1. admin@kp-nat.com : admin : Ayub Ali
  2. ayub.bhs@gmail.com : Ayub ali : Ayub ali
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৮:২৬ অপরাহ্ন

ইএফটির জটিলতা, নাকি আমলাদের চাতুরতা?

  • Update Time : সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫
  • ১৬০ Time View
ইএফটির জটিলতা, নাকি আমলাদের চাতুরতা?

এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন প্রদানের জটিলতা কমানোর বা নিরসনের জন্য বর্তমান সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করে যে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ইএফটির মাধ্যমে প্রেরণের। সেই লক্ষ্যে শিক্ষক কর্মচারীদের তথ্য যাচাই বাছাই করে ইএফটিতে বেতন প্রদানের দায়িত্ব প্রদান করা হয় মাউশির উপর। কারণ মাউশি হলো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক কর্মচারীদের প্যারেন্ট সংগঠন।

ইএফটিতে বেতন প্রদানের কিছু নিয়মনীতি রয়েছে যা পূরণ করা না গেলে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। পাশাপাশি এটাও কিন্তু ভাবার বিষয় যে ধরনের জটিলতা এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেলায় তৈরি করা হচেছ এত জটিলতা বা এই জটিলতা কি শুধু এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেলায়ই প্রযোজ্য। কেননা এদেশের অন্যান্য পেশার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরতো ইএফটির আওতাভুক্ত করা হয়েছে তখনও কি এধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছিল। যদি হয়ে থাকে তাহলে তো তার কিছু না কিছু আমরাও জানতে পারতাম। যাই হোক এখানে কি শুধু ইএফটির জটিলতাই মুখ্য, নাকি ইএফটি যারা পরিচালনা করছে তাদের চাতুরতা মুখ্য। আমার এই লেখায় আমি দুধরনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব বাদ বাকি সিদ্ধান্ত নেওয়া দায়িত্ব আপনাদের কাছেই ছেড়ে দিলাম।

আরও পড়ুন….ইএফটির ফলে লাভ কি হলো?

ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (EFT) এর জটিলতাগুলো নিম্নরূপ হতে পারে:

১. সাইবার সিকিউরিটি ঝুঁকি:

  • হ্যাকিং ও ডেটা ব্রিচ: অনলাইন লেনদেনের সময় হ্যাকাররা ব্যাংকিং সিস্টেম বা ব্যবহারকারীর ডেটা চুরি করতে পারে।
  • ফিশিং আক্রমণ: জাল ওয়েবসাইট বা ইমেলের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর লগইন তথ্য চুরি। (যে কোন ধরনের ব্যাক্তিগত তথ্য চুরি করা)
  • ম্যালওয়্যার/র্যানসমওয়্যার: সংক্রমিত ডিভাইসের মাধ্যমে ট্রানজ্যাকশন ব্যাহত বা ফান্ড আটকানো।

২. টেকনিক্যাল গ্লিচ:

  • সার্ভার ডাউনটাইম: ব্যাংক বা পেমেন্ট গেটওয়ের সার্ভার বিপর্যয়ের কারণে লেনদেন বিলম্ব বা বাতিল।
  • সফটওয়্যার ত্রুটি: প্রোগ্রামিং ভুলে ভুল লেনদেন, ডাবল ডেবিট/ক্রেডিট, বা ডেটা হারানো।

৩. লেনদেনের ভুল:

  • ভুল অ্যাকাউন্ট নম্বর: রিসিভারের ভুল তথ্য দেওয়ায় অর্থাৎ ভুল একাউন্ট নম্বর প্রদানের ফলে টাকা ভুল ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়া।
  • রিভার্সালের অসুবিধা: ভুল লেনদেন সংশোধনে সময় লাগা বা আইনি জটিলতা।

৪. প্রতারণা ও জালিয়াতি:

  • সোশিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং: প্রতারকরা ব্যবহারকারীকে ফেক ট্রানজ্যাকশনে বাধ্য করে (যেমন: জাল চাহিদা বা জরুরি আবেদন)।
  • মুদ্রা লন্ডারিং: অবৈধ ফান্ড ইলেকট্রনিকভাবে “পরিষ্কার” করার চেষ্টা।

৫. আইনি ও কমপ্লায়েন্স চ্যালেঞ্জ:

  • আন্তর্জাতিক রেগুলেশন: ভিন্ন দেশের AML (Anti-Money Laundering) এবং KYC (Know Your Customer) নীতির পার্থক্য।
  • ট্যাক্স ইস্যু: ক্রস-বর্ডার ট্রানজ্যাকশনে ট্যাক্স ফাঁকি বা রিপোর্টিং জটিলতা।

৬. ক্রস-বর্ডার লেনদেনের সমস্যা:

  • বিনিময় হার ও ফি: মুদ্রা রূপান্তরে অতিরিক্ত খরচ বা অপ্রত্যাশিত এক্সচেঞ্জ রেট ওঠানামা।
  • প্রসেসিং সময়: আন্তর্জাতিক লেনদেনে ৩-৫ কর্মদিবসের বিলম্ব।

৭. ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা:

  • ডিজিটাল বিভাজন: প্রযুক্তি-অসচেতন বা ইন্টারনেট সুবিধাবঞ্চিত ব্যবহারকারীদের অসুবিধা। এক্ষেত্রে আমোদের অধিকাংশ শিক্ষক কর্মচারী যেহেতু প্রযুক্তি সচেতন নয় তাই এ বিষয়ে জ্ঞানর্জন করা উচিত।
  • কাস্টমার সাপোর্ট: সমস্যা সমাধানে ধীর গতি বা জবাবদিহিতার অভাব।

৮. লিকুইডিটি ঝুঁকি:

  • রিয়েল-টাইম সেটেলমেন্ট ব্যর্থতা: প্রতিষ্ঠানের পর্যাপ্ত তরল সম্পদ না থাকলে লেনদেন স্থগিত।

৯. ডেটা প্রাইভেসি:

  • তৃতীয় পক্ষের ডেটা এক্সেস: পেমেন্ট প্রসেসর বা থার্ড-পার্টি অ্যাপের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য লিক হওয়ার সম্ভাবনা।

সমাধান/কমিয়ে আনার উপায়:

  • ২-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) এবং বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন ব্যবহার।
  • এনক্রিপশন ও ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে ডেটা সুরক্ষা।
  • লেনদেনের আগে অ্যাকাউন্ট নম্বর ডাবল-চেক করার প্রম্পট।
  • রেগুলেটরি বডির সাথে সমন্বয় (যেমন: SWIFT, PCI DSS মেনে চলা)।
  • ব্যবহারকারী শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি।
  • প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
  • ব্যাক্তিগত হিসাবের তথ্য কারও সাথে কোন ভাবে শেয়ার না কর।

EFT সুবিধাজনক হলেও সতর্কতা ও প্রযুক্তিগত সুরক্ষা অপরিহার্য।

আরও পড়ুন….এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এত অপছন্দ কেন আমলাদের?

ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) সিস্টেমের মাধ্যমে বেতন বা অন্য আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা তৈরি হতে পারে, যা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমলারা (সরকারি কর্মকর্তারা) নানা ধরনের চাতুরতা বা কার্যক্রমে জড়িত হতে পারে, যা সিস্টেমের সঠিক ব্যবহার বা বাস্তবায়নকে ব্যাহত করতে পারে।

এখানে কিছু সম্ভাব্য চাতুরতা বা প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরা হলো:

১. তথ্য যাচাইয়ে অযথা বিলম্ব:
আমলারা সিস্টেমে শিক্ষকদের তথ্য যাচাই করতে সময় নিয়ে বিলম্ব করতে পারেন। তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে জটিলতা বা অযথা রুটিন কাজ বাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে, যাতে বেতন প্রদানে বিলম্ব হয়। এই ধরনের বিলম্ব শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা তৈরি করতে পারে। যা আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের বেলায় এবং এই বিষয়টির শতভাগ সুযোগ গ্রহণ করছে।

২. অনেক শিক্ষকের তথ্য ভুল থাকা:
আমলারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো সময়মতো এবং সঠিকভাবে আপডেট না করলে, এই তথ্য ভুল থেকে যেতে পারে। যদি কোনো শিক্ষকের নাম, পদবী, অথবা জন্মতারিখ ভুল থাকে, তবে ইএফটি সিস্টেমে সেই তথ্য প্রবাহিত না হওয়ার কারণে বেতন প্রাপ্তি বিলম্বিত হতে পারে। এই সুযোগটি খুব ভালভাবে মাউশি গ্রহণ করছে।

৩. অথিত্বের প্রশ্নে গড়িমসি:
সরকারি কর্মকর্তা বা আমলারা কোনো শিক্ষকের তথ্য আপডেট বা সংশোধন করতে চাইলে তা দীর্ঘ সময় নিতে পারেন, ফলে সেই শিক্ষক নির্দিষ্ট সময়ে তার বেতন পায় না। আমলারা নিজেদের কাজ দ্রুত না করার জন্য অনেক সময় নানা অজুহাত খুঁজে বের করতে পারেন। যেটাকে আমরা সরিষার মধ্যে ভুতের সাথে তুলনা করতে পারে।

আরও পড়ুন…..শিক্ষকদের ভাতা বাড়ানো নিয়ে আমলাদের দর কষাকষি।

৪. সিস্টেমের কার্যকারিতা নিয়ে ব্যর্থতা:
প্রশাসনিক ব্যবস্থার মধ্যে প্রযুক্তিগত সমস্যাও থাকতে পারে, যেমন সিস্টেম ক্র্যাশ, ডেটা লিক, বা সফটওয়্যারের ত্রুটি। এসব ক্ষেত্রে আমলারা এই সমস্যাগুলিকে চাতুরতার অংশ হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন।

৫. নির্দিষ্ট তথ্য চুরির আশঙ্কা:
কোথাও কোথাও কিছু অযাচিত কর্মচারী বা আমলারা তথ্যের অপব্যবহার করতে পারেন, যা ফলে সিস্টেমের মাধ্যমে বেতন বা প্রণোদনা প্রদান করা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তথ্য চুরি বা সিস্টেমের ভুল ব্যবহার তাদের জন্য সুবিধাজনক হয়ে উঠতে পারে।

৬. এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চাহিদা উপেক্ষা:
শিক্ষকদের প্রয়োজনীয়তা এবং তাদের নির্দিষ্ট দাবি উপেক্ষা করা, তাদের তথ্য সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসি করা, অথবা বেতন বৃদ্ধি ও অন্যান্য সুবিধা সংক্রান্ত নীতির দ্রুত বাস্তবায়ন না করা হতে পারে আমলাদের আচরণের অংশ।

৭. আইন বা নীতি পরিবর্তন করা:
কখনো কখনো কোনো অজুহাত দেখিয়ে সরকার বা আমলারা ইএফটি সিস্টেমের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম-কানুন বা নীতি প্রবর্তন করতে পারে। এই নীতির মাধ্যমে তারা সিস্টেমের কার্যকারিতা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারেন।

এই চাতুরতা কাটানোর উপায়:

  1. সুশাসন এবং তদারকি: সিস্টেমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য সুশাসন এবং তদারকির জন্য শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
  2. শিক্ষকদের অধিকার সচেতনতা: শিক্ষকদের তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা এবং আন্দোলন বা প্রতিবাদের মাধ্যমে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া।
    আইনি পদক্ষেপ: যদি কোনো ভুল বা অবিচার ঘটে, তবে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ রাখা।
  3. প্রযুক্তি ব্যবহার: সিস্টেমের প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধান করে দ্রুত তথ্য যাচাই এবং বেতন প্রদান নিশ্চিত করা।


ইএফটি ব্যবস্থায় যেকোনো চাতুরতা বা প্রতিবন্ধকতা শিক্ষকদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কিন্তু শক্তিশালী নেতৃত্ব, প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং শিক্ষকদের একযোগিতার মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আমার খবর
© All rights reserved © 2025 Kisukhoner Pathshala
Customized By BlogTheme