ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা অর্থ স্থানান্তর প্রক্রিয়াকে সহজ, দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য করে তুলেছে। এর বিশদ আলোচনা নিচে দেওয়া হলো:

ইএফটি (EFT) কী?

ইএফটি হলো একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য একটি অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে করা হয়। এটি নগদ অর্থ, চেক বা অন্য কোনো শারীরিক নথিপত্র ব্যবহার ছাড়াই সম্পন্ন হয়। ইএফটি ট্রান্সফার সাধারণত ব্যাংক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং এটি ২৪/৭ কার্যকর।

ইএফটি-এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য

1. অটোমেটেড প্রসেসিং:
   অর্থ স্থানান্তর সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় এবং ম্যানুয়াল প্রসেসিংয়ের প্রয়োজন হয় না।
2. রিয়েল-টাইম বা নির্ধারিত সময়:
   কিছু ইএফটি ট্রান্সফার তাৎক্ষণিক হয় (রিয়েল-টাইম), আবার কিছু নির্ধারিত সময়ে প্রক্রিয়া করা হয়।
3. স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার:
   ইএফটি সম্পন্ন করার জন্য কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, বা এটিএম মেশিন ব্যবহার করা যায়।
4. ব্যাপক কভারেজ:
   এটি স্থানীয় ব্যাংক থেকে আন্তর্জাতিক লেনদেন পর্যন্ত কার্যকর।

ইএফটি কীভাবে কাজ করে?

ইএফটি সিস্টেমে অর্থ স্থানান্তরের প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে পরিচালিত হয়:

১. অর্থ স্থানান্তরের নির্দেশনা প্রেরণ:

• প্রেরক তার ব্যাংকে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে (অনলাইন অ্যাপ বা এটিএম) একটি নির্দেশনা প্রদান করে।
• নির্দেশনায় প্রাপকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তথ্য, স্থানান্তরের পরিমাণ এবং প্রেরকের অ্যাকাউন্ট ডিটেলস থাকে।

২. নির্দেশনা যাচাই:

• ব্যাংক প্রেরকের অ্যাকাউন্ট যাচাই করে এবং নিশ্চিত করে যে সেখানে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স আছে।

৩. নেটওয়ার্ক প্রসেসিং:

• প্রেরকের ব্যাংক ইএফটি নেটওয়ার্কে অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধ প্রেরণ করে।
• নেটওয়ার্ক নির্দেশনাটি প্রাপকের ব্যাংকে পাঠায়।

৪. অর্থ জমা:

• প্রাপকের ব্যাংক সেই অর্থ জমা করে এবং অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স আপডেট করে।

৫. নোটিফিকেশন:

• অর্থ স্থানান্তর সফল হলে প্রেরক এবং প্রাপক উভয়কেই একটি নোটিফিকেশন পাঠানো হয়।

ইএফটি-এর ধরনসমূহ

ইএফটি-এর বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। সেগুলো হলো:

1. নেচ (NACH – National Automated Clearing House):
   বড় পরিমাণ অর্থ স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে।
2. আরটিজিএস (RTGS – Real-Time Gross Settlement):
   বড় অঙ্কের অর্থ স্থানান্তর তাৎক্ষণিক এবং নিরাপদে করা হয়।
3. এনইএফটি (NEFT – National Electronic Funds Transfer):
   নির্ধারিত ব্যাচে অর্থ স্থানান্তর সম্পন্ন হয়।
4. আইএমপিএস (IMPS – Immediate Payment Service):
   ২৪/৭ অর্থ স্থানান্তর পরিষেবা যা তাৎক্ষণিক লেনদেন নিশ্চিত করে।
5. মোবাইল ব্যাঙ্কিং:
   মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ইএফটি পরিচালিত হয়।

ইএফটি-এর সুবিধাসমূহ

1. দ্রুত এবং দক্ষ:
   ইএফটি দ্রুত অর্থ স্থানান্তর নিশ্চিত করে, যা প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় অনেক দ্রুত।
2. খরচ সাশ্রয়ী:
   চেক বা অন্যান্য শারীরিক নথিপত্রের খরচ এড়ানো যায়।
3. ২৪/৭ পরিষেবা:
   নির্ধারিত সময়ের কোনো বাধা ছাড়াই যেকোনো সময় ইএফটি পরিচালনা করা যায়।
4. নিরাপদ লেনদেন:
   ইএফটি এনক্রিপশন এবং সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, যা লেনদেনকে সুরক্ষিত রাখে।
5. প্রদানের সহজতা:
   বেতন, বিল, ই-কমার্স কেনাকাটা, এবং অন্যান্য পেমেন্ট সহজে সম্পন্ন করা যায়।

ইএফটি-এর সীমাবদ্ধতা

1. ইন্টারনেট নির্ভরতা:
   ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যা থাকলে ইএফটি ব্যবহার করা সম্ভব হয় না।
2. কারিগরি ত্রুটি:
   ব্যাংকের সার্ভার বা সিস্টেম ত্রুটির কারণে লেনদেনে বিলম্ব হতে পারে।
3. সার্ভিস চার্জ:
   কিছু ক্ষেত্রে ইএফটি লেনদেনে অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য হতে পারে।
4. ব্যাংকিং সময়সীমা:
   নির্দিষ্ট সময়সীমার বাইরে লেনদেন কিছু ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াকরণে বিলম্ব হতে পারে।

ইএফটি-এর ব্যবহারিক ক্ষেত্র

1. ব্যক্তিগত অর্থ স্থানান্তর:
   পরিবার বা বন্ধুদের অর্থ প্রেরণ বা গ্রহণ।
2. বেতন প্রদান:
   বিভিন্ন সংস্থা তাদের কর্মীদের বেতন প্রদান করতে ইএফটি ব্যবহার করে।
3. বিল পরিশোধ:
   বিদ্যুৎ, পানি, মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি বিল অনলাইনে পরিশোধ করা যায়।
4. ব্যবসায়িক লেনদেন:
   ব্যবসায়িক অর্থ স্থানান্তর এবং পেমেন্ট ইএফটি-র মাধ্যমে দ্রুত সম্পন্ন হয়।
5. আন্তর্জাতিক লেনদেন:
   বিদেশি মুদ্রায় অর্থ প্রেরণ বা গ্রহণ সহজ এবং দ্রুত করা যায়।

উপসংহার

ইএফটি আধুনিক আর্থিক লেনদেনের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, যা ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক উভয় স্তরে কার্যকর। এর মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের সময়, খরচ, এবং ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। তবে ইএফটি ব্যবহারের সময় নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং ব্যাঙ্কের নির্ধারিত প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে।