বাংলাদেশে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতি অবহেলার প্রধান কারণগুলোর একটি হলো অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা। এটি কয়েকটি দিক থেকে ব্যাখ্যা করা যায়:
বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দ তুলনামূলকভাবে কম। তার মধ্যে, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজন মেটাতে অধিকাংশ অর্থ ব্যয় হয়। ফলে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ করা সম্ভব হয় না।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত শিক্ষার্থী ভর্তি ও টিউশন ফি থেকে আয়ের ওপর নির্ভরশীল। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই গ্রামীণ এলাকায় অবস্থিত, যেখানে মানুষের আর্থিক সক্ষমতা কম। ফলে শিক্ষকদের বেতন দিতে প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিতভাবে সমস্যায় পড়ে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সরকার থেকে আংশিক বেতন পান। কিন্তু তাদের পূর্ণাঙ্গ বেতন ও ভাতা প্রদান করার মতো পর্যাপ্ত তহবিল সরকার বরাদ্দ করতে পারে না। বেতন কাঠামোও দীর্ঘদিন ধরে সঠিকভাবে সমন্বয় করা হয়নি।
দেশের অন্যান্য খাতে যেমন স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, এবং সামাজিক সুরক্ষায় বড় অংকের বাজেট প্রয়োজন হয়। ফলে শিক্ষাখাতে, বিশেষত বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য অর্থ বরাদ্দে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না।
কিছু ক্ষেত্রে, বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় না হওয়ার কারণেও বেসরকারি শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হন।
অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার সমাধান কেবল বাজেট বৃদ্ধির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি সঠিক নীতিমালা ও কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমেও সমাধান করা সম্ভব।
নীতিগত অসংগতি মানে হলো শিক্ষাখাত, বিশেষত বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য প্রণীত নীতিমালায় অস্পষ্টতা, বৈষম্য এবং সমন্বয়ের অভাব। বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষকদের অবহেলিত হওয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন, ভাতা, এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণে কোনো সুনির্দিষ্ট কাঠামো নেই। ফলে বিভিন্ন সময়ে তারা বৈষম্যের শিকার হন। উদাহরণস্বরূপ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে সরকারি শিক্ষকদের মতো একই ধরনের কাজ করলেও তারা অনেক কম বেতন ও সুযোগ-সুবিধা পান।
সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বেতন ও সুবিধার পার্থক্য খুব বেশি। সরকারি শিক্ষকরা যেখানে নির্ধারিত বেতন কাঠামো এবং অন্যান্য ভাতা পেয়ে থাকেন, বেসরকারি শিক্ষকদের ক্ষেত্রে সেটি সীমিত এবং নির্দিষ্ট নিয়মে সংশোধিত হয় না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হতে গেলে অনেক সময় লাগে এবং এটি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বছরের পর বছর এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় থাকেন।
বেসরকারি শিক্ষকরা সরকারি শিক্ষকদের মতো পেনশন, চিকিৎসা ভাতা বা উৎসব ভাতার সুবিধা পান না। এমনকি অবসরের পর তাদের আর্থিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত নয়।
নীতিগতভাবে শিক্ষকদের কাজের মূল্যায়ন এবং উৎসাহিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। ফলে তারা চাকরি করেও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন এবং কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ হন না।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো কার্যকর নীতিমালা নেই। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের নিয়মিত বেতন দিতে ব্যর্থ হয়।
নীতিগত অসংগতি দূর করার জন্য কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
নীতিগত অসংগতি দূর করতে সরকার, শিক্ষা বোর্ড, এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এই সমস্যা সমাধান করা গেলে বেসরকারি শিক্ষকদের আর্থিক ও পেশাগত অবস্থার উন্নতি হবে, যা দেশের সামগ্রিক শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
Leave a Reply