এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন প্রদানের জটিলতা কমানোর বা নিরসনের জন্য বর্তমান সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করে যে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ইএফটির মাধ্যমে প্রেরণের। সেই লক্ষ্যে শিক্ষক কর্মচারীদের তথ্য যাচাই বাছাই করে ইএফটিতে বেতন প্রদানের দায়িত্ব প্রদান করা হয় মাউশির উপর। কারণ মাউশি হলো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক কর্মচারীদের প্যারেন্ট সংগঠন।
ইএফটিতে বেতন প্রদানের কিছু নিয়মনীতি রয়েছে যা পূরণ করা না গেলে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। পাশাপাশি এটাও কিন্তু ভাবার বিষয় যে ধরনের জটিলতা এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেলায় তৈরি করা হচেছ এত জটিলতা বা এই জটিলতা কি শুধু এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেলায়ই প্রযোজ্য। কেননা এদেশের অন্যান্য পেশার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরতো ইএফটির আওতাভুক্ত করা হয়েছে তখনও কি এধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছিল। যদি হয়ে থাকে তাহলে তো তার কিছু না কিছু আমরাও জানতে পারতাম। যাই হোক এখানে কি শুধু ইএফটির জটিলতাই মুখ্য, নাকি ইএফটি যারা পরিচালনা করছে তাদের চাতুরতা মুখ্য। আমার এই লেখায় আমি দুধরনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব বাদ বাকি সিদ্ধান্ত নেওয়া দায়িত্ব আপনাদের কাছেই ছেড়ে দিলাম।
আরও পড়ুন….ইএফটির ফলে লাভ কি হলো?
ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (EFT) এর জটিলতাগুলো নিম্নরূপ হতে পারে:
EFT সুবিধাজনক হলেও সতর্কতা ও প্রযুক্তিগত সুরক্ষা অপরিহার্য।
আরও পড়ুন….এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এত অপছন্দ কেন আমলাদের?
ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) সিস্টেমের মাধ্যমে বেতন বা অন্য আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা তৈরি হতে পারে, যা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমলারা (সরকারি কর্মকর্তারা) নানা ধরনের চাতুরতা বা কার্যক্রমে জড়িত হতে পারে, যা সিস্টেমের সঠিক ব্যবহার বা বাস্তবায়নকে ব্যাহত করতে পারে।
এখানে কিছু সম্ভাব্য চাতুরতা বা প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরা হলো:
১. তথ্য যাচাইয়ে অযথা বিলম্ব:
আমলারা সিস্টেমে শিক্ষকদের তথ্য যাচাই করতে সময় নিয়ে বিলম্ব করতে পারেন। তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে জটিলতা বা অযথা রুটিন কাজ বাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে, যাতে বেতন প্রদানে বিলম্ব হয়। এই ধরনের বিলম্ব শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা তৈরি করতে পারে। যা আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের বেলায় এবং এই বিষয়টির শতভাগ সুযোগ গ্রহণ করছে।
২. অনেক শিক্ষকের তথ্য ভুল থাকা:
আমলারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো সময়মতো এবং সঠিকভাবে আপডেট না করলে, এই তথ্য ভুল থেকে যেতে পারে। যদি কোনো শিক্ষকের নাম, পদবী, অথবা জন্মতারিখ ভুল থাকে, তবে ইএফটি সিস্টেমে সেই তথ্য প্রবাহিত না হওয়ার কারণে বেতন প্রাপ্তি বিলম্বিত হতে পারে। এই সুযোগটি খুব ভালভাবে মাউশি গ্রহণ করছে।
৩. অথিত্বের প্রশ্নে গড়িমসি:
সরকারি কর্মকর্তা বা আমলারা কোনো শিক্ষকের তথ্য আপডেট বা সংশোধন করতে চাইলে তা দীর্ঘ সময় নিতে পারেন, ফলে সেই শিক্ষক নির্দিষ্ট সময়ে তার বেতন পায় না। আমলারা নিজেদের কাজ দ্রুত না করার জন্য অনেক সময় নানা অজুহাত খুঁজে বের করতে পারেন। যেটাকে আমরা সরিষার মধ্যে ভুতের সাথে তুলনা করতে পারে।
আরও পড়ুন…..শিক্ষকদের ভাতা বাড়ানো নিয়ে আমলাদের দর কষাকষি।
৪. সিস্টেমের কার্যকারিতা নিয়ে ব্যর্থতা:
প্রশাসনিক ব্যবস্থার মধ্যে প্রযুক্তিগত সমস্যাও থাকতে পারে, যেমন সিস্টেম ক্র্যাশ, ডেটা লিক, বা সফটওয়্যারের ত্রুটি। এসব ক্ষেত্রে আমলারা এই সমস্যাগুলিকে চাতুরতার অংশ হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন।
৫. নির্দিষ্ট তথ্য চুরির আশঙ্কা:
কোথাও কোথাও কিছু অযাচিত কর্মচারী বা আমলারা তথ্যের অপব্যবহার করতে পারেন, যা ফলে সিস্টেমের মাধ্যমে বেতন বা প্রণোদনা প্রদান করা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তথ্য চুরি বা সিস্টেমের ভুল ব্যবহার তাদের জন্য সুবিধাজনক হয়ে উঠতে পারে।
৬. এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চাহিদা উপেক্ষা:
শিক্ষকদের প্রয়োজনীয়তা এবং তাদের নির্দিষ্ট দাবি উপেক্ষা করা, তাদের তথ্য সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসি করা, অথবা বেতন বৃদ্ধি ও অন্যান্য সুবিধা সংক্রান্ত নীতির দ্রুত বাস্তবায়ন না করা হতে পারে আমলাদের আচরণের অংশ।
৭. আইন বা নীতি পরিবর্তন করা:
কখনো কখনো কোনো অজুহাত দেখিয়ে সরকার বা আমলারা ইএফটি সিস্টেমের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম-কানুন বা নীতি প্রবর্তন করতে পারে। এই নীতির মাধ্যমে তারা সিস্টেমের কার্যকারিতা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারেন।
এই চাতুরতা কাটানোর উপায়:
ইএফটি ব্যবস্থায় যেকোনো চাতুরতা বা প্রতিবন্ধকতা শিক্ষকদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কিন্তু শক্তিশালী নেতৃত্ব, প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং শিক্ষকদের একযোগিতার মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
Leave a Reply