গত ৫ অক্টোবর যখন ঘোষণা করা হয় এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ইএফটির মাধ্যমে প্রেরণ করা হবে। সিদ্ধান্তটা যখন আমি শুনি তখন অনেকের মতো আমিও খুশি হয়ছিলাম, আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু সেই আনন্দ ম্লান হতে খুব বেশি সময় লাগেনি আর এর পিছনের কারণ হলো আমাদের অভিভাবক হিসাবে পরিচিত যে মাধ্যম অথ্যাৎ মাউশি। মাউশির কিছু কান্ডজ্ঞানহীন কার্যকলাপ সকল শিক্ষক কর্মচারীদের ভোগান্তি মধ্যে ফেলে দেয়।
ডিসেম্বর ২৪ এর হিসাব অনুযায়ী এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৯৮ হাজার মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ মিলে। এই সমস্ত শিক্ষক কর্মচারীর তথ্য প্রদান শুরু হয় মাউশির নির্দেশনা মোতাবেক। কিন্তু সেটার আসলে খুব দরকার ছিল না কারণ মাউশির নিকট প্রত্যেক শিক্ষক কর্মচারীর তথ্য ছিলই। কারণ তারা প্রত্যেক বছর ইএমআইএস ডাটা আপডেটের নমে প্রত্যেক শিক্ষক কর্মচারীর ডাটা সংগ্রহ করে থাকে সেই খান থেকে তারা তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে পারত। তাহলে কিন্তু তথ্য সংগ্রহ করতে আলাদা সময় ব্যয় হতো না বরং সেই সময় মাউশি তথ্য ভেরিফেকিশনের কাজে ব্যয় করতে পারত।
মাউশি কর্তৃপক্ষ ১ম ধাপে ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক কর্মচারীর বেতন ইএফটির মাধ্যমে প্রেরণ করে সকল শিক্ষক কর্মচারীর বেতন তখন তারা ইএফটি মাধ্যমে প্রেরণ করতে পারেনি কারণ হিসাবে তারা দেখায় যে, বাঁকি শিক্ষক কর্মচারীর তথ্যগত সমস্যা রয়েছে সেই কারণে তাদের বেতন ইএফটির মাধ্যমে প্রেরণ করা সম্ভব হয়নি। তথ্যগত সমস্যার বিবরণ হিসেবে জানা গেল যে, নামের বানানের ক্ষেত্রে দাড়ি, কাম,সেমিকোলন ইত্যাদি সমস্যার কারণে প্রায় ১ লক্ষ শিক্ষক কর্মচারীর বেতন ইএফটিতে প্রেরণ সম্ভবপর হয়নি।
এই সমস্যাগুলো ইএমআইএসসেল নিজেকে থেকে সমাধান করে ১ সপ্তাহের মধ্যে এই ১ লক্ষ শিক্ষক কর্মচারীর বেতন ইএফটির মাধ্যমে প্রেরণ করবে। কিন্তু সেই এক সপ্তাহ হতে হতে ১৯ দিন লেগে যায়। ১৯ দিন পর মাউশি ৬৭ হাজার ৪৪০ জন শিক্ষক কর্মচারীর পেমেন্টে তালিকা প্রকাশ করে। কিন্তু এখন অব্দি ২য় ধাপের এই শিক্ষক কর্মচারীগণ আজ ২৯/০১/২৫ পর্যন্ত তাদের বেতন পাননি।
এর পর গত ২৭ তারিখ আরও ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মচারীর ৩য় ধাপের পেমেন্ট তালিকা প্রকাশ করে। তারা যে আসলে কোন দিন বেতন পাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এই তিন ধাপে ৩ লাখ ৪২ হাজার ১২৭ জন শিক্ষক কর্মচারীর তথ্য ভেরিফিকেশন সাপেক্ষে তাদের ইএফটির আওতাভুক্ত করে।তারা আজ না হয় কাল ইএফটির মাধ্যমে তাদের বেতন পাবে।
এখানেও কিন্তু চরম সিদ্ধান্তহীনতা এবং দায়সার মুলক সিদ্ধান্ত বিদ্যমান কেননা একটু তৎপর বা একটু স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিলেই এই ৩ লাখ ৪২ হাজার শিক্ষক কর্মচারীরর বেতন কিন্তু এক সাথে প্রেরণ করা সম্ভব হতো। একটু খেয়াল করেন ১ম ধাপের ইএফটির বেতন প্রদান করা হয় জানুয়ারী মাসের ১ তারিখে এবং ৩য় ধাপের ইএফটির পেমেন্ট তালিকা প্রকাশ করা হয় জানুয়ারীর ২৭ তারিখ।
তাহলে সবগুলো একসাথে পেমেন্ট তালিকা প্রকাশ করতে সময় লাগতো আমনুয়ারি ২৭ তারিখ। সকল শিক্ষক কর্মচারীর একসাথে বেতন প্রদান করা যেত ফেব্রুয়ারী ১ তারিখ। তাহলে কি আজ এই সমস্যার মধ্যে পড়তে হতো। আমরা সারাজীবন এনালগ পদ্ধিতিতে বেতন পেয়ে আসলাম আর না হয় ১ মাস পেলে তো এমন কোন ক্ষতি হতো না। অন্তত ১ মাস বেতন বিহীন থাকতে হতো না। তাহলে এ দায় কার শিক্ষক কর্মচারীর না মাউশির সিদ্ধান্ত হীনতার।
হ্যাঁ তার পরেও কথা থাকে যে, এখন তো বাাঁকি প্রায় ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মচারী যারা কোন পেমেন্ট তালিকায় আসেনি। তারে কি হবে মুল কথা হল তাদের সমস্যা বড় ধরনের। তাদের যে ভাবেই যা করেন না কেন তাদের দেরী হবে। কিন্তু বৃহৎ সংখ্যকের সমস্যা তো এড়ানো যেত একটু স্মার্টলি ভাবলে, একটু ভাল সিদ্ধান্ত নিলে।
আমরা তো মাউশিকে কোনদিন বলিনি যে, আমদের এই মাস থেকেই ইএফটির মাধ্যমে বেতন দিতে হবে। তাহলে ১ মাস পরে যদি এই ৩ লাখ ৪২ হাজার শিক্ষক কর্মচারীর বেতন অথ্যাৎ ফেব্রুয়ারীর ১ তারিখে প্রদান করা হতো তাহলে কি আজকের এই সমস্যার মধ্যে পড়তে হতো।
পরিশেষে এই কথা কিন্তু বলাই যায় যে, দায়িত্ববানদের কাছ থেকে দায়িত্বপূর্ণ কাজ মানুষ আশা করে। যাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে তারা যদি সিদ্ধন্ত নিতে ভুল করে বিবেক বর্জিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে এর ভুক্তভোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণ কারী যদি অনুরাগ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে রাগের বশবতী হয় তাহলে কিন্তু তার উপর যারা নির্ভরশীল তারা তাদের আস্থা ও ভরসার জায়গায় হারিয়ে ফেলে। তারা তাদের বিশ্বাসের জায়গায় অবিশ্বাসের অতল গহ্বরে হারিয়ে যায়।
আমার কি ভুল আমি খুঁজে পাইনা।আমার শিক্ষক স্টাফ ও খুঁজে দেখেছে ওনারাও পায়নাই। এখন আমি কি করতে পারি।