কোথায় থেকে শুরু করব কিভাবে শুরু করব ভেবে পাচ্ছি না। শুধু একটা কথা মাথার মধ্যে আসতেছে তা হলো কেন আমাদের সাথে এত অবহেলা, কেন আমাদের সাথে এত অন্যায় কেউ কি একবার ভেবে দেখেছেন। ভাবুন ভাবার সময় এসেছে, যদি এখনও না ভাবেন, যদি ভেবে এর কারণ খুজে বের করার চেষ্টা না করেন তাহলে কিন্তু ভবিষ্যতে আবার ঠিক এমনটি আপনার সাথে হবে নিশ্চিত থাকেন।
একটা বিষয় ভেবে দেখেন তো আমরা এদেশের জন্য যতটুকু করি, আমরা এদেশকে যতটুকু দেওয়ার চেষ্টা করি বা করে আসছি বিগত দিন গুলো থেকে আর কোন পেশার মানুষ এতটুকু এদেশের জন্য দেয় বা দেওয়ার চেষ্টা করে। আমি দ্ব্যর্থহীন ভাবে বলছি আমাদের মত অর্থাৎ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মত এভাবে দেশের জন্য আর কোন পেশার মানুষ নিজেকে উজার করে দেয় না নিশ্চিত।
আরও পড়ুন……রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তাহলে কিন্তু বড় সমস্যা।
তাহলে আমাদের কেন এত সকল সময় সকল জনের নিকট বৈষম্যমুলক আচরণের জ্বালা সহ্য করতে হবে। আমরা কেন আর দশটা পেশাজীবির মতো সকলের কাছে সম্মান আশা করতে পারিনা। আমাদের কেন অন্যান্য পেশাজীবিরা রাষ্ট্রের বোঝা মনে করবে। আমাদের কোন চাওয়া পাওয়া আসলেই এদেশের আমলাদের অসহ্য লাগবে। এদেশের মন্ত্রীরা কেন আমাদের চাওয়া পাওয়াকে গুরুত্ব দেয় না।
এর অন্যতম প্রধান কারণ কি জানেন? কারণ হলো আমাদের এই পেশাজীবির মানুষগুলোর মধ্যে কোন প্রকারে কোন ঐক্য নাই। আমাদের ৬২টি সংগঠন। আমরা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। আমাদের নেতৃত্বে থাকে অবসর প্রাপ্তরা। সরকার পরিবর্তন হলে আমাদের নেতৃত্বের ধরন পরিবর্তন হয়ে যায়। নেতার পরিবর্তন হয়ে যায়। আমরা কখনই কোন বিষয়ে একত্রিত হতে পারিনা। আমরা কখনও এক হয়ে আন্দোলনের মাঠে উপস্থিত হতে পারি না। আমাদের আন্দোলন দেখে আমাদের সহকর্মীরাই তাচ্ছিল্য করে। আমাদের চাওয়া পাওয়ার বিরোধিতা করে আমাদের পেশার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যাক্তিবর্গরাই।
সঠিক করে বলতে পারবেন আমরা আসলে কি চাই? আজ পর্যন্ত কিন্তু আমরা যে কি চাই সেটাই কিন্তু নির্ধারিত করতে পারি নাই। এটা চাই সেটা চাই অনেক কিছু চাই তারপর বলি আমরা জাতীয়করণ চাই? আরে ভাই জাতীয়করণ হলে তো সকল চাওয়া আপনি আপনি পুরণ হয়ে যাবে তাই নয় কি? আর আমাদের এই ধরনের চাওয়ার কথা শুনে অন্যরা মিটমিট করে হাসে? হায়রে চাওয়ার ধরণ রে নিজেদের চাওয়াটা ঠিক করে চাইতে পারে না।
আচ্ছা একটু ভেবে বলেন তো এত সংগঠন কেন? এত সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা কি? ধরে নিলাম একাধিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা আছে তাই বলেতো আর ৬২টি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা আছে কি?
আমাদের আজকের এই পরিস্থিতি আমাদের ঐক্য না থাকার কারণে । আমাদের করুণ পরিণতির জন্য আমরা নিজেরাই অনেকটা বা পুরোটাই দায়ী আজ যদি আমরা একতাবদ্ধ থাকতে পারতাম, আজ যদি আমাদের মধ্যে ঐক্য দৃঢ়ভাবে থাকত তাহলে কোন ভাবেই কেউ আমাদের সাথে এমন আচরণ করার সাহস পেত না। ঐক্যহীনতা একটি শক্তিশালী সমাজ বা আন্দোলন গড়ে তোলার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই বাস্তবতা আমাদের দেশের শিক্ষকদের আন্দোলন এবং অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে এক দুর্ভাগ্যজনক সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঐক্যের অভাবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের করুণ পরিণতির কারণগুলো:
দাবির প্রতি অবহেলা:
শিক্ষকদের মধ্যে ঐক্য না থাকার কারণে তাদের দাবি বা প্রতিবাদ একত্রিতভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে না। তাই কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানরা শিক্ষকদের দাবির গুরুত্ব অনুভব করে না। এর ফলে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষিত হয়।
দুর্বল নেতৃত্ব:
যখন কোনো বৃহত্তর আন্দোলন বা দাবি আদায়ের জন্য শক্তিশালী নেতৃত্ব থাকে না, তখন সে আন্দোলন বা দাবি অধিকতর সফল হতে পারে না। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মাঝে নেতৃত্বের অভাব বা বিভক্তির কারণে আন্দোলন অনেক সময় একীভূত হয়ে ওঠে না এবং নেতৃবৃন্দের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়। এতে আন্দোলনের শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিভ্রান্তি এবং বিভাজন:
শিক্ষকরা যদি নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যান, তাহলে তাদের সংগ্রাম দুর্বল হয়ে পড়ে। বিভাজনের কারণে সরকার বা আমলারা শিক্ষকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করতে পারে। ফলে শিক্ষকদের মধ্যে আস্থা এবং ঐক্য ভেঙে যায়, যা পরবর্তীতে আন্দোলন বা দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে ঐক্যের অভাবে তারা তাদের মৌলিক অধিকার (যেমন বেতন, সম্মান, চাকরির নিরাপত্তা) থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। এই বঞ্চনার কারণে তাদের সামাজিক ও আর্থিক অবস্থান দুর্বল হয়ে যায় এবং শোষণ ও অবিচারের শিকার হতে হয়। যখন তারা একে অপরকে সমর্থন ও সহযোগিতা না করে, তখন তাদের অধিকার আদায় দুরূহ হয়ে পড়ে।
শিক্ষকদের উপেক্ষা:
ঐক্যহীনতার কারণে শিক্ষকদের দাবি খুব সহজে উপেক্ষিত হয়। একজন শিক্ষক বা ক্ষুদ্র গোষ্ঠী নিজের দাবি বা দাবি নিয়ে এগিয়ে গেলে তার আবেদন বা আন্দোলন আদৌ কার্যকরী হতে পারে না, কারণ ক্ষমতাসীনরা ঐক্যহীনতা দেখে তা পাত্তা দেয় না।
সমাধান:
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন:
শিক্ষকরা যদি একত্রিত হয়ে সংগঠিতভাবে তাদের দাবি জানাতে শুরু করেন, তবে আন্দোলনের শক্তি বৃদ্ধি পাবে। ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে, বৃহত্তর সংগঠন তৈরি করে দাবি আদায় করা সম্ভব হবে।
দৃঢ় নেতৃত্ব:
শিক্ষকদের মধ্যে একটি শক্তিশালী ও বাস্তবধর্মী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। নেতৃত্ব যদি দক্ষ ও নির্ভীক হয়, তবে তা আন্দোলনকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে এবং সরকারের কাছে শিক্ষকদের দাবি পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে।
একযোগিতায় কাজ করা:
শিক্ষকদের মধ্যে আন্তরিক সহযোগিতা ও একতা প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যাতে তাদের দাবির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিভাজন বা অস্থিরতা না আসে। একযোগিতায় কাজ করা শিক্ষক সমাজের একতাকে শক্তিশালী করবে এবং সরকারের কাছে তাদের পক্ষে দাবি তুলে ধরতে সাহায্য করবে।
অধ্যবসায় এবং স্থিতিশীলতা:
আন্দোলন বা দাবির প্রক্রিয়ায় অধ্যবসায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকদের যে সকল দাবি রয়েছে, তা একদিনে পূর্ণ হওয়া সম্ভব নয়, তবে স্থিতিশীলভাবে ও সংগঠিতভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
ঐক্য ছাড়া কোন আন্দোলন বা সংগ্রাম শক্তিশালী হতে পারে না। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অধিকার আদায়ের জন্য তাদের মধ্যে একতাবদ্ধ আন্দোলন এবং শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। বিভাজন এবং বিভ্রান্তি বাদ দিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করলে তাদের দাবি সফল হতে পারে এবং তা রাষ্ট্রের কাছে যথাযথ গুরুত্ব পেতে পারে। আজ যদি আমরা নিজেদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে পারি তাহলে আমাদের চাওয়া পূরণ হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
Leave a Reply