1. admin@kp-nat.com : admin : Ayub Ali
  2. ayub.bhs@gmail.com : Ayub ali : Ayub ali
বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ১০:৩৫ অপরাহ্ন

শিক্ষকদের সাথে এত চালাকি কি মানায়? মাউশি কি বোঝায়?

  • Update Time : সোমবার, ৫ মে, ২০২৫
  • ৬৭৪ Time View
শিক্ষকদের সাথে এত চালাকি কি মানায়? মাউশি কি বোঝায়?

পৃথিবীর সবচেয়ে চতুর প্রাণী হিসেবে শেয়ালের নাম আসে, আর পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে চালাক ধরা হয় কাককে। এরা নিজেদের এতটাই বুদ্ধিমান মনে করে যে অন্যরা তাদের চালাকি ধরতে পারে—এটা তারা ভাবতেই পারে না। তাই এদের চালাকি অনেক সময়েই প্রকাশ পেয়ে যায়। এই বৈশিষ্ট্য কেবল প্রাণীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, মানুষ সমাজেও এমন কিছু আচরণ দেখা যায়।

আজ এমন একটি প্রসঙ্গ নিয়ে লিখছি, যা আমাদের শিক্ষকদের সম্মান, আত্মমর্যাদা এবং পেশাগত মর্যাদার সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। বিষয়টি শুধু শিক্ষক সমাজ নয়, সমগ্র দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে।

একটি গল্প দিয়ে শুরু করি। গল্পটি বিখ্যাত আকবর-বীরবল এর, তবে এখানে সেটিকে সময়োপযোগী করে তুলে ধরা হলো।

একজন আইনজীবী একজন শিক্ষককে একটি কূপ বিক্রি করেন। কয়েক দিন পর সেই আইনজীবী আবার এসে বলেন, “আমি তো কূপ বিক্রি করেছি, কিন্তু এর পানি নয়! আপনি যদি পানি ব্যবহার করেন, তবে আপনাকে আলাদা করে অর্থ দিতে হবে।”

শিক্ষক মৃদু হেসে বললেন, “ঠিক আছে, তবে অনুগ্রহ করে আপনি আপনার পানি সরিয়ে নিন। যদি তা না পারেন, তাহলে আপনাকেই আমার কূপে পানি রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে।”

আইনজীবী হঠাৎ চুপ মেরে গিয়ে বলেন, “আরে না না, আমি তো মজা করছিলাম!”

তখন শিক্ষক বলেন, “ভুলে যাবেন না, আমরাই আইনজীবী, বিচারপতি, এমনকি আপনি যা হয়েছেন সেটাও গড়ে তুলি। শিক্ষকের সঙ্গে চালাকি মানেই নিজের পায়ের নিচে কুড়াল মারা।”

এই ছোট্ট কিন্তু গভীর গল্পটির মাধ্যমে আমরা একটি বড় বার্তা পাই—শিক্ষকের বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতাকে অবমূল্যায়ন করা মানেই নিজেরই অপমান।

আজকের বাস্তবতা: শিক্ষকের সঙ্গে প্রতি মাসে ‘চালাকি’

বর্তমান বাস্তবতায়, বিশেষ করে শিক্ষা প্রশাসনের (যেমন মাউশি – মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর) কর্মকর্তাদের আচরণে প্রায়ই এমন প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় যা শিক্ষকদের সঙ্গে একপ্রকার নিয়মিত বুদ্ধির খেলা খেলার মত। প্রতিবার নতুন করে একই সমস্যা, একই প্রতিশ্রুতি, কিন্তু ফলাফল সেই আগের মত।

প্রতি মাসে বেতন বিল অনুমোদনে দেরি, এমপিও সংক্রান্ত অনিয়ম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বা জাতীয়করণে অস্বচ্ছতা, শিক্ষকদের সাথে অপ্রয়োজনীয় জটিলতা সৃষ্টি—এসব এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

তারা হয়তো ভুলে গেছেন, আমরা শিক্ষক। আমাদের শিক্ষা দিয়েই তারাই আজ উচ্চপদে অধিষ্ঠিত। অথচ আজ তারাই সেই শিক্ষকদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করছেন যেন আমরা কিছুই বুঝি না। কিন্তু শিক্ষকরা বোঝেন। অনেক সময় শুধু ভদ্রতার খাতিরে চুপ থাকেন।

কিন্তু এই প্রতিমাসের চালাকি, বারবার একই স্ক্রিপ্ট, শিক্ষক সমাজকে ক্লান্ত করে তোলে। এতে কেবল সময়ই নষ্ট হয় না, শিক্ষকের আত্মসম্মানও ক্ষুণ্ন হয়।

শিক্ষক শুধু পেশা নয়, এটি জাতি গঠনের ভিত্তি

শিক্ষকের পাঠেই কেবল সরকারী কর্মকর্তা নয়—ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিল্পপতি, পুলিশ, সাংবাদিক, এমনকি রাজনীতিবিদ পর্যন্ত তৈরি হয়। আবার যে ব্যক্তি সমাজকে ধ্বংস করে—সে শিক্ষককে উপেক্ষা করেই হয়। অর্থাৎ শিক্ষক তৈরি করেন ভবিষ্যৎ, ভাল-খারাপ দুই রকমেরই।

তাই শিক্ষককে ছোট করা মানে, নিজের অতীতকেই অসম্মান করা।

যারা আজ শিক্ষককে অপমান করে, ভুলে যান—তারাই একসময় একজন শিক্ষকের সামনে ছাত্র হয়ে বসেছিলেন। তারাই হয়তো আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু তার ভিত্তিটা তৈরি হয়েছিল একজন সাধারণ শিক্ষকের হাতে।

সমাধান কী?

  1. সম্মানজনক ব্যবস্থাপনা: শিক্ষকদের জন্য প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ, দ্রুত ও স্বচ্ছ করতে হবে।
  2. নিয়মিত জবাবদিহিতা: যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের প্রতি মাসে না—প্রতিদিন হিসাব দিতে হবে কেন কাজ সম্পন্ন হয়নি।
  3. সক্ষম ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিন: যারা কাজ করতে অক্ষম, তাদের জায়গায় যোগ্য এবং দায়িত্ববান মানুষকে দায়িত্ব দিন।
  4. শিক্ষকদের মতামত নিন: নীতিনির্ধারণে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন।

পরিশেষে যে কথা বলব তা হলো শিক্ষকের সঙ্গে চালাকি করে নিজেদের ছোট করবেন না। এটা কেবল শিক্ষককে নয়, পুরো সমাজকেই অপমান করা। শিক্ষক বুঝতে পারেন কোনটা নাটক, আর কোনটা চালাকি। তিনি বোকার মতো চুপ থাকেন না, তিনি সময়মতো জবাব দিতে জানেন। শিক্ষকের সম্মান যদি টিকিয়ে না রাখতে পারেন, তবে সমাজ টিকিয়ে রাখাও কঠিন হয়ে যাবে।

একই সমস্যা কি প্রতি মাসে ঘটে, প্রতি মাসে সেই একই বয়ান পেশ করেন আপনারা এতটুকু লজ্জা করে না আপনাদের। আপনারা যদি অক্ষম হোন তাহলে যারা সক্ষম তাদের নিকট দায়িত্ব প্রদান করুন কেন এভাবে প্রতিক্ষণে প্রতিমাসে এভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আমার খবর
© All rights reserved © 2025 Kisukhoner Pathshala
Customized By BlogTheme