এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) শিক্ষকদের প্রশাসনিক কাজে আমলাদের হস্তক্ষেপ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও তাদের বেতন-ভাতা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। ফলে এই ব্যবস্থায় আমলাদের কিছু ভূমিকা থাকা স্বাভাবিক, তবে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের কারণে শিক্ষকদের কাজের স্বাধীনতা ও মর্যাদা হ্রাস পাচ্ছে।
আমলাদের হস্তক্ষেপের কারণ
- প্রশাসনিক কাঠামোর ধরন
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা অনুমোদন, পদোন্নতি, বদলি, পেনশন ইত্যাদি সরাসরি সরকারি প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। ফলে আমলাদের অনুমোদন ছাড়া কোনো বিষয় চূড়ান্ত হয় না।
- ব্যুরোক্রেটিক মনোভাব
আমলারা কখনও কখনও শিক্ষকদের কাজকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শনের মনোভাব পোষণ করেন।
- প্রক্রিয়ার জটিলতা
এমপিও শিক্ষকরা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজে জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে যান। এটি অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ তৈরি করে।
- দায়বদ্ধতার অভাব
শিক্ষকদের কাজে আমলাদের ভূমিকা থাকলেও, তাদের প্রতি সরাসরি জবাবদিহিতা না থাকায় সমস্যাগুলি সমাধান হয় না।
এর নেতিবাচক প্রভাব
- শিক্ষকদের মর্যাদাহানি
প্রশাসনিক কাজে অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপের কারণে শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি
আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় শিক্ষকদের মনোযোগ শিক্ষাদানের চেয়ে প্রশাসনিক কাজে বিভ্রান্ত হয়ে যায়, যা শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি
আমলাদের অনুমোদনের জন্য শিক্ষকদের প্রায়ই অপেক্ষা করতে হয়। কখনো কখনো এটি দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করে।
- উৎপাদনশীলতা হ্রাস
শিক্ষকদের প্রশাসনিক জটিলতায় জড়িয়ে রাখলে তাদের মূল কাজ, অর্থাৎ শিক্ষাদানের মান উন্নয়ন, বাধাগ্রস্ত হয়।
সমাধানের পথ
১. শিক্ষকদের জন্য স্বায়ত্তশাসিত কাঠামো
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি স্বতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান তৈরি করা যেতে পারে। এটি তাদের প্রশাসনিক স্বাধীনতা বৃদ্ধি করবে এবং আমলাতন্ত্রের হস্তক্ষেপ কমাবে।
২. ই-গভর্নেন্স ব্যবস্থা
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, অনুমোদন, এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পরিচালনা করা উচিত। এটি দ্রুত এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে।
৩. জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ
আমলাদের হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
- যেসব আমলা শিক্ষকদের কাজ বিলম্ব করেন বা অনৈতিক আচরণ করেন, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. শিক্ষকদের ক্ষমতায়ন
শিক্ষকদের নিজস্ব সমস্যাগুলি সমাধানের ক্ষমতা দিতে হবে। তাদের একটি সমন্বিত কমিটি বা বোর্ড তৈরি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
৫. নীতিমালা সংস্কার
এমপিও শিক্ষকদের কাজের ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে হবে। এতে প্রশাসনিক দায়িত্ব ও সীমারেখা স্পষ্ট হবে।
উপসংহার
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কাজে আমলাদের অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ শিক্ষকদের পেশাগত জীবনে বাধা সৃষ্টি করছে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য নীতিমালা সংস্কার, স্বচ্ছ প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং শিক্ষকদের জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত কাঠামো গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। এতে শিক্ষকরা তাদের মূল কাজ—শিক্ষাদান—এ মনোযোগ দিতে পারবেন এবং শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন সম্ভব হবে।
Post Views: 111
Leave a Reply