1. admin@kp-nat.com : admin : Ayub Ali
  2. ayub.bhs@gmail.com : Ayub ali : Ayub ali
বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০৭ অপরাহ্ন

আমেরিকার নির্বাচন ব্যবস্থার সাথে বাংলাদেশের নির্বাচনের পার্থক্য কোথায়?

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৩২ Time View

আমেরিকার নির্বাচন ব্যবস্থা ও বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার মধ্যে বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এসব পার্থক্য মূলত নির্বাচন কাঠামো, ভোট পদ্ধতি, রাজনৈতিক দলগুলো, এবং নির্বাচন পরিচালনার পদ্ধতির মধ্যে অবস্থিত। এখানে সেগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল:

১. নির্বাচন কাঠামো

বাংলাদেশের নির্বাচন কাঠামো:

বাংলাদেশের নির্বাচন কাঠামো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবং মূলত পার্লামেন্টারি সিস্টেম ভিত্তিক। এই কাঠামোর মধ্যে একাধিক নির্বাচন থাকে, যার মধ্যে প্রধান নির্বাচন হলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় নির্বাচন। নিচে বিস্তারিতভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন কাঠামো আলোচনা করা হলো:

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান। এখানে মোট ৩০০টি আসন রয়েছে, যার মধ্যে ৫০টি আসন নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত

  • নির্বাচন পদ্ধতি:
  • ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট (First-past-the-post) সিস্টেমে ভোট দেওয়া হয়। এতে প্রতিটি নির্বাচনী আসনে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনিই নির্বাচিত হন।
  • প্রতিটি আসন সাধারণত একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়।
  • প্রার্থী নির্বাচন:
  • নির্বাচিত সদস্যদের (এমপিরা) নির্বাচন হওয়ার মাধ্যমে জাতীয় সংসদ গঠন করা হয়।
  • বাংলাদেশে নির্বাচন আইন অনুযায়ী, প্রার্থীকে সংসদীয় আসনের জন্য দলীয় প্রতীকসহ নির্বাচনে অংশ নিতে হয়, তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচন করা সম্ভব।
  • মেয়াদ:
  • জাতীয় সংসদের সদস্যদের মেয়াদ ৫ বছর। পরবর্তী নির্বাচন ওই মেয়াদের শেষে অনুষ্ঠিত হয়।
  • যদি সংসদ শূন্য হয়ে যায় বা অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তবে দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন এবং নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
  • নারী সদস্য নির্বাচন:
  • ৫০টি আসন নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত, যারা পার্লামেন্টে সরাসরি নির্বাচিত না হয়ে পার্টি মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। এই আসনগুলো নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে প্রতি দল নির্বাচিত করে

পদাধিকারী নির্বাচন

বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, এবং নগরপাল ইত্যাদি বিভিন্ন পদাধিকারী নির্বাচিত হয়:

  • প্রধানমন্ত্রী:
  • প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন হয় জাতীয় সংসদ এর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা হিসেবে। প্রধানমন্ত্রীর পদ সরকারের কার্যক্রম পরিচালনায় প্রধান ভূমিকা পালন করে।
  • রাষ্ট্রপতি:
  • রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন না, বরং জাতীয় সংসদ সদস্যরা ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেন।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন

বাংলাদেশে স্থানীয় নির্বাচনে শহর, উপজেলা, ইউনিয়ন ইত্যাদি পর্যায়ে নির্বাচন হয়। এর মধ্যে উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, এবং সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অন্যতম।

  • উপজেলা পরিষদ নির্বাচন:
  • উপজেলা পরিষদ নির্বাচন গঠন করে প্রতিটি উপজেলা এলাকার জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচন। এটি পৌরসভা বা ইউনিয়নের নির্বাচনের সাথে সমন্বিত।
  • ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন:
  • ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় প্রশাসনিক স্তরের প্রথম নির্বাচন যা সবচেয়ে ছোট জনগণভিত্তিক নির্বাচনী স্তর হিসেবে গণ্য হয়।
  • সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন:
  • সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয় বড় শহরগুলোর জন্য, যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ইত্যাদি। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র এবং কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

নির্বাচন কমিশন

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন একটি স্বতন্ত্র সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, যা জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচন পরিচালনা করে। কমিশন এর কাজ হল:

  • নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করা,
  • ভোটার তালিকা তৈরি করা,
  • নির্বাচন প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করা,
  • ভোটগ্রহণের পর ফলাফল ঘোষণা করা।

ভোটার তালিকা এবং ভোটার নিবন্ধন

বাংলাদেশে ভোটার তালিকা প্রতি বছর নির্বাচন কমিশন দ্বারা আপডেট করা হয়। যে কোনো নাগরিক ১৮ বছর বয়স হলে ভোট দেওয়ার অধিকার পান, তবে তাকে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

  • ভোটার নিবন্ধন:
  • ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে নিবন্ধন করা হয়। নির্বাচন কমিশন এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া তদারকি করে এবং ভোটের ক্ষেত্রে সঠিক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

কার্যক্রম এবং বাধ্যবাধকতা

  • নির্বাচনী প্রচারণা:
  • নির্বাচনকালে, প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর জন্য প্রচুর সুযোগ থাকে, তবে প্রচারণার মধ্যে কোনো ধরনের সহিংসতা বা অসৎ উপায়ে ভোট জালিয়াতি রোধ করার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে।
  • ভোটাধিকার:
  • বাংলাদেশে যারা নাগরিক, তাদের সকলেরই ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে, শুধুমাত্র ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত যুবক-যুবতীরা ভোট দিতে পারেন।

বাংলাদেশের নির্বাচনী কাঠামো অনেকটা পার্লামেন্টারি সিস্টেম অনুযায়ী সাজানো, যেখানে জাতীয় সংসদের নির্বাচন, রাষ্ট্রপতির নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ বিভিন্ন স্তরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন অনেক নিয়ম ও তদারকি ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যদিও সময় সময়ে এই প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু বিতর্ক থাকে।

আমেরিকার নির্বাচন কাঠামো:

আমেরিকার নির্বাচন কাঠামো একটি ফেডারেল প্রেসিডেন্টিয়াল সিস্টেম ভিত্তিক, যেখানে রাষ্ট্রপতি, কংগ্রেসের সদস্য, এবং বিভিন্ন স্থানীয় সরকারের পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই কাঠামোটি আমেরিকার রাজ্যভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, এবং কংগ্রেস সদস্য নির্বাচন সহ একাধিক স্তরের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত। নিচে বিস্তারিতভাবে আমেরিকার নির্বাচন কাঠামো আলোচনা করা হল:

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

আমেরিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, যা প্রতি ৪ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসিডেন্টের নির্বাচনে ফেডারেল নির্বাচন ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয়, যেখানে জনগণ সরাসরি ভোট দেয় না। এর পরিবর্তে, তারা ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন।

  • ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি:
  • প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনগণ প্রথমে তাদের ইলেকটোরাল ভোটারদের নির্বাচন করেন। প্রতিটি রাজ্যের কিছু নির্দিষ্ট ইলেকটোরাল ভোট থাকে (যেমন, বড় রাজ্য যেমন ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা ইত্যাদির বেশি ইলেকটোরাল ভোট থাকে)।
  • রাজ্যভিত্তিক নির্বাচন হয়ে, যেই প্রার্থী একটি রাজ্যে বেশি ভোট পায়, সেই প্রার্থী ওই রাজ্যের সমস্ত ইলেকটোরাল ভোট জিতে নেন। অর্থাৎ, এক রাজ্যের একপ্রার্থী ১টি ভোটও পেয়ে জয়ী হলে পুরো রাজ্যটির ইলেকটোরাল ভোট তার হয়ে যায় (এটি ওয়ার্ম-টেক-অল পদ্ধতি)।
  • প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৩৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ২৭০টি ভোট অর্জন করা হলে সেই প্রার্থী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন।
  • মধ্যবর্তী নির্বাচন (Midterm Election):
  • প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাঝে, মধ্যবর্তী নির্বাচনে (Midterm elections) কংগ্রেসের সদস্য এবং অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়। এই নির্বাচনের মধ্যে শুধুমাত্র হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং সেনেট সদস্যরা নির্বাচিত হন।

কংগ্রেস নির্বাচন

আমেরিকার কংগ্রেসে দুটি অংশ রয়েছে: হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস (House of Representatives) এবং সেনেট (Senate)। কংগ্রেসের সদস্যরা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন।

(i) হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস:

  • মেয়াদ: হাউস সদস্যদের মেয়াদ ২ বছর
  • সংখ্যা: মোট ৪৩৫টি আসন।
  • নির্বাচন পদ্ধতি: প্রতিটি সদস্য নির্বাচিত হয় নির্দিষ্ট একটি কংগ্রেসনাল জেলা থেকে, যেখানে জনগণ সরাসরি ভোট দেয়।

(ii) সেনেট:

  • মেয়াদ: সেনেট সদস্যদের মেয়াদ ৬ বছর, তবে প্রতি ২ বছর পর ১/৩ অংশের সদস্য নির্বাচিত হয়।
  • সংখ্যা: মোট ১০০টি আসন (প্রতি রাজ্য থেকে ২ জন সদস্য নির্বাচিত হন)।
  • নির্বাচন পদ্ধতি: সেনেটের নির্বাচনও সরাসরি জনগণের ভোটের মাধ্যমে হয়, তবে সেনেটের সদস্যরা তাদের রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করে।

স্থানীয় নির্বাচন

আমেরিকার নির্বাচনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন (Local elections)ও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • গভর্নর নির্বাচন: প্রতিটি রাজ্যের গভর্নর নির্বাচিত হয়, যিনি রাজ্য সরকার পরিচালনা করেন। এটি সাধারণত চার বছর মেয়াদী হয়।
  • মেয়র নির্বাচন: বড় শহরগুলোতে, যেমন নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো ইত্যাদির মেয়র নির্বাচিত হয়। মেয়র নির্বাচনের মাধ্যমে শহরের প্রশাসনিক নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়।
  • শহর ও কাউন্টি নির্বাচন: শহরের কাউন্সিল সদস্য, শেরিফ, জেলা এটর্নি, স্কুল বোর্ড সদস্য ইত্যাদি নির্বাচন হয়।

ভোট পদ্ধতি

আমেরিকার নির্বাচনে সাধারণত প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র (Representative Democracy) পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যেখানে নাগরিকরা সরাসরি ভোট না দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাদের মতামত প্রকাশ করে। তবে, ভোটের পদ্ধতি রাজ্যভিত্তিক ভিন্ন হতে পারে:

  • অনেক রাজ্যেই আঞ্জোল ভোটিং (absentee voting), ভোটার আইডেন্টিফিকেশন চেকিং, এবং অনলাইন ভোটিং ব্যবস্থা রয়েছে।
  • ভোটার নিবন্ধন: ভোটারদের জাতীয় বা রাজ্য ভিত্তিক আইডি পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হতে হয়। ভোটারের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।

নির্বাচন কমিশন

আমেরিকায় ফেডারেল ইলেকশন কমিশন (FEC) নির্বাচন প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান করে। তবে, এখানে রাজ্য ভিত্তিক নির্বাচন কমিশনও থাকে, যেগুলি রাজ্যের আইন অনুযায়ী ভোটগ্রহণ এবং নির্বাচনী ফলাফল পরিচালনা করে। FEC এর কাজ হলো:

  • নির্বাচনী খরচের নিয়ন্ত্রণ,
  • ভোটার নিবন্ধন নিয়ম পরিচালনা,
  • এবং নির্বাচন পদ্ধতির সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করা।

নির্বাচনী প্রচারণা

  • নির্বাচনী প্রচারণা আমেরিকায় বড় ধরনের একটি ব্যাপার। এখানে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী এবং সুপার প্যাকস (Super PACs) প্রচুর পরিমাণে অর্থ খরচ করে নির্বাচনী প্রচারণা চালায়। টিভি বিজ্ঞাপন, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন, জনসভা ইত্যাদির মাধ্যমে ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়।

কার্যক্রমের সুষ্ঠুতা ও নিরাপত্তা

  • আমেরিকার নির্বাচনে প্রতিটি ভোটের গোপনীয়তা এবং ভোটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
  • নির্বাচনী বিতর্ক: কখনও কখনও নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আইনি চ্যালেঞ্জ বা বিতর্ক ওঠে, যেমন ২০০০ সালের গোর-বুশ নির্বাচন বিতর্ক

আমেরিকার নির্বাচন কাঠামো একটি জটিল ও বহুস্তরের সিস্টেম যেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, কংগ্রেস নির্বাচন (হাউস ও সেনেট), রাজ্য ও স্থানীয় নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশন রয়েছে। এখানে ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি, রাজ্য ভিত্তিক নির্বাচন বিধি, এবং নির্বাচন পদ্ধতির বৈচিত্র্য রয়েছে। নির্বাচনে ভোটের ফলাফল নিশ্চিত করতে অত্যন্ত উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আইনি কাঠামো এবং প্রচারণার ব্যাপকতা ব্যবহৃত হয়।

২. ভোট পদ্ধতি

  • বাংলাদেশ:
  • বাংলাদেশে ভোট পদ্ধতি সাধারণত ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট (First-past-the-post) সিস্টেম অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ, প্রতিটি নির্বাচনী আসনে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনি নির্বাচিত হন।
  • উদাহরণস্বরূপ, জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই যে প্রার্থী বেশি ভোট পায়, তাকে জয়ী ঘোষণা করা হয়।
  • আমেরিকা:
  • আমেরিকায় ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনগণ সরাসরি ভোট দেয় না। বরং, তারা নির্বাচিত ইলেকটোরাল ভোটারদের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন। প্রতিটি রাজ্য অনুযায়ী ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা নির্ধারিত হয়, এবং যেই প্রার্থী রাজ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পায়, সেই রাজ্যের সমস্ত ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে যায়।
  • প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একজন প্রার্থীকে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট সংগ্রহ করতে হয় জয়ী হতে।

৩. নির্বাচনকালীন সহিংসতা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি

  • বাংলাদেশ:
  • বাংলাদেশে নির্বাচনের সময় কিছুটা সহিংসতা ও ভোটে কারচুপির অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনগুলোর ক্ষেত্রে ভোট ডাকাতি, ভোটার সন্ত্রাস, সহিংসতা, এবং ভোটের ফলাফল নিয়ে বিতর্ক দেখা যায়।
  • নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব এবং সরকারি দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনী প্রভাব পড়ার অভিযোগও উঠে থাকে।
  • আমেরিকা:
  • আমেরিকায় নির্বাচনকালীন সহিংসতা তুলনামূলক কম হলেও, রাজনৈতিক বিভাজন এবং পলিটিক্যাল পোলারাইজেশন খুব বেশি। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর, নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্কের ফলে কিছু সহিংসতাও ঘটেছিল (যেমন, ক্যাপিটাল হিল আক্রমণ), তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তেমন নেই।
  • আমেরিকায় নির্বাচনী ব্যবস্থার মধ্যে আইনগত সুরক্ষা এবং শৃঙ্খলা বেশ উচ্চমানের।

৪. নির্বাচন কমিশন এবং স্বাধীনতা

  • বাংলাদেশ:
  • বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা, তবে কমিশনের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে, নির্বাচনের ফলাফল সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে আসছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
  • নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল, সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনা এবং ভোট গ্রহণের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে চেষ্টা করে, তবে মাঝে মাঝে বিরোধী দলগুলো অভিযোগ তুলতে থাকে।
  • আমেরিকা:
  • আমেরিকায় ফেডারেল ইলেকশন কমিশন (FEC) এবং প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব নির্বাচন কমিশন রয়েছে। এখানে বহু রাজ্য এবং স্থানীয় স্তরের কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করে।
  • আমেরিকার নির্বাচন কমিশন সাধারণত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হিসেবে কাজ করে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে রাজনৈতিক প্রভাব কমিয়ে আনার চেষ্টা করে। তবে নির্বাচনী পদ্ধতি কিছু ক্ষেত্রে রাজ্যভিত্তিক অমিল সৃষ্টি করতে পারে, যেমন ভোটার নিবন্ধন এবং আইডি যাচাই নিয়ে নানা বিধি-নিষেধ।

৫. প্রধান রাজনৈতিক দল

  • বাংলাদেশ:
  • প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (AL), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (BNP) এবং জাতীয় পাটি। এছাড়া ছোট ছোট দলও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
  • দলের মধ্যে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং সংঘাত যথেষ্ট বেশি। নির্বাচনকালীন জটিলতা যেমন নির্বাচন বর্জন, আন্দোলন, এবং সহিংসতা আরও বেশি থাকে।
  • আমেরিকা:
  • প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি হলো ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এবং রিপাবলিকান পার্টি। এছাড়া গ্রীন পার্টি, লিবার্টেরিয়ান পার্টিসহ কিছু ছোট দলও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তবে তারা বেশ অল্প ভোট পায়।
  • রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক সময় বেশ তীব্র হয়, তবে সংবিধানিক কাঠামো নির্বাচন পদ্ধতির ধারাবাহিকতা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।

৬. নির্বাচন পরিচালনা

  • বাংলাদেশ:
  • নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা আরও সরাসরি হয়, তবে নির্বাচন কেন্দ্রের কাছে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের স্বাধীনতা এবং পক্ষপাতিত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে।
  • আমেরিকা:
  • আমেরিকায় রাজ্য ভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয়, যেখানে প্রতিটি রাজ্যের নির্বাচন আইন ও পদ্ধতি আলাদা হতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় স্তরে ফেডারেল নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু করতে তদারকি করে।

উপসংহার:

  • বাংলাদেশের নির্বাচন সাধারণত পার্লামেন্টারি সিস্টেম অনুসরণ করে, যেখানে ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট পদ্ধতিতে ভোট হয়, এবং রাজনৈতিক সহিংসতা বা কারচুপির অভিযোগ ওঠে। নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
  • আমেরিকার নির্বাচন একটি ফেডারেল প্রেসিডেন্টিয়াল সিস্টেম, যেখানে ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় এবং ভোটের প্রক্রিয়া অনেকটাই রাজ্যভিত্তিক নিয়ন্ত্রিত। নির্বাচন কমিশন সাধারণত বেশি কার্যকরী ও স্বাধীন।

এই সমস্ত পার্থক্য দেখে বলা যায়, দু’দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা একে অপর থেকে মৌলিকভাবে ভিন্ন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আমার খবর
© All rights reserved © 2025 Kisukhoner Pathshala
Customized By BlogTheme