বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড বলা হয় আমাদের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের। এর বড় একটি অংশ এমপিওভুক্ত (মাসিক বেতন আদেশ) প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। অথচ, দীর্ঘদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে — এই শিক্ষক ও কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পেতে গিয়ে নানা ধরণের প্রশাসনিক, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক জটিলতায় পড়ছেন।
প্রতিবছর বাজেট ঘোষণার সময় এমপিওভুক্তদের জন্য বরাদ্দ রাখা হলেও তা সময়মতো ছাড় হয় না বা পর্যাপ্ত হয় না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন, এরপর তা হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের দপ্তরে গেলে সেখানে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা যায়।
বর্তমানে বেতন প্রদানের জন্য ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (EFT) পদ্ধতি চালু হয়েছে, যা theoretically স্বচ্ছ ও আধুনিক পদ্ধতি। কিন্তু এর বাস্তবায়নে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী ভোগান্তিতে পড়েন। জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক একাউন্ট তথ্য, কিংবা অন্যান্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে তথ্যের অমিল বা সার্ভার জটিলতা তৈরি হয়।
অনেক শিক্ষক-কর্মচারী মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেন। বিশেষ করে নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে বেতন ছাড়ের বিষয়ে একাধিক স্তরে অনুমোদনের প্রয়োজন হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও ক্লান্তিকর।
শিক্ষাখাতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাবও একটি বড় সমস্যা। অনেক সময় প্রতিষ্ঠান প্রধান বা স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে রাজনীতিক প্রভাব খাটিয়ে অগ্রাধিকার পাওয়া যায়। আবার, প্রকৃত চাহিদার ভিত্তিতে না হয়ে এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়।
আজকের শিক্ষার্থী আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আর সেই শিক্ষার্থীকে গড়ার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক যদি ন্যায্য সম্মান ও প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হন, তবে তা একটি রাষ্ট্রের জন্য আত্মঘাতী।
প্রশ্নটা আজ তাই সবার:
“আর কতকাল এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন প্রদানে এমন প্রতিবন্ধকতা থাকবে?”
এই প্রশ্নের উত্তর শুধু সরকারের কাছে নয়, সমাজের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের কাছেও দায়বদ্ধ থাকা উচিত।
Leave a Reply