জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার, তিনি ছিলেন আধুনিক যুগের প্রথম ব্যক্তিদের মধ্যে একজন যিনি আমলাতন্ত্রের গুরুত্ব সম্পর্কে গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করেছিলেন। এই শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ ” bureau” থেকে , যা রাজার প্রতিনিধিরা রাজকীয় কাজে সারা দেশে ভ্রমণ করার সময় শহরে যে ছোট ডেস্ক স্থাপন করতেন তার একটি উল্লেখ।
ওয়েবার বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে জার্মানি সম্পর্কে লিখেছিলেন, যখন উন্নয়নশীল পুঁজিবাদ ক্রমশ বৃহৎ ব্যবসার জন্ম দিচ্ছিল। পরিবর্তিত অর্থনৈতিক দৃশ্যপট সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল। ওয়েবার আমলাতন্ত্রকে জটিল ব্যবসা এবং সরকারগুলিকে সংগঠিত করার জন্য একটি যুক্তিসঙ্গত উপায় হিসাবে দেখেছিলেন। তিনি এগুলিকে প্রয়োজনীয় মন্দ হিসাবে দেখেননি বরং একটি পরিবর্তিত সমাজের জন্য সর্বোত্তম সাংগঠনিক প্রতিক্রিয়া হিসাবে দেখেছিলেন।
ওয়েবারের মতে, মডেল আমলাতন্ত্রের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য রয়েছে:
আমাদের দেশের আমলাতন্ত্র এধরনের বৈশিষ্ট্যের সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ তা কিন্তু ভেবে দেখার বিষয় রয়েছে বা তা নিয়ে গবেষণার অনেক কিছুই আছে। যাই হোক এখন আসি আমাদের বর্তমান সমস্যা নিয়ে কিছু আলোকপাত করা যায় কিভাবে সেই বিষয় নিয়ে।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা যদি কেউ অস্বীকার করে তবে তা সে হিংসায় করবে, তা করবে সে তার হীন্য মানকিতার কারণে। কারণ যে দেশের ৯৭ থেকে ৯৮ ভাগ শিক্ষাদানের সাথে জড়িত হলো এদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সেই সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারী। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস দেখেন ৯৭-৯৮ ভাগ অবদান রাখার পরও এদেশের সবচেয়ে অবহেলিত পেশার নাম হলো এমপিওভুক্ত শিক্ষকতা পেশা।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা অবহেলিত থাকার পিছনে যে বিষয় গুলো কাজ করে তার অন্যতম হলো, এ পেশাজীবিদের দেখভালের দায়িত্ব যাদের হাতে তাদের অমনোযোগিতা. তাদের অবমুল্যায়ন এ পেশার মানকে কাঙ্খিত পর্যায়ে উপনীত হতে প্রধান অন্তরায় । মুল কথা হলো এই যে, এমপিওভু্ক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের চাওয়া পাওয়ার কথা শুনলে কেন জানি আমাদের দেশের আমলাদের মনে এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়, আমি বা আমরা বুঝে পাইনা যে, আমাদের সাথে তাদের সমস্যা কোথায় কেন? তারা বারবার আমাদের সমস্যা গুলোর সাথে বিরোধিতা করে। সকল আমলারা তো আর সরকারী স্কুলে পড়ে আমলা হয় নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোন না কোন আমলা আছে বেসরকারী স্কুলে পড়াশুনা করেছেন। নিশ্চয়ই এই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে তার বা তাদের শিক্ষাগুরু আছে। তাদের যদি নূনতম্য বিবেকবোধ থাকত বা তাদের শিক্ষকরে প্রতি স্বাভাবিক শ্রদ্ধাবোধ থাকত তাহলে কি তাদের উচিত এভাবে তাদের শিক্ষকদের চাওয়া পাওয়ার বিরোধিতা করা উচিত।
আরও পড়ুন….উৎসব যেন আজীবনের অভিশাপ! এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য?
একজন আমলাদের কাজ কি? নিশ্চয়ই তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করা নয়। তাদের কাজ হল নীতিনির্ধারণ তৈরিকারক। ঐতিহাসিকভাবে, আমলারা সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন। যারা জনগণের ভোট দ্বারা নির্বাচিত নন। বর্তমান সময়ে, আমলাদের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বড় একটি অংশ পরিচালিত হয়।
আরও পড়ুন…সরকারি বেতনের আওতাভুক্ত হচ্ছে কওমি মাদ্রাসা।
আমাদের আমলাতন্ত্র যদি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বিষয়ে সঠিক নীতি নির্ধারন করত তাহলে কিন্তু আজ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অর্থনৈতিক অবস্থা এত করুন পর্যায়ে থাকত না। আমলারা যদি সরকারকে ভাল কাজে উপদেশ দিত আর দেশের জন্য ক্ষতিকর কাজে সরকারকে নিষেধ করত তাহলে এদেশে শুধু এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ভাগ্য নয় এদেশের ভাগ্যাকাশেও নতুন সূর্যদোয় হতে খুব বেশি সময় লাগত না।
সর্বশেষ গত ১৯/০৩/২০২৫ ইং তারিখে সচিবালয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি পুরণ নিয়ে মিটিংয়ে আমলারা সরাসরি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি পুরণ নিয়ে বিরোধিতা করেছেন। তারা কোন ভাবেই চান না যে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সকল চাওয়া পাওয়াগুলো যৌক্তিকভাবে পূরণ করুক এদেশের সরকার। আমলারা চায় সমস্যাগুলো জিইয়ে রাখতে।
যখনই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি নিয়ে সরকার একটু নমনীয় মনোভাব দেখায় তখনই আমলারা সেটাকে কিভাবে জটিল করা যায় তার জন্য উঠে পড়ে লাগে। কিভাবে সে মনোভাব পরিবর্তন করা যায় তার জন্য কুটনৈতিক বেড়াজালের আশ্রয় নেয়।
আমাদের আমলাদের যোগসাজসেই কিন্তু এদেশে ফ্যাসিস্ট সরকার তৈরি হয়েছিল। তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগীতার কারণেই কিন্তু দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা বলবৎ ছিল। আর ফলাফল তো আমরা সবাই জানি। তাই আমাদের সরকার ব্যবস্থারও বোঝা উচিত ঐ আমলাতন্ত্রই কিন্তু এখনও বহাল আছে। কতজন পরিবর্তন হয়েছে নিশ্চয়ই এক দুইজনের বেশি নয়। অধিকাংশ গুলো রয়ে গেছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কি উচিত অর্থাৎ এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজের কি করা উচিত? আমাদের প্রথম যে কাজ করা উচিত আমাদের চাওয়া পাওয়া পুরণের স্বার্থে আমাদের দীর্ঘদিনের জমানো বৈষম্য নিরসনের জন্য তা হল। আমাদের সকল শিক্ষক কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া। দল মত নির্বিশেষে আমরা সকলেই তো এমপিওভুক্ত শিক্ষক আমাদের সকলের চাওয়া পাওয়া নিশ্চয়ই একটাই আর তা হল আমাদের বর্তমান বৈষম্য নিরসন। তাহলে আমাদের সকল শিক্ষক সংগঠন বলেন আর সকল শিক্ষক বলেন প্রথমত আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের মাঠে নামতে হবে। যদি আমলারা আমাদের দাবীর বিষয়ে কুটিলতার আশ্রয় নেয়। আমরা যদি সকল সংগঠন এক হই সকল শিক্ষক কর্মচারী এক হই তাহলে আমাদের সাথে এদেশের আমলারা কেন কোন ফ্যাসিবাদিই শক্তি বা তাদের দোসরা টিকতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
Leave a Reply