১. এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসাবে আপনারা যারা যোগদান করবেন ও ইতিমধ্যে যোগদান করেছেন আপনারা কি জানেন যে B.Ed ছাড়া স্কুল/মাদ্রাসায় টিচার হলে পাবেন ১১ তম গ্রেড আর B.Ed থাকলে পাবেন ১০ম গ্রেড, যেখানে বেতনের পার্থক্য ৩৫০০ টাকা।
২. এ আইন শুধুমাত্র এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ঠকানোর কালো আইন, কেননা সরকারীতে মাধ্যমিকে বিদ্যালয়ে যে সকল শিক্ষক চাকুরী করেন তাদের বেলায় এমন আইন নেই, সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরাসরি ১০ম গ্রেড।
৩. ১১ তম গ্রেডে ঢুকার পর ধরেন আপনি মোট ১৮টি ইনক্রিমেন্টের মধ্যে ৩-৫ টি ইনক্রিমেন্ট পেলেন (প্রতি ইনক্রিমেন্টে ৫০০ টাকা মাসিক বেতন বাড়ে), B.Ed করার পর আগের সবগুলা ইনক্রিমেন্ট বাতিল হয়ে যাবে, অর্থাৎ ৫ টি ইনক্রিমেন্ট পেলে সগুলা বাতিল হলে আপনার মাসিক বেতন প্রায় ২৫০০ টাকা করে কমে যাবে বিএড করার পর। সাথে আপনার সেই বাতিল হওয়া ৫ টি ইনক্রিমেন আর পরবর্তীতে পাবেন না অর্থাৎ আপনার মোট ইনক্রিমেন্ট হবার কথা ছিলো ১৮ টি, ৫টি বাতিল হবার কারনে, পরবর্তীতে আপনি আর মাত্র ১৩ টি ইনক্রিমেন্ট পাবেন। বাকি ৫ টি ইনক্রিমেন্ট আজীবনের জন্য বাতিল যেখানে আপনি চাকরীকালীন সারা জীবন ২৫০০ টাকা করে বেশি পেতেন। এ আইন দেশের আর কোন সেক্টরেই নেই, তাই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ঠকানো এ কালো আইন বাতিল করতে হবে।
৪. স্কুল/মাদ্রাসা শিক্ষকদের জয়েন করার দিন থেকেই ১০ম গ্রেডে বেতন দিতে হবে যেমনটা সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দেয়া হয়, কোন ইনক্রিমেন্ট বাতিল করা যাবেনা বিএড এর দোহায় দিয়ে।
৬. সরকার চাইলে ১০ম গ্রেডে বেতন শুরুর পর বিএড করার জন্য ৫ বছর সময় দিতে পারে যেমনটা সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়মে দেয়া আছে, তবে বেতন স্কেল অবশ্যই ১০ম গ্রেড দিয়ে শুরু করতে হবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো তাদেরকে প্রতি মাসের বেতন মাস শেষে প্রদান করতে অমানষিক জটিলতা দেখা যায়। প্রতিমাসে নতুন জটিলতা হাজির করে বেতন প্রদানের দায়িত্বে নিয়োজিত মাউশির অঙ্গ সংগঠন ইএমআইএস সেল। বেতন প্রদানের জটিলতা দুরীকরণের জন্য সরকার ইএফটির মাধ্যমে বেতন প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করে কিন্তু তারপরও এখন অবধি এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীগণের বেতন প্রাপ্তির জটিলতা দুর হয়নি। বেতন প্রদানের এই জটিলতার সবচেয়ে স্থায়ী সমাধান হলো বেতন রাজস্ব তহবিলে স্থানান্তর করা উন্নয়ন তহবিল হতে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের আর এক হতাশার নাম হলো অবসর ও কল্যাণ সুবিধা বোর্ড। অন্যান্য সকল পেশাজীবিরা যেখানে চাকুরী শেষে তাদের পেনশনের টাকা যথাসময়ে পেয়ে নিশ্চিন্তে শেষ বয়সের জীবন অতিবাহিত করে। সেখানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের এই অবসর ও কল্যান তহবিলের টাকা পেতে পেতে বছরের পর বছর লেগে যায়। অনেকেই তাদের টাকা জীবিত অবস্থায় পায় না। তাই এই ব্যবস্থা যত দ্রুত সময়ের মধ্যে দুর করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য সরকারী চাকুরীজীবিদের পেনশনের ন্যায় কোন বোর্ড গঠন পূর্বক এই জটিলতার স্থায়ী নিরসন জরুরী।
একই দেশে একই পাঠ্যবইয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানোর পরও একজন সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাস ও বছর শেষে যে পরিমাণ মুল বেতনের সাথে বিভিন্ন ভাতা যুক্ত করে উত্তোলন করে তা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সাথে যদি তুলনা করা যায় তা যদি পাগলেও শুনে তাকে হাস্যকর হিসাবে আখ্যা দিবে নিশ্চিত। যেমনঃ সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক প্রতিমাসে বাড়িভাড়া হিসাবে পায় মুল বেতনের ৪৫% সেখানে এমপিওভুক্ত একজন শিক্ষক পান মোটের উপর বাড়িভাড়া হিসাবে মাত্র ১০০০/-টাকা। আরও অন্যান্য ভাতার উল্লেখ নাই বা করলাম।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাকুরীর স্বাভাবিক ভাবে নেই কোন প্রমোশনের ব্যবস্থা। সেখানে কেউ যদি অনেক যোগ্য হওয়ার পরও তাকে তার যোগদানকৃত পোষ্ট হতেই বিদায় নিতে হয়। তার উপর আবার বিগত সরকার চাপিয়ে দিয়েছে আজগবি এক নিয়ম কেউ যদি প্রধান শিক্ষক হতে চায় তাকে অবশ্যই সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কলেজের ক্ষেত্রে প্রিন্সিপাল হতে হলে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসাবে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যা এক চরম বৈষম্যের বহিঃপ্রকাশ এবং এটি একটি রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তি করানোর সুযোগ সৃষ্টি। এই বৈষম্য দুর করা অতীব জরুরী।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের চাকুরী জীবনের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো ম্যানেজিং কমিটি বা গভনিংবডির অন্যায় ও অবিচার। দয়া করে এই একবিংশ শতাব্দীর যুগে ম্যানেজিং কমিটি নামক দানবের কালো থাবা থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করুন। আর এটা করতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির আইন বাতিল করতে হবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ হলো ১০% কর্তন কল্যাণ ও অবসর ভাতার নামে। সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৬% কর্তন চালু ছিল। সেই মোতাবেক সুবিধা অবসর ও কল্যাণ সুবিধা প্রদান করা হয় শিক্ষক কর্মচারীদের কিন্তু বিগত সরকার অন্যায় ও জোর করে ১০% কর্তন চালু করে এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায় থাকার পরও আজ পর্যন্ত এই অন্যায় কাজ বন্ধ করেনি মাউশি।
শিক্ষার মান বাড়াতে হলে বদলির প্রথার বিকল্প নাই এটা ধ্রুব সত্যি। আর বদলী প্রথা চালু করতে হলে অবশ্যই তা করতে হবে সর্বজনীন বদলি। ডিভাইড বদলি একাংশের বদলি কখনও ভালো কিছু বয়ে আনবে না।
পরিশেষ যে কথা বলব তা হলো এমপিওভুক্ত পেশায় যে, আরও কত অসামাঞ্জস্যপূর্ণ রীতি নীতি রয়েছে যার পরিবর্তন অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। পৃথিবীর অনেক পরিবর্তন হয়েছে এবং সামনে আরও হবে এটাই কাম্য ঠিক তেমনি এমপিওভুক্ত চাকুরীর এ পেশায় যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন জরুরী।
Leave a Reply