ইএফটি (Electronic Fund Transfer) বা বেতন স্থানান্তর পদ্ধতির সমস্যা এবং এর পিছনে দায়ী কে, সে প্রশ্নটি অনেক শিক্ষকের মনে নানা ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। সাধারণভাবে, ইএফটি সমস্যার কারণে দায়ী হতে পারে একাধিক পক্ষ—শিক্ষকরা, প্রশাসন বা মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর) সহ বিভিন্ন অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা ব্যবস্থাও।
সমস্যার সম্ভাব্য কারণগুলো:
১) প্রযুক্তিগত ত্রুটি (Technical Issues):
- ইএফটি সিস্টেমে প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা ব্যাঘাত অনেক সময় ইএফটি পেমেন্ট সঠিকভাবে সম্পন্ন হতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এখানে মাউশি-এর দায় রয়েছে কারণ তারা সিস্টেমের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও আপডেট করতে ব্যর্থ হতে পারে।
- ব্যাংক বা ইএফটি প্ল্যাটফর্মের ত্রুটিও এই সমস্যার পিছনে একটি বড় কারণ হতে পারে। সঠিকভাবে তথ্য যাচাই না করার ফলে পেমেন্ট বিলম্বিত হতে পারে।
- অনেক সময় শিক্ষকদের তথ্য যেমন ব্যাংক একাউন্ট নম্বর, নাম, এনআইডি ইত্যাদি ভুল বা অপ্রতিষ্ঠিত থাকে, যার ফলে পেমেন্টের সমস্যা তৈরি হয়। তবে, এই তথ্য আপডেট করার দায়িত্বও মাউশি-এর ওপর থাকে।
- শিক্ষকদের দায়: যদিও শিক্ষকদের উচিত সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেয়া, তবে এটি ঠিকভাবে যাচাই ও আপডেট করার দায়িত্ব মাউশি-এর উপর।
৩) দুর্বল প্রশাসনিক ব্যবস্থা (Weak Administrative System):
- মাউশি কর্তৃপক্ষ যদি সময়মত এবং সঠিকভাবে ইএফটি সিস্টেম চালানোর জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেয়, তবে পেমেন্টের ত্রুটি ঘটতে পারে।
- আইনগত বা বেসিক নীতিগত জটিলতা: কোন কোন ক্ষেত্রেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পরিষ্কার নির্দেশনা বা সঠিক নিয়ম-নীতি না থাকা, এবং প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পলিসির কারণে এই সমস্যা হতে পারে।
৪)বেতন যাচাইয়ের বিলম্ব (Delayed Verification):
- এক্ষেত্রে, মাউশি কর্তৃপক্ষ যদি সঠিকভাবে বা দ্রুত যাচাই না করে, শিক্ষকদের বেতন স্থানান্তর বিলম্বিত হতে পারে। যথাযথ পদ্ধতিতে তথ্য যাচাই না করা বা ত্রুটি সমাধান না করায় সমস্যাগুলো তৈরি হতে পারে।
- তবে, এখানে শিক্ষকদেরও যে প্রক্রিয়ায় বেতন আপডেট বা সংশোধন করা উচিত, সে ব্যাপারে সঠিক নির্দেশনা না থাকা একটা বড় সমস্যা।
৫) মাউশি কি করেছে?
- মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর) বেতন পদ্ধতির সঠিকতা নিশ্চিত করার জন্য কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, ঠিকই তবে তা কার্যত লোক দেখানো ছাড়া আর কিছু নয় বলে মনে হচেছ কারণ শিক্ষক কর্মচারীদের তথ্যের সংশোধনের তালিকা দিতে অকারণে দিনের পর দিন সময় নষ্ট করে চলেছে মাউশি। এতে কি বোঝা যায় বোঝা যায় মাউশির উদাসীনতা অথবা স্বার্থপরতা। মাউশি যে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ব্যাপারে উদাসীন বা গুরুত্ব কম তা অতীতেও বিভিন্ন ভাবে প্রমাণ করেছে। এবং এখন তার কার্যকারিতা প্রমাণ করছে মাউশি দেখাচ্ছে দেখ আমাদের মতের বিরুদ্ধে তোমাদের ইএফটির আওতাভুক্ত করা হয়েছে যার কারণে কিভাবে তোমাদের হয়রানি করা যায়। মাউশি যে কখনও চায়নি আমরা ইএফটির আওতাভুক্ত হই। মাউশি যদি চাইত তাহলে এর আগে যখন সরকার উদ্যোগ নিয়েছিল তখনই তা বাস্তবায়ন হতো। কিন্তু মাউশি তখনকার সরকারকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে সেই সময়কার সেই উদ্যোগ ভেস্তে দেয়। মাউশির এখানে সবচেয়ে বড় যে স্বার্থ জড়িত তা হলো আর্থিক। এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের প্রতিমাসের বেতন ভাতার বরাদ্দ নিয়ে মাউশির বড় ধরনের স্বার্থ জড়িত অনেকেই বলে। সত্যি মিথ্যার প্রমাণ মাউশিই ভাল দিতে পারবে।
- হ্যাঁ এখানে প্রযুক্তিগত সমস্যা থাকতে পারে তবে সে ক্ষেত্রে মাউশির উচিত ছিল যদি সে ধরনের কিছু ঘটে থাকে তাহলে মাউশির উচিত ছিল শিক্ষক ও মাউশি নিজে মিলে একটা ভালো উপায় খুঁজে বের করা যাতে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। উল্টো তা না করে কিভাবে পরিস্থিতি জটিল করা যায় সেটা নিয়ে ব্যস্ত মাউশি।
- তথ্যের অপ্রতিষ্ঠানিকতা যদি থেকে থাকে অর্থাৎ শিক্ষক কর্মচারীর যদি বিভিন্ন ধরনের তথ্যের সমস্যা থাকতে পারে তবে সেটাও কিন্তু দুপক্ষ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারত। কারণ এই তথ্য দিয়েই কিন্তু শিক্ষক কর্মচারীরা এতদিন ধরে চাকুরী করে আসছে বা বেতন ভাতা পেয়ে আসছে। তাহলে আজ ইএফটির বেলায় এত কেন সমস্যার সৃষ্টি হলো। এতদিন কিন্তু এ সমস্যা মাউশি কিন্তু সহ্য করেছে, তাহলে কি ধরে নিব এতদিন মাউশি অন্যায়কে সাপোর্ট করেছে অন্যায়কে সাপোর্ট করাও কিন্তু একট অন্যায়।
- প্রশাসনিক জটিলতা দায় কিন্তু মাউশি কিছুতেই এড়াতে পারবেনা। কারণ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ কিন্তু মাউশির হাতেই। ইএফটি কিভাবে চলবে বা কি ভাবে চালাবে তা কিন্তু মাউশি নিয়ন্ত্রণ করবে। কারণ ইএফটির আওতায় আমরা যতই আসিনা কেন মাউশি যেদিন চাইবে বেতন কিন্তু আমরা সেদিনই পাইব তার ব্যাতিক্রম নয়। কারণ এই কিছুদিনে তা বুঝিয়ে দিয়েছে। আমরা যারা ভেবেছিলাম যে ইএফটির আওতায় এলে মাসের শুরুতেই বেতন পাইব সেটা যে নিছক স্বপ্ন তা আর বোঝানোর দরকার নেই। পরম সত্য হল এটা যে মাউশি যেদিা চাইবে সেইদিন বেতন দিবে।
শিক্ষকদের দায়:
হ্যাঁ আমাদের যে কোন প্রকার দায় নেই তা আমি বলবনা। আমরা শিক্ষকরা যদি তথ্য প্রদান করতে না পারি, তাহলে কিন্তু সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু দায় অবশ্যই আছে তবে সেই দায় কতটুকু তা কিন্তু ভাবতে হবে। কারণ প্রত্যেক শিক্ষক কর্মচারীর সঠিক তথ্য কিন্তু মাউশির কাছে আছে। কারণ পূর্বের কথা যদি বাদও দিই বর্তমানে প্রতিবছর কিন্তু মাউশি ইএমআইএস তথ্য আপডেটের নামে প্রত্যেক শিক্ষক কর্মচারীর তথ্য সংগ্রহণ করে আর সেখানে কিন্তু আপডেট তথ্যই প্রদান করা হয়। আর যদি সেটা কেউ না করে থাকে তাহলে তা তখনই সনাক্তকরা উচিত ছিল না কি। তারপরও যদি কোন শিক্ষক কর্মচারীর তথ্য ভুল প্রেরণ করে থাকে তাহলে তাকে সনাক্তকরণ করাও কিন্তু মাউশির দায়িত্ব এবং তাকে সঠিক তথ্য প্রদান করারর জন্য সঠিক নির্দেশনা দেওয়ার দায়িত্ব কিন্তু মাউশির। মাউশি সেই দায়িত্ব কতটুকু পালন করছে। ইএফটির ড্যাশবোর্ডে শিক্ষকদের ভুলের তথ্য আজ দুইমাসেও দৃশ্যমান করতে পারে নি।
সমস্যার সমাধান:
- সঠিক তথ্য আপডেট: শিক্ষকদের তথ্য সঠিকভাবে এবং নিয়মিত আপডেট করতে হবে।
প্রযুক্তিগত সমাধান: ইএফটি সিস্টেমের প্রযুক্তিগত ত্রুটি সমাধান করার জন্য মাউশি এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
- প্রশাসনিক সংস্কার: মাউশি কর্তৃপক্ষের মধ্যে আরও দক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রয়োজন যাতে দ্রুত সমস্যা সমাধান করা যায়।
- দ্রুত কোন শিক্ষক কর্মচারীর কি সমস্যা রয়েছে তা প্রতিষ্ঠানের ইএফটির ড্যাশবোর্ডে দৃশমান করার ব্যবস্থা কর।
- প্রয়োজনীয় সময় বরাদ্দ দেওয়া। অপ্রয়োজনীয় সময় বরাদ্দ দিলে কিন্তু জটিলতা আরও বাড়বে।
অতএব, ইএফটি সমস্যার পিছনে দোষ এককভাবে কাউকে দেওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাউশি, ব্যাংক, কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষকেরা কিছুটা দায়ী। তবে, সমাধান প্রক্রিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তা দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত।
Post Views: 2,017
Leave a Reply