এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা যেন এদেশের কোন পেশাজীবি না। এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের পরিবার পরিজন নাই, নাই তাদের কোন প্রয়োজন। এভাবে কতদিন সহ্য করা যায়, এভাবে আর কতদিন অন্যায়ের সাথে আপোষ করে চলা যায়।
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাড়ে তিন লাখ শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন চলতি সপ্তাহে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো বেতন ছাড়ের প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়নি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ইএমআইএস) সেল। ফলে চলতি সপ্তাহে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয় অর্থ সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন উৎসব যেন আজীবনের অভিশাপ! এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য?
প্রকৃতপক্ষে মাউশির সমস্যা কোথায়? তা কিন্তু দিন দিন পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে সকলের কাছে। সেচ্ছাচারিতার একটা মাত্রা থাকা দরকার। মাউশির সেচ্ছাচারিতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। মাত্রা ছাড়ানোর ফলাফল ভাল হয় না। তা যদি দেখেও না শেখে তাহলে পরিণতি কিন্তু ঐরকম হবে যেমন তাদের উত্তরসুরিদের হয়েছে। কারণ এখনও মাউশি যারা আছে তারা তো ফ্যাসিস্ট সরকারেরই সহযোগী অধিকাংশ।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের প্রশাসন ও অর্থ, মাউশির অর্থ ও ক্রয় এবং ইএমআইএস সেল এ তথ্য জানিয়েছে। কিন্তু কেন এ অবস্থা সে সমন্ধে প্রশ্ন করা হলে সঠিক কোন কারণ দেখাতে পারেনি বরাবরের মত এবারও।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব (বাজেট শাখা) লিউজা-উল-জান্নাহ বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন কিংবা বোনাস ছাড়ের প্রস্তাব আমরা পাইনি। প্রস্তাব পাওয়ার পর তা অনুমোদন করতে এক অথবা দুইদিন সময় লাগতে পারে। ৫ম ধাপের বেতনের প্রস্তাব পেয়েছি। অনুমোদনও হওয়ার মধ্যেই আছে।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে মাউশির এক কর্মকর্তা জানান, ‘জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় লটের অর্থাৎ ৫ম ধাপের বেতনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন এবং ঈদের বোনাসের অর্থ ছাড়ের প্রস্তাব এখনো পাঠানো সম্ভব হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি চলতি সপ্তাহের মধ্যে প্রস্তাব পাঠানোর।’
চলতি সপ্তাহে শিক্ষক-কর্মচারীরা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পাবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ‘চলতি সপ্তাহে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন হওয়ার সম্ভাবনা কম। কেননা প্রস্তাব পাঠানোর পর তা অনুমোদনের জন্য দুই-একদিন সময় লাগে। এরপর সেটি চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। ফলে চলতি সপ্তাহে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।’
এর আগে গত শনিবার মাউশি ডিজি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আজাদ খান বলেছিলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারীদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন চলতি সপ্তাহে দেওয়া হতে পারে। এ বিষয়ে ইএমআইএস সেল থেকে আমাকে একটি লিখিত ফরম্যাট দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০ মার্চের মধ্যে তারা বেতন পেতে পারেন।’
মাউশির কর্মকর্তা কর্মচারীরা ইদানিং সবকিছুতেই ইএফটির জটিলতার কথা বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করে। তাহলে ইএফটিতে প্রতি মাসে শিক্ষক কর্মচারীদের তথ্য নতুন করে ভেরিফিকেশন করতে হয়। যদি তা না হয় তাহলে তো অর্থ ছাড় সংক্রান্ত্র হিসাবের ফাইল মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতে এত জটিলতা হওয়ার কথা নয়। আসলে ভুত তো সরিষার মধ্যেই।
এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ইএফটিতে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওর বেতন-ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও ইএফটিতে ছাড় হয়। পরবর্তী সময়ে গত ১ জানুয়ারি ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতার সরকারি অংশের টাকা পেয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে ৬৭ হাজার, তৃতীয় ধাপে ৮৪ হাজার এবং চতুর্থ ধাপে ৮ হাজার ২০০ এর অধিক শিক্ষক-কর্মচারীকে ডিসেম্বর মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা জানুয়ারি মাসের বেতনও পেয়েছেন এবং ৫ম ধাপের ১৬ হাজার ৪০০ এর অধিক শিক্ষক কর্মচারী ডিসেম্বর ও জানুয়ারী বেতনের অপেক্ষায় আছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন ধাপের শিক্ষক কর্মচারীই তাদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পায়নি।
Leave a Reply