গত ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ইএফটিতে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওর বেতন-ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও ইএফটিতে ছাড় হয়। পরবর্তী সময়ে গত ১ জানুয়ারি ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতার সরকারি অংশের টাকা পেয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে ৬৭ হাজার এবং তৃতীয় ধাপে ৮৪ হাজার ৭০০। সেই ধারাবাহিকতায় গত ০৬ তারিখ ৪র্থ ধাপে ৮ হাজার ২৩৮ জন শিক্ষক কর্মচারীর পেমেন্ট তালিকা প্রকাশ করে মাউশি। যদিও তারা এখনও ডিসেম্বর মাসের বেতন পায়নি। ২য় ও তয় ধাপের শিক্ষক-কর্মচারী ইএফটির মাধ্যমে ডিসেম্বর-২০২৪ মাসের বেতন-ভাতা পেয়েছেন। তবে এখনো জানুয়ারি মাসের বেতন কোন ধাপের শিক্ষক কর্মচারীই এখনও পাননি।
১ম থেকে ৩য় ধাপের সকল শিক্ষক কর্মচারীরা জানুয়ারী মাসের বেতন পেতে পেতে আগামী সপ্তাহ নাগাদ হতে পারে।
মাউশি সুত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে খবরের আভাস পাওয়া গেছে তা হলো অবশিষ্ট ৩০ হাজার যে শিক্ষক কর্মচারী এখনও ইএফটির আওতাভুক্ত হতে পাযেরেনি এবং তারা কিভাবে ডিসেম্বর মাসের বেতন পাবে সে সমন্ধে মাউশি এখনও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। তাদের ব্যাপারেও মাউশি অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে যে, তাদের কিভাবে ডিসেম্বরের বেতন প্রদান করা যায়। হয়তবা এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে যে, তাদের মধ্যে থেকে কিছু সংখ্যক শিক্ষক কর্মচারী যাদের ভুল কোন ভাবে এড়িয়ে বর্তমানে ৫ম ধাপে ধাপে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা বা অন্য কোন উপায়ে তাদের ডিসেম্বরের বেতন প্রদান করা যায় কিনা সেটা ভাবছে। তবে সেই ভাবনাটা অবশিষ্ট ৩০ হাজার সকল শিক্ষক কর্মচারীর জন্য না কিছু সংখ্যক শিক্ষক কর্মচারীর জন্য সেটাও জানা যাবে মাউশির চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রকাশের পর।
সে যাই হোক এখন প্রশ্ন হলো এত ধাপ কেন? ইএফটির। একটু ইচ্ছা করলেই বা মাউশি একটু সদিচ্ছা থাকলেই কিন্তু এই ধাপ গুলো এড়ানো যেত। মাউশির খামখেয়ালীপনা সিদ্ধান্তের বলি কিন্তু হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা। মাউশি যদি আন্তরিক হতো তাহলে কিন্তু সকল শিক্ষক কর্মচারীরা বিশেষ করে এখন পর্যন্ত যে সাড়ে তিন লাখ শিক্ষক কর্মচারী ইএফটির আওতাভুক্ত হয়েছে তারা কিন্তু একসাথে তাদের বেতন ইএফটির মাধ্যমে পেত। হয়তবা সে বেতন ডিসেম্বরের না হয়ে জানুয়ারী হতো। তাতে কি আমাদের বা মাউশির তেমন কোন অসুবিধা বা সমস্যা হতো! হতো নাতো।
আসলে ভুত তো তেঁতুল গাছে নাই ভুত তো আছে ওঝার হাতের মধ্যে। তাহলে ভুত তাড়াবে কি করে কারণ ভুত লালন পালন করছে তো মাউশি নিজেই। মাউশি আসলে সত্যিকার ভাবে আন্তরিকই নয় যে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা ইএফটির মাধ্যমে বেতন পাবে। মাউশি চায়না যে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরাও তাদের মত করে ইএফটির মাধ্যমে বেতন ব্যাংক থেকে উত্তোলন করুক।
সেই কারণেই মাউশির এত ধাপের নাটক। হ্যাঁ স্বীকার করছি যে, কিছু সংখ্যক শিক্ষক কর্মচারীর তথ্যের জটিলতা বা সমস্যা আছে। তাদের সমস্যা কিন্তু এখনও আছে আগেও ছিল সংশোধন না করা পর্যন্ত থাকবে। এমন নয় যে, ধাপে ধাপে ইএফটির আওতাভুক্ত করলে তাদের তথ্যের সমস্যা গুলো আপনা আপনি ঠিক হয়ে যাবে।
সমস্যা হলো আর একটা হতে পারে তা হলো মাউশির কর্মপরিকল্পনা। হ্যাঁ ধরে নিলাম পূর্বের ধারণাগুলো যদি ভুল হয় তাহলে এটা মানতে হবে যে, মাউশি যে পরিকল্পনাতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ইএফটির আওতাভুক্ত করছে সে পরিকল্পনা মনে হয় সঠিক নয়। এই পরিকল্পনাতে শিক্ষক কর্মচারীদের জটিলতা বাড়ছে তাই দয়া করে আপনাদের পরিকল্পনাগুলো পরিবর্তন করে সময়োপোযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
যে সকল শিক্ষক কর্মচারদের তথ্যের সমস্যা রয়েছে তাদের সমস্যাগুলো অতি দ্রুত চিহ্নিত করে দ্রুত প্রতিষ্ঠানের ইএফটির প্যানেলে দৃশ্যমান করুন। কারণ তথ্যগুলো সংশোধন করতেও কিন্তু বেশ সময় লাগবে। এনআইডির তথ্য, সনদের তথ্য ও এমপিওশীটের তথ্য সংশোধন করতে কিন্তু অনেক সময় লাগে।
এখনও কিন্তু অনেক শিক্ষক কর্মচারীর অভিযোগ যে, তাদের সকল তথ্য সঠিক থাকার পরও তাদের নাম ইএফটির আওতাভুক্ত হয়নি। আপনাদের হটকারী সিদ্ধান্ত ও ইগো সমস্যার বলি হচ্ছে কিন্তু নিরীহ শিক্ষক কর্মচারীরা। মাউশি বলছে যে, যে শিক্ষকের তথ্য ভুল আছে তাদের তথ্য আইবাস++ ভেরিফিকেশন করতে পারছেনা। তাহলে ১ম ধাপের পর ২য় ধাপের, ২য় ধাপের পর ৩য় ধাপের ও ৩য় ধাপের পর ৪র্থ শিক্ষক কর্মচারীদের তথ্য কিভাবে ভেরিফিকেশন হলো। শিক্ষক কর্মচারীরা তো নতুন করে তথ্য পাঠায়নি। পরে যখন ভেরিফিকেশন সম্ভব হলো তাহলে শুরুতেই তো এই কৌশল অবলম্বন করা যেত নাকি? মনে হয়তো ইচ্ছা করলেই যেত। তাহলে তো আর এতগুলো ধাপের দরকার হতো না। সবগুলো মিলে একধাপ করা যেত। আর যাদের তথ্য এর সমস্যা থাকত তাদের দ্রুত সংশোধন সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত।
আমরা ইচ্ছা করলেই কিন্তু অনেক সমস্যা এড়াতে পারি যদি আমাদের আন্তরিকতা থাকে। কিন্তু সমস্যা ঐ জায়গাতেই তা হলো আন্তরিকতায়। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে “যদি হয় সুজন তেঁতুল পাতায় নয়জন”। তো মাউশি যদি সুজন হতো তাহলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের আজ ইএফটির এই গাঁড়াকলে পড়তে হতো না। এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের আজ এত ধাপে বিভক্ত হতে হতো না।
Leave a Reply