এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতি আপনার অভিব্যক্তি, অর্থাৎ “এমপিও শিক্ষকদের আমলাদের ভাসুর আর সরকারের শ্বশুর”, বাংলাদেশে শিক্ষকদের বর্তমান পরিস্থিতির প্রতি একটি তীব্র এবং গভীর হতাশার প্রতিফলন। এটি শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন, অবিচার এবং শিক্ষকদের প্রতি প্রশাসনিক অবহেলার একটি প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মন্তব্যের মাধ্যমে আপনি যে ব্যক্তিগত ও সামাজিক হতাশা এবং শিক্ষকদের প্রতি সরকারের আচরণ নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছেন, তা অনেক শিক্ষকেরই অনুভূতি।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সম্পর্কে সরকার এবং আমলাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাদের প্রতি অবহেলার বিষয়টি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, এই পরিস্থিতি বুঝতে এবং এর সমাধান খুঁজতে আমাদের কিছু মূল দিক বিবেচনা করা উচিত।
১. এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবস্থা:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যারা সরকারী বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত নন) অনেক সময় অবহেলা এবং অবমূল্যায়ন এর শিকার হন। তাদেরকে প্রায়ই সরকারি শিক্ষকদের তুলনায় কম গুরুত্ব দেয়া হয়, এবং তাদের অধিকার আদায়ের জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করছেন।
কিছু কারণ:
- বেতন বৈষম্য: এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন সরকারি শিক্ষকদের তুলনায় অনেক কম। তারা প্রায়ই সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
- পদোন্নতির অভাব: এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য পর্যাপ্ত পদোন্নতির সুযোগ নেই, ফলে তারা একই পদে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করেন।
শিক্ষকদের মর্যাদা: অনেক সময়, সরকার এবং আমলা শিক্ষকদের মর্যাদা ও সম্মান প্রদান করতে ব্যর্থ হন। তাদেরকে অনেক সময় শুধুমাত্র কর্মচারী হিসেবে দেখানো হয়, তাদের মতামত বা অবদান কোনো গুরুত্ব পায় না।
২. “ভাসুর” ও “শ্বশুর” ইমেজের ব্যাখ্যা:
“ভাসুর” এবং “শ্বশুর” শব্দগুলি এখানে শিক্ষকদের অবস্থা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের (আমলাদের) সঙ্গে সম্পর্ক বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। এই শব্দের মাধ্যমে আপনি যে অবস্থার কথা বলতে চাচ্ছেন, তা হলো:
- “ভাসুর”: একটি শব্দ যা সাধারণত ব্যবহৃত হয় মাঝারি সম্পর্ক বা অবহেলিত অবস্থান বোঝাতে। এখানে এটি বোঝাচ্ছে যে, শিক্ষকরা সরকারের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বা অবমূল্যায়িত অবস্থায় আছেন। বাঙ্গালি সমাজের মেয়েরা ”ভাসুর”কে লোক দেখানো মুখ আড়াল করে রাখে তাকে দেখলে ঘোমটা দিয়ে মুখ আঁড়াল করার চেষ্টা করে। বাঙ্গালি সমাজের মেয়েরা সমাজে বোঝায় ভাসুরের নাম মুখে আনতে নেই। ভাসুরের নাম মুখে আনলে তার প্রতি অশ্রদ্ধা হয়। কিন্তু বাস্তব হল, লোক চক্ষুর আঁড়ালে সবসময় তার ক্ষতি চায়। ভাসুর হলো তার স্বামীর বড় ভাই, অনেক শ্রদ্ধার প্রাত্র তার নাম কোন ভাবেই মুখে নেওয়া যাবে না। সে যতই তার শ্রদ্ধা বোধের নাটক করুক না কেন আসলে সে সবসময় ভাবে কি ভাবে তার স্বামীর ভাগ বড় করা যায় আর ভাসুরকে কিভাবে ঠকানো যায়। যেটা আমাদের দেশের আমলারা মুখে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের যতই শ্রদ্ধা দেখাক না কেন মনে মনে কখনো তাদের ভাল চায় না। তারা সবসময় ভাবে কি করে তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করা যায়। তারা কখনই আমাদের নাম মুখে আনে না সেটা শ্রদ্ধাবোধ থেকে তো অবশ্যই নয় বরং ঘৃণা ও তাচ্ছিল্যের কারণে।
- “শ্বশুর”: এই শব্দটি সাধারণত বয়সী বা শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তবে এখানে এটি সরকারের প্রতি একটি আলগা সম্পর্ক বা অবহেলিত অথচ প্রত্যাশিত সম্পর্ক বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে সরকার তাদের প্রতি সঠিক মনোযোগ বা সম্মান প্রদান করছে না। বাঙ্গালি সমাজে শ্বশুরকে বাবার পর স্থান দেওয়া হয় বা বাবার মত বোঝানো হয়। হতে পারে তা বউয়ের ভয়ে হোক বা লোক দেখানো নাটক হউক। বাস্তবে আমাদের সমাজে আমরা যা দেখি তা হল শ্বশুরের কাছ থেকে আমরা শুধু নেওয়াটাই বুঝি, দিতে গেলে হাত কাঁপে, পকেটে টাকা থাকে না, সংসারে অভাব বেড়ে যায় নানাবিধ সমস্যা। কিন্তু লোক দেখানোা বা বউকে দেখানো সম্মানের ঘাটতি নাই। শ্বশুরকে দেখলে লম্বা সালাম, মিথ্যা বানোয়াট গল্প যেমনঃ আমার ছেলেকে বলেছি তোর নানার মত আদর্শ মানুষ হতে হবে। যাকে সারাজীবন দেখেছি স্বার্থহীন ভাবে মানুষের উপকার করতে। কোন দিন দেখিনি কারও উপকার করে তার বিনিময়ে তার কাছ থেকে দুই টাকা গ্রহণ করেছে। যা দেখা যায় আমাদের দেশের সরকারের ক্ষেত্রে, আমাদের দেশের সরকার মিডিয়াকে দেখানো ও শুনানো অনেক ভাল ভাল কথা বলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে, যেমন আপনারা জাতির বিবেক. আপনাদের কারণে এদেশ অনেক উপকৃত হচ্ছে, আপনারা এত স্বল্প বেতনে যে সেবা এদেশকে দিচ্ছেন তা এ দেশ ও জাতি মনে রাখবে। কিন্তু পরক্ষণেই শিক্ষকরা যখনই তাদের ন্যর্য দাবি সরকারের কাছে উপস্থাপন করে তখনই সরকারের আসল চেহারা অথ্যাৎ জামাই সুলভ চেহারা বের হয়ে আসে।
এটি একটি হতাশা এবং বঞ্চনা এর প্রতীক, যেখানে শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা এবং সমর্থন পাচ্ছেন না, অথচ তারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি।
৩. শিক্ষক আন্দোলন এবং রাষ্ট্রীয় সহায়তা:
বাংলাদেশে শিক্ষকদের অধিকার এবং সম্মান প্রতিষ্ঠা করতে বহু বছর ধরে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলন চলছে। তারা তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবি, পদোন্নতি এবং সরকারি সুবিধা আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেছেন। কিন্তু, অনেক সময় সরকার এবং আমলাদের সাড়া পাওয়া যায় না অথবা আন্দোলনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
কিছু বাস্তবতা:
- সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি: যদিও সরকার শিক্ষা খাতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জামাই সুলভ আচরণ করে। তবুও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতি সরকারী মনোভাব অনেক সময় নেতিবাচক থাকে।
- আমলাদের অবহেলা: অনেক সময় আমলারা শিক্ষকদের সমস্যার দিকে খুব বেশি মনোযোগ দেন না, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাঙ্গালি সমাজের ভাসুরের মত লোক দেখানো সম্মান এবং তাদের দাবি পূরণের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেয় না।
৪. শিক্ষকদের মর্যাদা এবং সমাধান:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মর্যাদা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রয়োজন:
- বেতন সমতা: সরকারি শিক্ষকদের সঙ্গে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন সমতা প্রতিষ্ঠিত হওয়া জরুরি। এটি তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করবে।
- পদোন্নতির সুযোগ: শিক্ষকদের জন্য পদোন্নতির সুযোগ এবং কর্মপরিকল্পনা সৃষ্টি করা প্রয়োজন, যাতে তারা দীর্ঘদিন একই অবস্থানে আটকে না থাকেন।
- আমলাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন: আমলাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। তাদের উচিত শিক্ষকদের মর্যাদা ও অধিকার বুঝে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।
- শিক্ষকদের সংগঠন: শিক্ষকদের মধ্যে একতা ও সংগঠন গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে তারা একযোগে তাদের দাবি বাস্তবায়ন করতে পারে। একতাবদ্ধ আন্দোলন এবং রাজনৈতিক সমর্থন শিক্ষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হতে পারে।
৫. উপসংহার:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতি সরকার এবং আমলাদের অবহেলা সত্যিই একটি গভীর সমস্যা এবং এটি শিক্ষকদের মর্যাদা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি তে বড় বাধা। তবে, যদি শিক্ষকরা একত্রিত হন এবং তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠিত আন্দোলন চালিয়ে যান, তাহলে তাদের মর্যাদা এবং সুযোগ-সুবিধা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হতে পারে। সরকারের উচিত শিক্ষকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা,এবংশিক্ষক সমাজের উন্নতিনিশ্চিত করা, যাতে তারা তাদের কাজের প্রতি আরও বিশ্বাস এবং মনোবলবজায় রাখতে পারেন।
Post Views: 423
Leave a Reply