করোনা ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

করোনার সময় আমাদের জীবনের তথা জীবন ব্যবস্থার যেমন নানা পরিবর্তন এসেছে তেমনি আমাদের বাস্তবিক সমাজ ব্যবস্থার ও অনেক প্রকারের পরিবর্তন এসেছে তা আমরা স্বীকার করি বা না করি। আমাদের সমাজ জীবনের চালিকাশক্তির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হলো শিক্ষা। এই শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি গুলো যতটা না করোনা ঘটিয়েছে তার চেয়ে বেশি ঘটিয়েছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার নীতি নির্ধারকেরা। কখনও আসলে বেশি ভালো ভালো নয়। বেশি ভাল করতে গেলে অনেক সময় অনেক খারাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তেমনি শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক ভাল ভেবে নেওয় সিদ্ধান্তগুলো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে খারাপের দৌড়গোড়ায় পৌছে দিয়েছে। এই খারাপ বিষয়গুলো আমাদের সমাজ ব্যবস্থার বর্তমানের হয়ত সামান্য পরিবর্তন করবে কিন্তু বেশি পরিবর্তন করবে আমাদের ভবিষ্যৎ সমাজ ব্যবস্থায়-

আচ্ছা মনে করে দেখেন তো নব্বই দশকের শিক্ষা ব্যবস্থায়। ঐ সময়ে যে পরিমাণ শিক্ষা ব্যবস্থায় নকলের আর্বিভাব হয়েছিল তার প্রভাব কি এখন আমরা টের পাচ্ছি না। বর্তমানের সমাজ ব্যবস্থায় যে দূর্নীতির থাবা পড়েছে তা কিন্তু ঐ সময়ের শিক্ষা ব্যবস্থারই ফল। আর এ সময়ে এসে করোনা এসে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে ধাক্কা দিল শিক্ষা ব্যবস্থাকে যে নাড়া দিল তার ফল আজ আমরা টের না পেলেও এক সময় না এক সময় আমরা অবশ্যই টের পাব।

আমাদের স্কুল কলেজ গুলো অনেক দিন থেকে পুরোপুরি বন্ধ ঠিক আছে সিদ্ধান্ত খারাপ নয় পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে তা বন্ধ। কিন্তু তার ফলে আমাদের লাভ কতখানি হল আমরা কি তা ভেবে দেখেছি। স্কুল কলেজ বন্ধ করে দিয়ে আমদের নীতি নির্ধরকদের দায়িত্ব শেষ বলে ধরে নিয়েছে। কিন্তু এর ফলে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার মতো সকল প্রকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বিজ্ঞানী নিউটনের সুত্র মতে-“প্রত্যেক ক্রিয়ারই বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে” তেমনি আমাদের স্কুল কলেজ গুলো যে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ তার কি কোন প্রকারের প্রতিক্রিয়া বা প্রভাব আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়বে না। প্রভাব মোকাবেলার জন্য আমরা কতখানি প্রস্তুত। দেখেন পড়াশুনা এমন এক ধারাবাহিক বিষয় যখন আপনি সামনের দিকে যাবেন তখন আপনি নিজে যতখানি গতি দিবেন তার চেয়ে বেশি গতিতে তা সামনে যাবে আর যখন আপনি থেমে যাবেন তখন তা থেমে থাকবে না পিছনের দিকে যাবে।

অনলাইন পাঠদান পদ্ধতি একটি ভাল বিকল্প হতে পারত যদি তা আমরা সঠিক ভাবে আমাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু আমাদের এই ভাল বিকল্পটি দায় সার ভাবে আমাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে পালনের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছি। অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা পৃথিবীর অনেক দেশেই ব্যপক জনপ্রিয়। আমাদের মতো দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝেও আমরা জনপ্রিয় করতে পারতাম যদি আমাদের গৃহিত পদক্ষেপ গুলো সঠিক হতো এবং পদক্ষেপ গুলো সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন হতো। আমাদের অনলাইন পাঠদান গুলো হয়েছে দায়সার ভাবে। একটি নতুন ব্যবস্থা সফল করতে হলে তার জন্য যত সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার দরকার ছিল তা কি আমরা করতে পেরেছি। পারিনি যার ফলে এই পদ্ধতিও আমাদের শিক্ষার্থীদের মাঝেও  সাড়া ফেলতে পারে নি। অনলাইন পাঠদান কতগুলো শিক্ষার্থী ফলো করেছে। অনেক শিক্ষার্থী আছে একদিন একটি ক্লাস ও তারা দেখেনি বা ফলো করে নি। এর পেছনে যে শুধু তার হেয়ালিপনা আছে তা নয় তার বাস্তবিক অনেক কারণ ও আছে। যা একটি হলো আমাদের দেশে ইন্টারনেটের দুষ্প্রাপতা বা সহজলভ্যতা একটি কারণ। অনলাইন পাঠগ্রহনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো ইন্টারনেট। কিন্তু তার সহজলভ্যতা কি আমাদের শিক্ষার্থীদের আছে বা আমাদের শিক্ষার্থী গড়ে তোলার কারখানা গুলোতেই কি আছে। খোজ নিয়ে দেখেন এখন আমাদের দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুত এর সঠিক ব্যবস্থা নাই। সেখানে কতগুলো প্রতিষ্ঠান অনলাইন পাঠদান পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত তা আর না বললেও চলবে নিশ্চয়ই।

আমাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমাদের দেশের সরকারের উদ্বেগের কথা শুনলে ভাবতে ভালই লাগে। আসলে সেই উদ্বেগ কতখানি বাস্তবসম্মত তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তাভাবনা আছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সরকার এতবেশি ভাবনা ভাবে যে তাদের নিজের ভবিষ্যতে আর কোনদিন ভাবনা ভাবা লাগবে না। কারণ আমাদের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়াই প্রমোশন দিয়ে দিচ্ছে আমাদের সরকার। যার কোন দরকার ছিল কি না তা নিয়ে ভেবে দেখাই যায়। আমাদের দেশের করোনা পরিস্থিতি কি এত বেশি খারাপ হয়েছিল যে আমাদের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বেরুলেই করোনা ভাইরাস তাদের পিছু ধাওয়া করবে। কিন্তু খুশির খবর হলো আমাদের দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নামক যে প্রতিষ্ঠান আছে তা কিন্তু আমাদের কখনই এই অবস্থায় আমাদের জানতে দেয়নি জানি না তা আসলে আমাদের ভাল কি না তা। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষাই একমাত্র জায়গা যেখানে করোনা ভাইরাস মারাত্নক প্রভাব ফেলেছে।

আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো অনেকদিন যাবৎ তার আসল যে কাজ সেই কাজ থেকে দুরে আছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের যে কাজ তা থেকে তারা অনেক অনেক দুরে আছে। কিন্তু আমরা কি ই্চ্ছা করলে তাদের একটু কাছে রাখতে পারতাম না আমরা কি ইচ্ছা করলেই তাদের জন্য সঠিক বিকল্প ভাবা যেত না। অবশ্যই যেত একটি রাস্তা বন্ধ করতে হলে তার জন্য বিকল্প আরো একাধিক রাস্তা তৈরী করতে হয় বা বিকল্প রাস্তা তৈরী রাখতে হয়। আজ করোনা ভাইরাসের কারণে এই অবস্থা আগামীতে আরো বড় ধরনের যদি কোন বিপদ আসে আমাদের মাঝে তা কি আমরা মোকাবেলার জন্য কতখানি প্রস্তুত। না তখনও আমরা আবারও পরীক্ষা ছাড়াই আমাদের শিক্ষার্থীদের পরের শ্রেণীতে উঠিয়ে দেব।

আজ প্রায় 10 মাস আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ। এই 10 মাস আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের কোন কাজ দিয়ে ব্যস্ত রাখতে পারতাম না। আমার মনে হয় চেষ্টা করলে পারতাম। কিন্তু তা না করে হঠাৎ করে রাতে স্বপ্ন দেখে সকালে তা বাস্তবায়নের মতো হঠাৎ করেই বললাম যে তোমাদের অ্যাসাইনমেন্ট নাম এক আজব বস্তু দেখে দেখে লিখে বিদ্যালয়ে জমা দিয়ে আসতে হবে। যার কোন ইমপ্যাক্ট নাই। যা কিনা হুবুহু বিভিন্ন সোস্যালি মিডিয়াতে তার কপি পাওয়া যায়। সেই অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের কি উপকার হলো তা আপনারাই ভেবে দেখবেন। অ্যাসাইনমেন্ট বিষয়টা কোন খাম খেয়ালির বিষয় নয়। একটা ভালো জিনিস কে খারাপ কি ভাবে করতে তা অ্যাসাইনমেন্ট এর নাম শুনলে আমাদের শিক্ষার্থীরা বুঝবে যে অ্যাসাইনমেন্ট এর করণীয় বিষয় গুলো সোস্যাল মিডিয়াতে পাওয়া যায়। যা কখনো তা কষ্ট করে করতে হয় না।

আমরা ভাল সঠিক বিকল্পগুলো এমনভাবে প্রয়োগ করছি যার বিপরীতমুখী প্রয়োগ হচ্ছে। আসলে ভাল বিষয়গুলো ভাল ভাবে যদি প্রয়োগ না করি সঠিক ভাবে প্রয়োগ না করি তা হলে তা ভাল ফল বয়ে আনবে না। এই জন্য যে কোন কাজ করার আগে 10বার ভাবা দরকার কাজ করার পর যদি একবার ও ভাবি যে কাজটি আমার ভাল না খারাপ তা ক্ষতি ছাড়া ভাল করবে বলে মনে হয় না।

প্রত্যেকটি জাতির উন্নতির চাবি কাঠি হলো তার শিক্ষা ব্যবস্থা। সেই উন্নতির চাবি কাঠি নিয়ে আমাদের এই খামখেয়ালিপনা সিদ্ধান্ত গুলো নেওয়ার আগে ভেবে নেওয়া উচিত ছিল। নব্বই দশকের নকল প্রথার কথা শুরু দিকে বলে ছিলাম যার প্রভাব আমরা এখন টের পাচ্ছি। এই অটো প্রমোশনের প্রভাব ও আমরা এখন হয়তো সেই ভাবে টের না পেলে 10-15 বছর পর আমরা ঠিক টের পাব। তখন আমাদের উন্নতির চাবি কাঠি কত খানি ঠিক থাকবে এই চাবি দিয়ে উন্নতির সিন্দুক কি খোলা যাবে তো।

পরিশেষে বলতে চাই সঠিক কাজ করতে হলে সঠিক বিকল্প গুলোর সঠিক বাস্তবায়ন করতে জানতে হবে। তা না হলে বিপদে পড়লে বিকল্প পথে অগ্রসর হওয়া যাবে না।