বাংলাদেশে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবহেলিত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুর্বল পরিচালনা। দুর্বল পরিচালনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা, শিক্ষকদের কাজের মান এবং সামগ্রিক শিক্ষার গুণগত মানকে প্রভাবিত করে। নিচে এই সমস্যার কারণসমূহ, প্রভাব এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক ক্ষেত্রে পরিচালনাকারীরা পর্যাপ্ত প্রশাসনিক বা ব্যবস্থাপনা দক্ষতা রাখেন না। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক, মানবসম্পদ এবং শিক্ষাগত দিকগুলি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে অক্ষম হন।
অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত তহবিল বা সম্পদের অভাবে পরিচালনা পরিচালনায় সমস্যা ভুগে। পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষকদের সঠিক বেতন প্রদান, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রমে ব্যর্থ হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় স্বচ্ছতার অভাব থাকলে দুর্নীতি এবং পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এতে শিক্ষকদের বেতন ও সুবিধা সময়মত প্রদান করা কঠিন হয়ে পড়ে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করার জন্য কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না থাকলে পরিচালনায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিক্ষকদের কাজের মান এবং প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দক্ষতা নিরীক্ষণ না করলে অসঙ্গতি বেড়ে যায়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ এবং ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্য থাকলে কর্মক্ষেত্রে বিভাজন এবং অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এতে শিক্ষকদের মনোবল কমে এবং তারা তাদের কাজের প্রতি উৎসাহী থাকেন না।
আধুনিক প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার অভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ম্যানুয়ালি পরিচালনা করতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ এবং ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে। এটি শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদান এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজকে জটিল করে তোলে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনাকারীদের জন্য প্রশাসনিক এবং ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। দক্ষ পরিচালনাকারীরা প্রতিষ্ঠানকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পর্যাপ্ত তহবিল এবং সম্পদ নিশ্চিত করা। সরকার এবং বেসরকারি খাতের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে।
পরিচালনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা এবং নিয়মাবলী প্রণয়ন করা। অর্থনৈতিক লেনদেন এবং বেতন প্রদান প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং তদারকির জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা স্থাপন করা। নিয়মিত নিরীক্ষা এবং মূল্যায়নের মাধ্যমে পরিচালনার মান উন্নয়ন করা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ এবং ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্পষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ন্যায্যতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজ করা। বেতন-ভাতা প্রদান, ছাত্র-শিক্ষক তথ্য সংরক্ষণ এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা।
শিক্ষকদের মতামত ও অংশগ্রহণ প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারণ এবং পরিচালনায় অন্তর্ভুক্ত করা। এটি তাদের মনোবল বাড়াতে এবং প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুর্বল পরিচালনা বাংলাদেশের বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবহেলা এবং সমস্যাগুলির এক প্রধান কারণ। এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর প্রশাসনিক সংস্কার, পর্যাপ্ত অর্থায়ন, স্বচ্ছতা এবং শিক্ষকদের সঠিক মূল্যায়ন অত্যন্ত জরুরি। যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে, তখন বেসরকারি শিক্ষকদের আর্থিক ও পেশাগত অবস্থার উন্নতি হবে এবং দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়ন সম্ভব হবে।
Leave a Reply