ইএফটি (Electronic Fund Transfer) এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য অনেকটা আশীর্বাদ এবং অভিশাপ উভয়ই হতে পারে, এবং এটি পুরোপুরি নির্ভর করে বিভিন্ন পরিস্থিতির ওপর। চলুন, এর দুটি দিক আলোচনা করি:
ইএফটি – আশীর্বাদ:
১) সুবিধাজনক পদ্ধতি:
- ইএফটি মাধ্যমে বেতন দ্রুত স্থানান্তর হয়ে থাকে, যা শিক্ষকদের জন্য সুবিধাজনক। ব্যাংক চেকের বদলে সরাসরি একাউন্টে টাকা চলে আসে, যা সময় সাশ্রয়ী এবং আরো নিরাপদ।
- শিক্ষকদের জন্য স্বচ্ছতা: ইএফটি পদ্ধতি স্বচ্ছতা নিয়ে আসে। শিক্ষকরা সহজেই তাদের বেতন পেতে পারেন এবং কোনো ধরনের ফাঁকি বা বিলম্ব কম হয়ে থাকে (যতটুকু প্রযুক্তিগত সমস্যা ছাড়া)।
২) অনলাইনে কাজ সহজ করা:
- অনলাইনে বেতন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান দ্রুত করা যায়। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা যেকোনো সময় তাদের বেতন সংক্রান্ত তথ্য অনলাইনে যাচাই করতে পারেন এবং এই পদ্ধতিতে সময় ও শ্রমের সাশ্রয় হয়।
৩) বেতন প্রদানে ম্যানেজিং কমিটির কর্তৃত্ব হ্রাস:
- এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন প্রদানে ম্যানেজিং কমিটির কর্তৃত্ব ফলানো আজীবনের সমস্যা সেখান থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাওয়া যাবে।
- ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের সকল সময় খবরদারি করার হাত থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যাবে।
৪) কম ঝামেলা:
- চেক বা ক্যাশ পেমেন্টের তুলনায় ইএফটি নিরাপদ ও দ্রুত। এতে ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে সব কিছু সঠিকভাবে রেকর্ড থাকে, তাই বিভিন্ন ত্রুটি বা ভুলের সম্ভাবনা কম থাকে।
ইএফটি – অভিশাপ:
১) প্রযুক্তিগত ত্রুটি:
- ইএফটি সিস্টেমে ত্রুটি অনেক সময় সমস্যার সৃষ্টি করে। যদি কোনো ডেটা ভুল বা অনুপস্থিত থাকে, তাহলে শিক্ষকের বেতন স্থানান্তর বিলম্বিত হতে পারে বা পুরোপুরি বন্ধও হয়ে যেতে পারে।
বিকল্প ব্যবস্থা না থাকা: যখন সিস্টেম কাজ না করে, তখন কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার কারণে শিক্ষকরা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বেতন না পেয়ে সমস্যায় পড়েন।
২) তথ্য সমস্যা (Data Issues):
- তথ্য ভুল থাকতে পারে: অনেক সময় শিক্ষকদের ব্যাংক তথ্য, এনআইডি, নাম বা জন্মতারিখ ইত্যাদি ভুল হওয়ার কারণে পেমেন্ট আটকে যেতে পারে।
- নতুন তথ্য আপডেটের সমস্যা: যদি শিক্ষকের তথ্য ইএফটি সিস্টেমে সঠিকভাবে আপডেট না হয়, তাহলে বেতন স্থানান্তর প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতা হতে পারে। এখানে মাউশি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
৩) অন্য একটি সমস্যা – পেমেন্টে বিলম্ব:
- এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মাঝে অনেক সময় ইএফটি পেমেন্টে বিলম্ব ঘটে থাকে, যেটি শিক্ষকদের জন্য একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। মাসের ১ তারিখে বেতন পাওয়ার আশা থাকলেও সিস্টেম বা প্রশাসনিক দেরি কারণে অনেক সময় বেতন পেতে দেরি হয়।
৪) মাউশির উদাসীনতাঃ
- আমরা যে ধরনের সুবিধা আশা করেছিলাম সে ধরনের সুবিধা মাউশি আমাদের কতটুকু প্রদান করবে তা কিন্তু সন্দিহান।
- মাউশি যে আমাদেরকে বেতন প্রদান নিয়ে ঝামেলা জিইয়ে রাখবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
- মাউশির ইচ্ছা একটা বড় ব্যাপার মাউশি যদি ইচ্ছা না করে তাহলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা কোনদিনই সময় মত বেতন পাবে না। এখন এখানে মাউশির কর্তৃত্ব মাউশি কখনও ছাড় দিবে বলে মনে হয় না।
৫) ইএফটি পদ্ধতির জটিলতা:
- নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য প্রথমদিকে ইএফটি সিস্টেমের সাথে মানিয়ে নেওয়া কঠিন হতে পারে। তাঁদের তথ্য সঠিকভাবে সিস্টেমে ইন্টিগ্রেট করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, অন্যথায় পেমেন্ট প্রক্রিয়ায় সমস্যা তৈরি হবে।
- মাউশি কখনও সরকারী চাকুরীজিবীদের মত ইএফটির সুবিধা এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের দিবে না। কারণ এটা তাদের মানসিক সমস্যা।
সার্বিকভাবে:
ইএফটি শিক্ষকদের জন্য যদি কার্যকরভাবে চালানো যায়, তবে এটি একটি আশীর্বাদ হতে পারে। তবে, যদি প্রযুক্তিগত বা প্রশাসনিক সমস্যার কারণে সঠিকভাবে কাজ না করে, তবে এটি অভিশাপ হতে পারে। প্রত্যেকটা বিষয়ের ভাল ও খারাপ দুটি দিক বিদ্যমান এখন আমরা কোনটা গ্রহণ করব আর কোনটা বর্জন করব সেটা আমাদের ব্যাপার। ইএফটির যেমন ভাল দিক আছে তেমনি ইএফটির উন্নয়নের দিক অনেক আছে। ভাল দিক যেমন আমাদের উপকারের কারণ হতে পারে তেমনি এর উন্নয়নের দিক নিয়ে চর্চা করে কিন্তু তা ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সুতরাং, ইএফটি সিস্টেমের সঠিক প্রয়োগ এবং সবার দিক থেকে সঠিক মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি, যাতে শিক্ষকদের জন্য এটি একটি আশীর্বাদ হয়ে থাকে, অভিশাপ নয়।
Post Views: 280
Leave a Reply