এমপিওভুক্ত শিক্ষক যে জগতে বাস করে সে জগতটা বৈষম্যের চাদরে ঢাঁকা আর সেই চাদর সড়ানোর মতো কোন বিবেকবান নেতা এদেশে আছে বলে মনে হয়না। যদি থাকত তাহলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা আজ রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকতে হতো না। এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের সংগঠন ৬২টি কিন্তু তাদের মধ্যে শিক্ষকদের কল্যানে কাজ করে কয়টি সংগঠন। সংগঠন গুলো ব্যস্ত একজন আরেকজনের ভুল ধরতে। তাদের কাজ ব্যাক্তিগত কারিশমা জাহির করা। এই সংগঠন বলে আমি আগে থেকেই জানতাম এটা হতে যাচ্ছে কখন বলবে জানেন ঘোষনার পর। বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, কিছু কিছু সংগঠনের নেতৃত্বের অংশদার বলে দাবী করে আমাকে মাফ করবেন অনেকেই দেখেছি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারে না। তারা নিজেদের নেতা বলে দাবী করেন। ভাই নেতা বা নেতৃত্ব সবাইকে দিয়ে হয় না। নেতা সাজা যায় না নেতা তৈরি হতে হয়। নেতা নিজে থেকে হওয়া যায় না নেতা তৈরি করে উৎসুক জনতা। যাক এ বিষয়ে অন্য একদিন কথা বলব। আজকের যে বিষয় তা নিয়ে সামনে দিকে যাই-
নিচে উল্লেখিত বিষয়গুলি যদি হয় দুঃখজনক, এই বৈষম্য দূর করতে দ্রুত কাজ করুন।
এই রাষ্ট্রে এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা কতটা বৈষম্যের শিকার তা এখানে উল্লেখিত তথ্য থেকে দৃশ্যমান হবে। বর্তমানে একজন সচিব শুধু বাবুর্চি ও নিরাপত্তা প্রহরী বাবদ ৩২,০০০ টাকা ভাতা পান (একজন বাবুর্চি ১৬, ০০০ + একজন নিরাপত্তা প্রহরী ১৬,০০০)। অথচ, এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুলের/মাদ্রাসা একজন সহকারী শিক্ষকের বেতন ১২,৫০০ টাকা (বি.এড ডিগ্রি না থাকলে)। এটা কি একটি সভ্য দেশের চিত্র হতে পারে।
উৎসব ভাতা পায় ২৫পার্সেন্ট =৩১২৫/- টাকা । এদিকে, এমপিওভুক্ত এবতেদায়ী মাদ্রাসার একজন জুনিয়র শিক্ষকের বেতন আরও কম। তাদের বেতন ৯, ৩০০ টাকা। তাহলে কি এই রাষ্ট্রে স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষক থেকে সচিবের সার্ভেন্টের বেশি প্রয়োজন?
এমপিওভুক্ত স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষকের চেয়ে সচিবের সার্ভেন্টের মর্যাদা বেশি? একজন সচিব মাসিক টেলিফোন বিল বাবদ মাসিক ২৮০০ টাকা নগদায়ন ছাড়াও মোবাইল বা সেলফোন বিল বাবদ ১,৫০০ টাকা প্রাপ্ত হন। আর সেখানে এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার একজন শিক্ষক মাসিক বাসা ভাড়া বাবদ মাত্র ১ হাজার টাকা প্রাপ্ত হন।
একজন সচিবের মোবাইল বিল ভাতা যদি এখন শিক্ষকের বাড়ি বাড়ার চেয়ে বেশি হয়, সেখানে বৈষম্য কতটা প্রকট নিজেই একবার পরখ করে দেখুন তো। বর্তমান বাজারে ১২,৫০০ টাকা বেতন দিয়ে একজন এমপিওভুক্ত সহকারী শিক্ষক এবং ৯,৩০০ টাকা দিয়ে এমপিওভুক্ত এবতেদায়ী মাদ্রাসার জুনিয়র শিক্ষক তাদের পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করবেন কীভাবে? এসব দেখার কি কেউ নেই? এই রাষ্ট্রের শিক্ষকদের আর কত বৈষম্য বয়ে বেড়াতে হবে? একটি রাষ্ট্র যদি তার মেরুদণ্ড শিক্ষক সমাজকে বৈষম্যের মাধ্যমে পঙ্গু করে রাখে, তাহলে সেই রাষ্ট্র ঘুরে দাঁড়াবে কীভাবে? সেই রাষ্ট্র সামনে এগিয়ে যাবে কীভাবে?
এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজ বিভিন্নভাবে লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার শিকার বহুদিন থেকে। একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক তার প্রাপ্য সম্মানটুকু যদি না পায় তাহলে তিনি কীভাবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেবেন। শিক্ষক জ্ঞান বিতরণ করবে নিজের ও পরিবারের পেট খালি রেখে নাকি অন্য কোনো ধান্ধায় লিপ্ত হয়ে? পৃথিবীতে একমাত্র আমাদের দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা বিভিন্নভাবে সমাজ বা রাষ্ট্রীয়ভাবে অবহেলার শিকার।
সমাজ বা দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে একজন শিক্ষকের অর্থনৈতিক দিক এবং বৃদ্ধি করতে হবে মান মর্যাদা। বর্তমান সময়ে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি জাতীয়করণ মেনে নেয়া অসম্ভব কিছু নয়। শিক্ষকদের এই দাবি অবাস্তব অযৌক্তিক নয়। কিন্তু সমস্যা কোথায় জানেন আমাদের চাওয়ায় আমারা যে কি চাই তা কিন্তু আমরা নিজেরাই জানি না। এখানে সরকারকেই মুখ্য ভুমিকা পালন করতে হবে। সরকারকে শিক্ষকদের কল্যাণের জন্য এবং মঙ্গলের জন্য দাবি পূরণ করতে হবে।
(সংগৃহিত) কিছুটা সম্পাদনা করা হয়েছে। যদি মুল লেখকের অনুমতি ছাড়া। আশা রাখি মার্জনা করবেন।
Leave a Reply