এগিয়ে যেতে চায় সবসময়।
এখন প্রয়োজন:
✅ শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখা।
✅ বিভ্রান্তি থেকে বিরত থাকা এবং প্রকৃত কারণ শনাক্ত করা।
✅ যৌথভাবে যৌক্তিক দাবি পেশ করা।
✅ সামাজিক ও গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রচারের বিরুদ্ধে যুক্তিসঙ্গত প্রতিবাদ গড়ে তোলা।
কাজেই, কর্মচারী ভাইয়েরা—শিক্ষকদের প্রতি সন্দেহ নয়; বরং শিক্ষকদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে চলুন। একত্রিত কণ্ঠই পারে আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো বাস্তবায়ন করাতে।
পরিশেষে যা বলব তা হলো-
একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তখনই সুন্দরভাবে এগিয়ে যায়, যখন শিক্ষক ও কর্মচারী একে অপরের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকেন।
শিক্ষা খাতে বৈষম্য বা অবহেলা বন্ধ করতে হলে আমাদের ভেতরের বিভেদ নয়, সম্মিলিত শক্তি প্রয়োজন।
আসুন, বিভ্রান্তি নয়, প্রকৃত সত্য বুঝে ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলি।
শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্র—এই ত্রিমাত্রিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে উঠুক একটি শক্তিশালী, মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
Leave a Reply