বর্তমানে বাংলাদেশের এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীরা অবসরকালীন সুবিধা হিসেবে অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে এককালীন অর্থ পেয়ে থাকেন। তবে এই ব্যবস্থায় নানা জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা থাকায়, অনেক শিক্ষক অবসরের পরও বছরের পর বছর তাদের প্রাপ্য অর্থের জন্য অপেক্ষা করতে বাধ্য হন। এই পরিস্থিতিতে, সরকারিভাবে পেনশন চালু করার দাবি সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
বর্তমান অবস্থা ও সমস্যাঃ
- দীর্ঘসূত্রতা ও অনিশ্চয়তা: অবসর ও কল্যাণ সুবিধা পেতে অনেক শিক্ষককে ৩-৪ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। বর্তমানে প্রায় ৭৪,০০০ আবেদন অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে।
- তহবিল ঘাটতি: অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের বার্ষিক আয়ের তুলনায় প্রয়োজনীয় অর্থের ঘাটতি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বছরে প্রায় ৫০-৫৫ কোটি টাকা আয় হলেও, শিক্ষকদের দাবিকৃত অবসর ভাতা পরিশোধে প্রয়োজন ৪৪৪ কোটি টাকা।
- দুর্নীতি ও প্রশাসনিক জটিলতা: অর্থ প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও প্রশাসনিক জটিলতা রয়েছে, যা শিক্ষকদের জন্য অতিরিক্ত হয়রানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- তহবিল ঘাটতির বিষয়ে আরও একটি বিষয়ের গুঞ্জন রয়েছে বিগত সরকারের আমলে কল্যাণ ও অবসর ফান্ডের যাবতীয় টাকা নাকি লুটপাট হয়ে গেছে।
সরকারিভাবে পেনশন চালুর প্রয়োজনীয়তা
- নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা: সরকারি পেনশন ব্যবস্থা শিক্ষকদের অবসরের পর আর্থিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
- সমতা প্রতিষ্ঠা: সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠা হবে, যা শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবে।
প্রশাসনিক স্বচ্ছতা: সরকারি পেনশন ব্যবস্থায় প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে, যা দুর্নীতি কমাতে সহায়ক হবে।
- সর্বোপরি শিক্ষকদের মধ্যে চাকুরী পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক হতাশা থেকে মুক্তি পাবে।
- টাকা পাওয়ার এই দীর্ঘসুত্রীতা থেকে রেহাই পাবে।
- এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এই টাকা বা তহবিলের উপর লোভের কারণে অবসর প্রাপ্ত শিক্ষকরাও সংগঠনের নেতা হয়ে থাকতে চেষ্টা করে।
সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জঃ
- অতিরিক্ত বাজেটের প্রয়োজন: সরকারি পেনশন চালু করতে অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজন হবে, যা সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
- আইনগত ও প্রশাসনিক পরিবর্তন: বর্তমান অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের কাঠামো পরিবর্তন করে নতুন আইন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গঠন করতে হবে।
- তহবিল সংগ্রহ করতে হবে যেটা অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ এবং এ বিষয়ে সরকারকেই প্রধান ভুমিকা পালন করতে হবে।
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সরকারিভাবে পেনশন চালু করা সময়ের দাবি। এটি শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় সমতা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করবে। সরকার, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই পরিবর্তন সম্ভব।
Post Views: 681
[…] আরও পড়ুন…….“অবসর সুবিধা ও কল্যাণ তহবিল নয়,পেনশন… […]