বাংলাদেশে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সমস্যাগুলোর একটি প্রধান কারণ হলো শিক্ষকদের সংগঠনের শক্তি কম। সংগঠনের দুর্বলতা শিক্ষকদের স্বার্থ সুরক্ষা, দাবি আদায়, এবং সমস্যা সমাধানে বাধা সৃষ্টি করে। এটির পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এবং এর সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো:
বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে অনেক সংগঠন থাকলেও তারা প্রায়ই একে অপরের সঙ্গে বিভক্ত। অভিন্ন স্বার্থ থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন দলাদলি এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তারা একসঙ্গে কাজ করতে পারে না।
অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সংগঠনের নেতৃত্ব দক্ষ এবং দূরদর্শী নয়। অদক্ষ নেতৃত্বের ফলে সংগঠন কার্যকর পরিকল্পনা বা আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়।
শিক্ষকদের সংগঠনের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের অভাব রয়েছে। সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সংস্থান না থাকলে আন্দোলন বা সমাধানের প্রচেষ্টাগুলো টেকসই হয় না।
বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে একক চেতনার অভাব রয়েছে। তারা প্রায়ই স্থানীয় সমস্যাগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, যা বৃহত্তর আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি করে।
অনেক সময় শিক্ষকদের সংগঠনগুলো প্রশাসনিক চাপের মুখে পড়ে এবং তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সাহসী ভূমিকা পালন করতে পারে না।
শিক্ষকদের সংগঠনের উপর রাজনৈতিক প্রভাব থাকার কারণে তারা শিক্ষকদের প্রকৃত স্বার্থের পরিবর্তে রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়।
সব বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে ঐক্য তৈরি করে একক নেতৃত্ব গঠন করতে হবে, যা শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষায় অভিন্ন নীতি নির্ধারণ করবে।
শিক্ষকদের মধ্যে দক্ষ, সৎ এবং দূরদর্শী নেতাদের নির্বাচিত করতে হবে, যারা শিক্ষকদের দাবিগুলো সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন।
শিক্ষকদের সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি সুসংগঠিত কাঠামো তৈরি করতে হবে, যেখানে সদস্যরা নিয়মিত মতামত ও সহযোগিতা দিতে পারবেন।
সংগঠনের জন্য একটি স্বচ্ছ আর্থিক কাঠামো তৈরি করতে হবে। শিক্ষকদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ বা তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
শিক্ষকদের সংগঠনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। সংগঠনের মূল লক্ষ্য শিক্ষকদের পেশাগত স্বার্থ রক্ষা করা, যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে জড়িত থাকা উচিত নয়।
শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এর জন্য গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা যেতে পারে।
শিক্ষকদের সংগঠনকে সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে এবং যৌক্তিক উপায়ে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে হবে।
শিক্ষকদের সংগঠন শক্তিশালী হলে তা তাদের পেশাগত স্বার্থ রক্ষায় এবং দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য প্রয়োজন দক্ষ নেতৃত্ব, আর্থিক স্বচ্ছতা, এবং শিক্ষকদের মধ্যে ঐক্য। সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষকেরা যদি তাদের দাবি যৌথভাবে উপস্থাপন করতে পারেন, তবে প্রশাসন এবং সরকারকে তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে বাধ্য করা সম্ভব হবে।
Leave a Reply