এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের সঠিক সময়ে বেতন প্রদান করার লক্ষ্যে ইএফটিতে বেতন ভাতা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার কিন্তু এ উদ্যোগ এখন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাউশির অব্যবস্থাপনা অদুরদর্শী কিছু সিদ্ধান্তের কারণে। গত ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ইএফটিতে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওর বেতন-ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেয় বর্তমান সরকার।
প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও ইএফটিতে ছাড় হয়। পরবর্তী সময়ে গত ১ জানুয়ারি ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতার সরকারি অংশের টাকা পেয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে ৬৭ হাজার, তৃতীয় ধাপে ৮৪ হাজার এবং চতুর্থ ধাপে ৮ হাজার ২০০ এর অধিক শিক্ষক-কর্মচারীকে ডিসেম্বর মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন ধাপের শিক্ষক কর্মচারীই কিন্তু জানুয়ারী ২০২৫ মাসের বেতন পাননি। ৫ম ধাপে আরও ৮ হাজার ৮ শত শিক্ষক কর্মচারীকে ডিসেম্বর ২০২৪ মাসের বেতন প্রদান করবে বলে মাউশি জানায় কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের বেতন প্রদান করেনি।
শিক্ষকদের এই বেতন প্রদানের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কথা মাউশিকে জানালে বা তাদের সাথে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলেন যে, ইএফটির নানাবিধ জটিলতার কারণে এ সমস্যাগুলো হচ্ছে যা পরবর্তীতে আর থাকবেনা। একসময় আপনারও প্রতিমাসের শুরুতেই অর্থাৎ মাসের ১ তারিখে সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের ন্যায় বেতন পাবেন। নিদিষ্ট করে এর সময় তারিখে জানতে চাইলে তারা বলে সকল শিক্ষক কর্মচারীর ইএফটির তথ্যের জটিলতা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যা অব্যাহত থাকবে।
কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় কথা সমস্যা থাকতে পারে বা সমস্যা থাকবে যেহেতু একটা নতুন সিষ্টেমে আপগ্রেড হচ্ছে সেই কারণে। তাই বলে সেই সমস্যা কিন্তু এতটা প্রকট আকার ধারণ করবে সেটা আশাব্যঞ্জক নয়। সমস্যার কারণে শিক্ষক কর্মচারীরা একমাসের বেতন অন্য মাসে গিয়ে পাবে তা মেনে নেওয়া সত্যিই অনেক কষ্টকর। এধরনের সমস্যায় পড়ত এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীগণ আজ থেকে ৪০ বছর পূর্বে। বর্তমানে এ ধরনের সমস্যা কি মেনে নেওয়া যায়। এরপরও যদি ইএফটির কারণে এ সমস্যা হত তা নয় হয় মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু তা তো নয় যে সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছে তা কিন্তু পুরোপুরি ইএফটি জটিলতার কারণে নয়। এখানে যে জটিলতার কথা বলা হচ্ছে তা হল এই যে, বেতন অনুমোদনের ধীরগতি। প্রশ্ন হলো বেতন অনুমোদন করে কে মন্ত্রণালয়। আরও নিদিষ্ট করে বললে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এই বেতনের চাহিদার ফাইল পাঠায় কে? মাউশি। এখন মাউশি যদি দেরি করে পাঠায় তাহলে দেরিতেই অনুমোদন হবে। সময়মতো বেতন অনুমোদন হতে হলে সময় মতো বেতনের ফাইল তো মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। এখন শোনা যাচ্ছে যে, যে কর্মকর্তা বেতনের ফাইল অনুমোদন করবে তিনি নাকি উপস্থিত নাই তাই বেতনের ফাইল অনুমোদন হচ্ছে না শিক্ষক কর্মচারীরা বেতনও পাচ্ছে না। তাহলে এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার দায় কি মাউশি কোন ভাবে এড়াতে পারে? আপনার কি মনে করেন।
এখন বর্তমানে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তা দুর হতে হতে এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ ছাড়া হবে বলে মনে হয়না। মন্ত্রণালয় অনুমোদনের পর সে ফাইল মাউশির প্রধান হিসাব কর্মকর্তা চেক করবে তারপর জিও জারি হবে তারপর বেতন প্রদানের জন্য আইবাস++ এর নিকট যাবে। এ সকল সমস্যার সমাধান নিশ্চয়ই এ সপ্তাহের মধ্যে সম্ভব হবে বলে আপনি মনে করেন?
তাহলে অবস্থা কি দাঁড়াচ্ছে আগামী সপ্তাহের যে কোন দিন। আর আগামী সপ্তাহের যে কোন দিন মানে মার্চ মাস। তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা জানুয়ারী মাসের বেতন পাবে মার্চ মাসে। কি সুন্দর একটা বিষয় তাই না?
তারপর আরও একটা প্রশ্ন থেকে যায় যে, মার্চ মাসে কিন্তু ফেব্রুয়ারীর বেতন পাওনা হবে। তাহলে ফেব্রুয়ারীর বেতন আবার কোনদিন দিবে?
সর্বশেষ যে প্রশ্ন তা হলো এ সমস্যা চলবে কতদিন? আমার জানামতে সহসা এ সমস্যা দুর হবে বলে মনে হয় না।
Leave a Reply