বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনার হওয়ার যোগ্যতাঃ
বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনার হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতাগুলি সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত। বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার বিধান রয়েছে। নির্বাচন কমিশনার বা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হতে হলে সাধারণত নিম্নোক্ত যোগ্যতাগুলি প্রাসঙ্গিক হয়:
১. বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে
নির্বাচন কমিশনার পদে থাকার জন্য ব্যক্তিকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
২. প্রশাসনিক বা বিচারিক অভিজ্ঞতা থাকা
সাধারণত, নির্বাচন কমিশনার বা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগের জন্য ব্যক্তির প্রশাসনিক, বিচার বিভাগীয় বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতা থাকা উচিত।
৩. অরাজনৈতিক ও নিরপেক্ষ হওয়া
নির্বাচন কমিশনার বা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এমন ব্যক্তি নির্বাচিত হওয়া উচিত যিনি রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার জন্য সুনাম অর্জন করেছেন।
৪. সংবিধান অনুসারে অযোগ্য না হওয়া
কোনো ব্যক্তি যদি সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য অযোগ্য হন, তবে তিনি নির্বাচন কমিশনার হওয়ার যোগ্য হবেন না। যেমন:
- তিনি যদি দেউলিয়া ঘোষিত হন।ি
- মানসিক ভারসাম্যহীন বা শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন।
- তিনি যদি কোনো গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন।
৫. বয়স ও শারীরিক সক্ষমতা
কোনো নির্দিষ্ট বয়সের সীমা নেই, তবে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা আবশ্যক।
নিয়োগ প্রক্রিয়া:
নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়, যা যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করে। রাষ্ট্রপতি এই সুপারিশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
সংশোধিত আইন:
২০২২ সালে “প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২“ পাস করা হয়েছে, যা আরও সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলী প্রদান করেছে। এই আইনে সার্চ কমিটির গঠনের নিয়ম এবং প্রক্রিয়াগুলি আরও সুস্পষ্টভাবে নির্ধারিত হয়েছে।
এগুলো ছাড়াও নির্বাচিত ব্যক্তি হতে হবে সৎ, নিরপেক্ষ, এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী।বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনার হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতাগুলি সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত।
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনারদের দ্বায়িত্ব ও কাজঃ
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন (ইসি) একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান যা দেশের নির্বাচন পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। এটি স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং এর প্রধান দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ও কাজগুলো নিম্নরূপ:
দায়িত্বসমূহ
- নির্বাচনের আয়োজন ও পরিচালনা: জাতীয় সংসদ, স্থানীয় সরকার (যেমন সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ), এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন।
- ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও হালনাগাদ: ভোটার তালিকা তৈরি করা এবং প্রতি বছর তা হালনাগাদ করা।
- প্রার্থী মনোনয়ন যাচাই: প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই এবং বৈধ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা।
- নির্বাচনী আচরণবিধি বাস্তবায়ন: নির্বাচনী আচরণবিধি নির্ধারণ ও এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
- প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা: নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং জনগণের মধ্যে ভোটদানের সচেতনতা তৈরি করা।
কাজগুলো
- নির্বাচনী এলাকাগুলোর সীমানা নির্ধারণ: নির্বাচন কমিশন সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ করে যাতে সুষ্ঠু প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।
- নির্বাচন–পরবর্তী প্রতিবেদন প্রস্তুত: নির্বাচন শেষে প্রতিবেদন তৈরি এবং তা সরকারের কাছে পেশ করা।
- অভিযোগ নিষ্পত্তি: নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন বা কোনো অনিয়ম হলে তা তদন্ত ও সমাধান করা।
- স্বতন্ত্রতা বজায় রাখা: রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা।
আইনগত ক্ষমতা
বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ থেকে ১২৬ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনের কাঠামো ও দায়িত্ব নির্ধারিত রয়েছে। এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন আইন, ২০০৯ সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইনের অধীনে কাজ করে।
নির্বাচন কমিশনের কাজের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন জনগণের আস্থা অর্জনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের আইন:
বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য দুটি প্রধান আইন রয়েছে:
- বাংলাদেশ সংবিধান (Constitution of Bangladesh):
- বাংলাদেশের সংবিধান নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে।
- ধারা ১১৮ (Article 118) অনুসারে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনের প্রধান এবং অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রস্তাব করতে পারেন। তবে, রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে কাজ করেন।
- নির্বাচন কমিশন আইন, ২০০০ (The Election Commission Act, 2000):
- ২০০০ সালে প্রণীত নির্বাচন কমিশন আইন নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের প্রক্রিয়া ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণ করেছে।
- এই আইনে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত এবং পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রক্রিয়া, তাদের যোগ্যতা, দায়িত্ব এবং ক্ষমতা বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে।
অন্যান্য কমিশনার নির্বাচন করতে একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। সার্চ কমিটি উপযুক্ত প্রার্থীদের নির্বাচন করে তাদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করে, এবং রাষ্ট্রপতি সেই প্রস্তাবনার ভিত্তিতে নিয়োগ দেন।
উপরের আলোচনার আলোকে আমার চাওয়ার মধ্যে দোষ কোথায় কেউ কি বলবেন? আমার যোগ্যতার বিবরণ যদি এমন হয় তাহলে তো আমার চাওয়াতে দোষ নাই।
- আমি বাংলাদেশি নাগরিক।
- আমি অবশ্যই নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে সক্ষম কমপক্ষে আগের তিন মেয়াদে যারা ছিল তাদের চেয়ে।
- আমার মধ্যে অবশ্যই সতত বিদ্যমান।
- আমি নির্বাচন বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞ এবং কোন রাজনৈতিক দলের লেজুর বৃত্তি করিনা।
- আমার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পেশায় ২০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
- আমি আদালত কতৃক দদ্ডিত বা ঘোষিত কোন প্রকার ব্যাক্তি নই।
আমার বা আমাদের কিছু অযোগ্যতা রয়েছে যেমন আমি বা আমাদের প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতা নাই। আমি বিচারক নই, আমি সিনিয়র আইনজীবি বা রাষ্ট্রের প্রশসনিক কর্মকর্তা নই।
এখানে আমার কিছু প্রশ্ন আছে, রাষ্ট্রের যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত আছেন, এবং বিবেকবান নাগরিকদের কাছে-
- ক) নির্বাচন কমিশনারগণদের বয়সের বাধ্যবাধকতা নেই আর সেটা থাকা উচিত ও নয়।
- তদের কেন অবসর প্রাপ্ত হতে হবে। অবসর প্রাপ্তরা কি কাজ বেশি করতে পারেন? তারা কি বেশি যোগ্য যারা অবসর নেয়নি তাদের চেয়ে, তারা যদি বেশি যোগ্য হয় তাহলে তাদের কেন অবসরে পাঠনো হল। অবসরে মানুষ কখন যায় যখন তার কাজের যোগ্যতা কমে যায় বা হারিয়ে যায়। তাদের যোগ্যতা কমে গেছে বলে আপনি একবার তাদের অবসরে পাঠাচ্ছেন আবার পরক্ষনেই অধিকতর যোগ্য বলে আবার তাদের ডেকে নিচ্ছেন। সে যদি কাজ করার মত যোগ্য হয় তাহলে তাকে অবসরে পাঠানোর দরকার কি ছিল? সবচেয়ে বড় কথা আপনি তো তাকে অযোগ্য বলে অবসরে পাঠালেন তাহলে কেন তাকে আবার যোগ্য বলে ডেকে আনছেন এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজে। তাহলে কি ভেবে নেওয়া যাবে যে যাকে আপনি অযোগ্য বলে ছুড়ে ফেলেছিলেন সে আপনার প্রতি অতিশয় আনুগত্য দেখাবে বলে আপনি তাকে আপনার প্রয়োজনে আবার ব্যবহার করতে চাচ্ছেন। তাহলে সমস্যা কোথায় একটু ভেবে দেখেন।
- বিচারক, আইনজীবি ও সরকারী আমলা হতে হবে কেন, তারা কি রাষ্ট্রের একমাত্র সৎ নির্ভিক মানুষ অন্য নাগরিকগণ কি তাদের মত বা তাদের চেয়ে ভাল হতে পারে না। অতীত অভিজ্ঞতা কিন্তু তা বলে না।
- অতীতের নির্বাচক কমিশনারদের দিকে যদি দৃষ্টি দেওয়া যায় তাহলে কি এর ভয়বহতা লক্ষ্য করা যায় না।
সবচেয়ে বড় কথা হল একজন দেশপ্রেমিক, সৎ, নির্ভিক নিবেদিত প্রাণ মানুষ দরকার। সে কি করে, সে কোন ধর্মের, কোন গোষ্ঠির, কোন জাতির ত বিবেচনার বিষয় থাকা উচিত নয়। তার কর্মক্ষেত্রের বিষয়টি দেখার চেয়ে তার অতীত কর্মকান্ড যাচাই করা উচিত। তার অতীত বলে দিবে যে সে ভবিষ্যতে কেমন করবে। আমাদের আগের ফ্যাসিবাদি ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শুধু মুখে গণতন্ত্রের কথা বললে হবে না। মুখে আধুনিকতার গান গাইলে মানুষ আধুনিক হয়ে যায় না সে মনে প্রাণে যদি আধুনিক না হয়। আমাদের আবার নতুন করে সবকিছু ভাবতে হবে পুরাতন নিয়ে নাড়াচাড়া করে তো আমরা দেখলাম কি অবস্থা। এখনই সময় নতুন কিছু ভাবার, নতুন কিছু করার। এখন যদি না করি, এবার যদি আমরা ব্যর্থ হই তাহলে সফল আমরা হব কোনদিন।
Post Views: 44
Leave a Reply