আমাদের ক্রিকেট ও ওয়ানডে ক্রিকেট

আমি যখন বসে এই আর্টিকেলটি লিখছি তার কিছুমাত্র আগে বাংলাদেশ তার নিজের মাঠে দুর্বল ওয়েষ্ট ইন্ডিজকে ওয়ানডে ক্রিকেটে হোয়াইট ওয়াশ করেছে। তাই অত্যন্ত আনন্দের সাথে বসেই এই আর্টিকেলটি লিখছি। আমাদের ক্রিকেটে যে কয়টা আনন্দের মুহুর্ত আমরা হাতেগোনা পেয়েছি তা কিন্তু ওয়ানডে ক্রিকেট থেকেই। অন্যান্য ফরম্যাটের ক্রিকেটে যে আমাদের আনন্দঘন মূহুর্ত আসে নি তা কিন্তু নয় তবে ওয়ানডে ক্রিকেটে আমরা যত সাফল্য পেয়েছি অন্যান্য ফরম্যাটের ক্রিকেটে সেভাবে এখনও কিন্তু আমরা সাফল্য পাইনি। তবে ভবিষ্যতে সাফল্য যে পাব না তা কিন্তু একবার বলছি না।

অন্যান্য যে দেশগুলো ক্রিকেট খেলে তারা যেভাবে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছে আমরা কিন্তু সেভাবে শুরু করেনি। অন্যান্য দেশের মধ্যে কেউ শুরু করেছে টেষ্ট ক্রিকেট দিয়ে কেউ বা শুরু করেছে টি টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে। আর আমরা কিন্তু শুরু করেছি ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে। আর তাই আমাদের ক্রিকেটে শক্তির অন্যতম প্রধান জায়গায় কিন্তু এটাই। ওয়ানডে ক্রিকেটে আমরা যতটুকু ভাল খেলি তার চেয়ে আরো অনেক বেশি ভাল আমাদের খেলার সামর্থ কিন্তু আমাদের আছে। কারণ ওয়ানডে ক্রিকেট উপযোগী আছে আমাদের বেশি কিছু খেলোয়াড়। আমাদের আছে বিশ্বের 1নং ওয়ানডে অলরাউন্ডার, আছে বিশ্বের অন্যতম সেরা কিছু ব্যাটসম্যান, আর ওয়ানডে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার কাটার মাষ্টার “মোস্তাফিজুর রহমান”। কিন্তু সেই তুলনায় আমাদের সাফল্য কিন্তু কম। সেই সাফল্য না পাওয়ার  পেছনে যে কারণ গুলো কাজ করেছে তা হলো বিভিন্ন সময়ে আমাদের কিছু হটাকারী সিদ্ধান্ত এবং আইসিসির কিছু বিমাতাসুলভ আচরণ। ক্রিকেটের এই সবোর্চ্চ সংস্থা আমার মনে হয় চায় না হাতে গোনা 3-4দেশের বাইরে অন্য কোন দেশ পরাশক্তি হিসেবে আত্নপ্রকাশ করুক। আইসিসির কিছু দ্বিমুখী নীতির কারণে আমারাই যে শুধু ক্রিকেটে উঠে আসতে পারছি না তা কিন্তু নয় আমাদের মতো উঠতি অনেক দেশই ক্রিকেট থেকে দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে অথবা এক জায়গায় স্থির থেকে যাচ্ছে অথবা উঠে আসার সাহস পাচ্ছে না। অভিভাবক হিসাবে আইসিসির উচিত ছিল তার সকল সন্তানদের লালন করা কিন্তু তারা তা না করে তারা শুধু লালন করছে পরিবারের সবল সন্তানদের আর দুর্বল সন্তানদের প্রটেকশন না দিয়ে তারা আরও কিভাবে হারিয়ে যায় সেই কামনা করছে। দুর্বলদের উৎসাহ দিলে দুর্বল ধীরে ধীরে সবল হয়ে উঠে আর দুর্বলকে যদি আপনি উৎসাহ না দেন তাহেল কি সে হারিয়ে যাবে! না হারিয়ে হয়তো কেউ কেউ যাবে আর যে সকল প্রতিকূলতা জয় করে উঠে দাঁড়াবে সে কিন্তু অসম্ভব শক্তিশালী হয়ে উঠে ইতিহাস কিন্তু তাই বলে।

এখন আসি আমাদের নিজের ঘর নিয়ে কিছু কথা বলতে, আমাদের নিজের ক্রিকেট বোর্ড নিয়ে কিছু বলতে। আমাদের ক্রিকেট বোর্ডকে আর ও অনেক বেশি পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে যোগ্য লোকদের ওখানে বসাতে হবে। আমাদের সংগঠকদের বুঝতে হবে যে, তাদের কাজ টেবিলে বসে প্ল্যান নির্ধারণ করা মাঠের প্ল্যান করা তাদের কাজ নয় ওই কাজ করার জন্য নির্ধারিত এক্সপার্ট নিয়োগ দিতে হবে আপনাদের কাজ তাদের থেকে কাজ বুঝে নেওয়া অথবা তাদের তদারকি করা যে তারা ঠিকমত তাদের কাজগুলো করছে না। তাদের স্বাধীনমত তাদের কাজ করতে দেওয়া আবার এত বেশি স্বাধীনতা দেওয়া যাবে না যে, তারা আবার স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। বিদেশী যে কোচরা আমাদের দেশে আসেন আামদের ক্রিকেট শেখাতে তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, এখানে আসার পর তারা তাদের মতো করে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে। যে কারণে অনেক সময় আমাদের হিতের পরিবর্তে বিপরীত হয়ে যায়। আর ফল স্বরুপ হারিয়ে যায় আমাদের কিছু প্রতিভা। যা কখনও আমাদের কাম্য হওয়া উচিত নয়।

ক্রিকেটে আমাদের শক্তির জায়গায় কিন্তু ওয়ানডে ক্রিকেট, আমাদের প্রত্যাশার জায়গায় ওয়ানডে ক্রিকেট, আমরা কিন্তু ভাল খেলিও ওয়ানডে ক্রিকেট তাই আমাদের উচিত এটার দিকেই বেশি নজর দেওয়া তবেই অন্যান্য ফরম্যাটেও কিন্তু আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাব। আমার কথার সাথে হয়ত অনেকে একমত নাও হতে পারেন কিন্তু আমার যুক্তি হলো আপনি যে কাজটা ভাল করতে পারবেনা সেই কাজ যদি আগে করতে চান এবং সফল হতে না পারেন তাহলে কিন্তু আপনার আত্নবিশ্বাস তলানিতে চলে যাবে। তখন কিন্তু আপনি যে কাজটি ভাল করতে পারেন সেই কাজ করতে গেলেও ভুল হয়ে যাবে। তাই আমি চাই আমাদের পছন্দের কাজ আগে করে আত্নবিশ্বাস বৃদ্ধি করে সেই আত্নবিশ্বাস অন্য কাজের সময় কাজে লাগাতে। ক্রিকেটে আত্নবিশ্বাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। তবে জয়ের আত্নবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য প্রতিনিয়ত যদি ঘরের মাঠে নিজেদের মতোকরে স্লো লো  উইকেট বানিয়ে ম্যাচ জেতার অভ্যাস গড়ার চেষ্টা করি তাহলে সেই ট্যাকটিসের মাধ্যমে হয়ত কিছু ম্যাচ আমরা ঘরের মাঠে জিতব এটা ঠিক।  কিন্তু বিদেশের মাটিতে জয়ের অভ্যাস গড়ার জন্য দরকার স্পোটিং উইকেট বানিয়ে সেখানে খেলার অভ্যাস গড়ে তোলা। কারণ শুধু দেশের মাটিতে জিতে তো আর বিশ্ব জয় করা সম্ভব নয়। বিশ্ব জয় করতে হলে দেশের পাশাপাশি বিদেশের মাটিতেও আমাদের নিয়মিত জয় পেতে হবে। আমাদের খেলোয়াড়দের সেই যোগ্যতা কিন্তু আছে। নেই সেই কথা আমি কেন চরম নিন্দুকেরাও বলবেনা। কিন্তু সমস্যা যে আমাদের নেই তা কিন্তু নয়। আমার কাছে যা মনে হয় তা হল বিদেশের  মাটিতে খেলতে গেলে কেন জানি আমাদের প্লেয়ারদের বডি ল্যাংগুয়েজ পজিটিভ মনে হয় না। মাঠে নামার আগেই তারা কেন জানি হেরে বসে থাকে। প্রত্যেক খেলোয়াড়দের মধ্যে থাকতে হবে দেশপ্রেম। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির জন্য খেলতে হবে। ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে খেলে দেশের কোন লাভ হবে বলে মনে হয় না। কারণ মনে রাখতে হবে খেলাটা একটা দলের তাই সবাইকে এক দল হয়েই খেলতে হবে। সেখানে থাকবে না কোন ব্যাক্তিক চাহিদা তাহলেই পাওয়া যাবে দলীয় সাফল্য। প্রত্যেকেই খেলতে হবে খ্যাতির মোহ ব্যতিরেকে। খ্যাতির মোহ খুবই বিপজ্জনক বিষয়। খ্যাতির বিড়ম্বনায় যদি একবার কেউ উপনীত হয় তাহলে কিন্তু অতল গহ্বরে তলিয়ে যেতে সময় লাগবে না। কারও অহংবোধ থাকা যাবে না। অহংকারবোধ খেলোযাড়দের মধ্যে দুরুত্ব তৈরী করবে। এই দিকে আমাদের সংগঠকদের ও নজরদারি বাড়াতে হবে। কারণ সবাই একদিনে ভাল খেলবে না। একদিন হয়ত কেউ কেউ ভাল খেলবে আবার অন্যদিন হয়ত অন্য কেউ কেউ ভাল খেলবে এটাই বাস্তবতা। এটাই চরম সত্য। তাই আমাদের সংগঠকদের উচিত সুসময়ে যেমন বাহাবা দিতে হবে তেমনি দুঃসময়ে পাশে গিয়েও দাঁড়াতে হবে।

আর কিছু বিষয় উল্লেখ করার মতো তাহলো আমরা টেষ্ট স্ট্যাটাস পেয়েছি 20 বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু আজ অবধি আমরা আমাদের সাপোর্টিং ষ্টাফ হয়তবা তৈরী করতে পারিনি। কারণ যদি পারতাম তাহলে সকল ক্ষেত্রে আমরা বিদেশিদের উপর এত কেন নির্ভরশীল। তবে আমাদের উন্নতি করতে হলে কিন্তু এই জায়গায়তেও নজর দিতে হবে। শুধু খেলোয়াড় তৈরী করলেই হবে না যারা খেলোয়াড়দের ঘষামাজা করবে তাদেরও তৈরী করতে হবে। কতদিন আর বিদেশিদের উপর নির্ভর করব। যে দেশ গুলো আজ উন্নতির চরম শিখরে পৌছেছে তাদের কিন্তু সকল ক্ষেত্রেই উন্নতি করেছে। তাই আমাদের খেলোয়াড় তৈরীর পাশাপাশি এই দিকেও নজর দিতে হবে। কারণ সারাজীবন যদি আমরা আমাদের কাজ বিদেশীদের ভাড়া করে এনে করাই তাহলে আমাদের উন্নতির লেভেল কখনই কাঙ্খিত জায়গায় পৌছাবে না।

এখন যা বলব সেই কথা গুলো আগেও বলেছি আবারও বলছি যে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের এগুতে হবে। পরিকল্পনা হতে হবে দীর্ঘমেয়াদি। কারণ স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা দিয়ে ক্ষনিকের কিছু সাফল্য পাওয়া যাবে হয়তবা কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য পেতে হলে দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।