এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) শিক্ষক সমাজের অবহেলা নিয়ে বিশদ আলোচনায় গেলে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে আসে। এই শিক্ষকদের ভূমিকা এবং তাদের প্রতি বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ বিশ্লেষণ করলে বেশ কিছু বিষয় সামনে আসে।
১. এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ভূমিকা
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম ভিত্তি।
- তারা বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষাদান করেন, যা দেশের বৃহৎ একটি শিক্ষার্থী সমাজকে সেবা দেয়।
- শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, দক্ষতা এবং একাডেমিক সাফল্যের পেছনে তাদের অসামান্য ভূমিকা রয়েছে।
- তারা অনেক সময় সীমিত বেতন এবং সুযোগ-সুবিধার মধ্যেও কঠোর পরিশ্রম করেন।
২. অবহেলার কারণসমূহ
(ক) আর্থিক অসমতা:
- এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন সরকারি শিক্ষকদের তুলনায় অনেক কম।
- বেতন নিয়মিত হলেও এর পরিমাণ তাদের প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট নয়।
- বাড়তি সুযোগ-সুবিধা (যেমন চিকিৎসা ভাতা, বাড়ি ভাড়া ইত্যাদি) প্রায় অনুপস্থিত।
(খ) চাকরির মর্যাদা:
- সমাজে সরকারি চাকরিজীবীদের তুলনায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মর্যাদা অনেক কম।
- তারা অনেক সময় পেশাগতভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।
(গ) প্রশিক্ষণ ও পেশাগত উন্নয়ন:
- পেশাগত উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ বা সুযোগ-সুবিধা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে সীমিত।
- আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং সহায়তা তারা পান না।
(ঘ) প্রশাসনিক জটিলতা:
- এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন, বেতন বৃদ্ধি, বা অন্যান্য সুবিধা পেতে শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনকে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
- এই ক্ষেত্রে প্রশাসনিক স্বচ্ছতার অভাব এবং দীর্ঘসূত্রিতা শিক্ষকদের হতাশ করে।
৩. শিক্ষাব্যবস্থায় এর প্রভাব
- শিক্ষকদের আর্থিক ও পেশাগত নিরাপত্তার অভাব তাদের মনোবল নষ্ট করে।
- এর ফলে শিক্ষাদানের মানও প্রভাবিত হয়, যা সরাসরি শিক্ষার্থীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- এই পরিস্থিতি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বড় বাধা।
৪. সমাধান ও করণীয়
(ক) সরকারি পদক্ষেপ:
- এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন কাঠামোতে উন্নতি আনতে হবে।
- চিকিৎসা ভাতা, বাড়ি ভাড়া, পেনশন সুবিধা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
- বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও টেকসই সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
(খ) পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধি:
- শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা বাড়ানোর জন্য সরকার ও মিডিয়ার সচেতন প্রচার প্রয়োজন।
- তাদের কাজের গুরুত্ব বোঝাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
(গ) প্রশাসনিক স্বচ্ছতা:
- এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সবধরনের প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ এবং স্বচ্ছ করতে হবে।
- অভিযোগ সমাধানের জন্য আলাদা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা প্রয়োজন।
(ঘ) শিক্ষক সংগঠনের কার্যকর ভূমিকা:
- শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য শক্তিশালী ও কার্যকর শিক্ষক সংগঠন গড়ে তোলা উচিত।
- এই সংগঠনগুলোর মাধ্যমে তাদের দাবিদাওয়া সরকারের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে।
৫. ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
- এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সমস্যা সমাধান করা মানে পুরো শিক্ষাব্যবস্থার ভিত শক্তিশালী করা।
- এই সমাজের উন্নয়ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করবে, যা জাতীয় উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
- তাদের মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ একটি দক্ষ ও শক্তিশালী মানবসম্পদ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
এই আলোচনা থেকে পরিষ্কার, এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজের অবহেলা দূর করতে হলে সরকার, সমাজ এবং শিক্ষাব্যবস্থার সব অংশীজনের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
Post Views: 98
Leave a Reply