1. admin@kp-nat.com : admin : Ayub Ali
  2. ayub.bhs@gmail.com : Ayub ali : Ayub ali
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৬:৪৩ পূর্বাহ্ন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন জটিলতা: ইএফটি অজুহাত আর অব্যবস্থাপনার করুণ চিত্র

  • Update Time : শুক্রবার, ২ মে, ২০২৫
  • ৭০৪ Time View
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন জটিলতা: ইএফটি অজুহাত আর অব্যবস্থাপনার করুণ চিত্র

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। কিন্তু প্রতি মাসেই বেতন প্রাপ্তির জটিলতা তাঁদের জীবনে এক স্থায়ী দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। মাস শেষ হয়, নতুন মাস শুরু হয়, অর্ধেকের বেশি সময় পার হয়ে যায়, অথচ বেতন আসার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। বেতন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা, সেটি শিক্ষক পরিবারে চাপ সৃষ্টি করছে, পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে এবং গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকেই অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এভাবে আর কত? এমন দুর্ভোগ কি শুধু চিরকালই আমাদেরই প্রাপ্য? কি অপরাধ আমাদের? তাহলে কি ধরে নিব যে, আমরা এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারী এটাই আমাদের অপরাধ।

ইএফটি: আশার আলো না নতুন যন্ত্রণা?

ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) চালুর ঘোষণায় শিক্ষক সমাজের মনে একসময় আশা জেগেছিল। মনে হয়েছিল, এবার বোধহয় মাসের শুরুতেই নিশ্চিতভাবে বেতন চলে আসবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বরং, ইএফটি চালুর পর পরিস্থিতি আরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে।

বর্তমানে প্রায় দশ হাজার বা ততেধিক শিক্ষক এখনও ইএফটির আওতার বাইরে রয়েছেন। তাঁদের তথ্য ভুল বা অসম্পূর্ণ বলে ধরে নিয়ে ডিসেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত তাঁরা বেতন পাননি। এই শিক্ষকরা পরিবার-পরিজনের মুখ চেয়ে মাসের পর মাস বেতন ছাড়া কাটাচ্ছেন অর্ধাহারে বা অনাহারে। এতদিন শিক্ষকতা পেশার মাধ্যমে এদেশের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে এই তার প্রতিদান। এর ফলে শিক্ষক সমাজে চরম হতাশা, ক্ষোভ ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে।

কারিগরি ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা পাচ্ছেন, মাধ্যমিকেরাই বঞ্চিত কেন?

অবাক করা বিষয় হলো, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা নির্ধারিত সময়েই অর্থাৎ মাসের প্রথম সপ্তাহেই বেতন পাচ্ছেন। হ্যাঁ বলতে পারেন তারা তো বেতন পাচ্ছে পুর্বের নিয়মে এই কারণে তাদের বেতন প্রদানে কোন জটিলতা হচেছ না। কিন্তু মাধ্যমিক পর্যায়ে ইএফটির কারণে এই জটিলতা। বিষয়টি ভাল করে অনুধাবন করুন তারপর বলুন একই ধরনের সমস্যা কি প্রতিমাসেই হয় একই সমস্যা একবার হতে পারে দুই বার হতে পারে কিন্তু বার বার যদি হয় তাহলে বুঝতে হবে এখানে সমস্যার কোন সমস্যা হয়েছে যার কারণে তা বার বার ঘুরে ঘুরে আসছে। মুল সমস্যা হলো মানসিকতায় কারণ মাউশি কখনও চায় না এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানের তারা সকল সময় চায় সমস্যা জিইয়ে রাখতে এবং সেটাতেই তাদের অলিখিত কোন লাভ রয়েছে। তারা মুখে সকল সময় খুব আন্তরিক ও ভাল ভাল নীতি বাক্য বলেন। আর সকলে কাজে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতাধীন শিক্ষকদের পদে পদে, প্রতিক্ষেত্রে জটিলতা, বিলম্ব আর অজুহাতের ফাঁদে ফেলছেন।

মাউশির অজুহাতের তালিকা ফুরায় না

মাউশি প্রতিমাসেই এক নতুন অজুহাত নিয়ে হাজির হয়:

  • পর্যাপ্ত লোকবল নেই — মাত্র ১৪ জন দিয়ে ইএমআইএস সেল চালানো হচ্ছে।
  • শিক্ষক মৃত্যু, বদলি, অবসর ইত্যাদি তথ্য হালনাগাদে বিলম্ব।
  • ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য।
  • শিক্ষকদের তথ্যের নানা জটিলতা।
  • ভুল তথ্য প্রদান।
  • মন্ত্রণালয়ের সময়মতো বরাদ্দ না আসা।

এসব অজুহাতের আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষক পরিবারের বেঁচে থাকার লড়াই। মাস শেষে সন্তানদের খরচ, ঋণের কিস্তি, বাজার খরচ—সব কিছু নিয়ে তাঁরা যেন এক চিরস্থায়ী দুশ্চিন্তার মধ্যে বাস করছেন।

ইচ্ছাকৃত জটিলতা? শিক্ষকদের সন্দেহ

অনেক শিক্ষক মনে করছেন, মাউশি ইচ্ছা করে এই জটিলতা বাড়িয়ে তুলছে। কারণ পুরোনো পদ্ধতিতে বেতন ছাড়ের সময় নানা ধরণের অস্বচ্ছ লেনদেনের সুযোগ ছিল। অনেকের ধারণা, ইএফটি পুরোপুরি কার্যকর হলে সেই সুযোগ কমে যাবে। তাই একাংশ চায় আগের পদ্ধতিতে ফিরতে। যদিও এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ নেই, তবে দীর্ঘসূত্রতা ও দায়িত্বহীন আচরণ শিক্ষকদের মনে এমন সন্দেহ জাগানো অযৌক্তিক নয়।

পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে, শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত

এই আর্থিক অনিশ্চয়তা শুধু শিক্ষক পরিবারে চাপ সৃষ্টি করছে না, এটি ক্লাসরুমে পড়াশোনার পরিবেশকেও নষ্ট করছে। ক্ষুধার্ত শিক্ষক, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিক্ষক—তাঁরা কীভাবে পাঠদান করবেন? শিক্ষকের মন-মেজাজ খারাপ থাকলে ছাত্রদের মনোযোগও বিঘ্নিত হয়, পাঠদান হয় অসাড়। সুস্থ দেহ থাকলে থাকে সুস্থু মন আর সুস্থু মন থাকলে সঠিক পরিকল্পনা করা যায়।

বেতন-ভাতা ছাড়াও রয়েছে বঞ্চনার পাহাড়

এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা এমনিতেই সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত:

  • অনিয়মিত ও খন্ডিত প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল উৎসব ভাতা প্রদান যা আবার প্রদান করা হয় উৎসব পরবর্তী সময়ে।
  • চিকিৎসা ভাতায় রয়েছে বৈষম্য, ট্রাভেলিং বোনাস নেই
  • পদোন্নতির নিয়ম শিথিল বা অকার্যকর বা অনুপস্থিত।
  • পেনশন ব্যবস্থা নেই। যে ব্যবস্থা রয়েছে তাতে রয়েছে অস্বাভাবিক দুর্ণীতিতে ভরা এবং অপর্যাপ্ত বা জটিল প্রকৃতির।

এই সকল প্রতিবন্ধকতার মাঝেও তাঁরা দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন—শিক্ষা প্রদান। অথচ তাঁদের ন্যায্য অধিকার পর্যন্ত নিশ্চিত করা হচ্ছে না।

করণীয় কী?

এই দুরবস্থা থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন:

  1. ইএফটি ব্যবস্থার দ্রুত সংস্কার ও সম্প্রসারণ: সব শিক্ষককে আওতায় আনতে হবে এবং তথ্য যাচাই প্রক্রিয়াকে মানবিক ও প্রযুক্তিসম্পন্ন করতে হবে।
  2. লোকবল নিয়োগ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি: ইএমআইএস সেলকে প্রযুক্তিগতভাবে আধুনিক করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিতে হবে।
  3. প্রতিমাসের নির্ধারিত তারিখে বেতন প্রদানের সময়সূচি নিশ্চিত করতে হবে
  4. সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জোরালো ও একতাবদ্ধ দাবি: শিক্ষকদের সংগঠনগুলোর উচিত ঐক্যবদ্ধ হয়ে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলা, বিভক্তি নয়।
  5. দায়িত্বশীল প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে একাধিক স্তরে জবাবদিহিতা থাকবে।

শেষ কথা:

শিক্ষক জাতির ভবিষ্যৎ গড়েন। তাঁদের জীবনে যদি প্রতিনিয়ত এমন অবহেলা, অনিশ্চয়তা আর অবজ্ঞা লেগেই থাকে, তাহলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎও অন্ধকার ছাড়া কিছুই নয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতি এই নিষ্ঠুর অবিচার বন্ধ হোক — এটুকুই এই দেশের লাখো শিক্ষকের একটাই দাবি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আমার খবর
© All rights reserved © 2025 Kisukhoner Pathshala
Customized By BlogTheme