এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের পর বছর আন্দোলন, দাবি, প্রতিবাদ সত্ত্বেও তারা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। যেমন আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়, “আন্দোলনে সকলের প্রাপ্তির খাতা ভরা, কেবল এমপিওভুক্ত শিক্ষক ছাড়া। কিন্তু কেন?”, এটি সত্যিই এক কঠিন বাস্তবতা, যা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য গভীর হতাশার কারণ। কিন্তু তা কি আমরা কখনও গভীর ভাবে ভেবে দেখেছি এর কারণ কি? আসলে সত্যি কথা বলতে কারণ গুলো আমরা অনেকেই জানি কিন্তু তা থেকে উত্তরনের দিকে আমরা নিজেরাই ধাবিত হই না।
আমাদের অর্থাৎ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলনের আগে পরে অনেকেই আন্দোলনে গিয়েছে এবং দিনশেষে তারা তাদের প্রাপ্তির খাতার ভরাট করে মিষ্টি মুখ করে তবেই তারা বাড়ি ফিরেছে। যেমনঃ আমাদের আন্দোলনের আগে শিক্ষানবিস চিকিৎসকের আন্দোলন, রেলওয়ের আন্দোলন, এবতেদায়ী মাদ্রাসার আন্দোলন আমাদের সময়ে শুরু করা ননএমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলন এছাড়া আরও অনেক আন্দোলন। আমি কারও আন্দোলনের বিপক্ষে বা হিংসা করছি না। আন্দোলন করা প্রত্যেকের নাগরিক অধিকার। তবে সফল হওয়া নির্ভর করে কিন্তু আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বগুন, আন্দোলনকারীদের একগ্রতা, আন্দোলনকারীদের একতা ও নিষ্ঠা, আন্দোলনের ন্যর্যতা ও আন্দোলনের প্রতি কর্তৃপক্ষের সহমর্মিতা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের উপর। এখানে কিন্তু আমরা নিজেরা নিজেদের প্রশ্ন করতেই পারি কিন্তু। আমাদের নিবেদন নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন করাই যায় মনে হয়। আমাদের ৬২টি সংগঠন কিন্তু কেউ কারও সাথে একতাবদ্ধ নই। বিচ্ছিন্ন ভাবে হলেও আমরা কিন্তু সবাই বলি আমাদের সকলের লক্ষ শিক্ষকদের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করা। তাহলে কেন এই মতভেদ একটু ভেবে দেখেছেন কখনও।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যেখানে, তাদের অধিকারের দাবির কথা শোনা হলেও, সেই দাবির সমাধান আসে না বা প্রাপ্তির খাতায় তেমন কিছু যোগ হয় না।
এর পেছনে কয়েকটি মূল কারণ থাকতে পারে:
১. প্রশাসনিক অবহেলা:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন ও সুবিধার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতায় আটকে রয়েছে। তাদের অধিকারের বিষয়ে বিভিন্ন সময় আশ্বাস দেওয়া হলেও, বাস্তবায়ন হয়নি। তাছাড়া, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় মনোযোগের অভাব এবং আমলাদের অস্বচ্ছতা এসব আন্দোলনকে প্রায়শই স্থবির করে দেয়।
২. রাজনৈতিক প্রভাব:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলন কখনো কখনো রাজনৈতিক চাপের শিকার হয়। রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন, প্রশাসনিক পরিবর্তন বা নির্বাচনের সময় তাদের দাবি পূরণের ক্ষেত্রে নানা রকম বাধা তৈরি হয়। ফলে, তারা অনেক সময় আশা দেখলেও বাস্তবে সেই আশা পূরণ হয় না।
৩. অসঙ্গতিপূর্ণ দাবি ও বাস্তবায়ন:
শিক্ষা খাতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি সাধারাণত যথাযথ হলেও, তাদের প্রতি সরকারের অঙ্গীকার কখনো একীভূত হয় না। কিছু দাবি বাস্তবায়নে সরকারের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, প্রশাসনিক জটিলতা এবং অন্য আর্থিক বা আইনগত প্রতিবন্ধকতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
৪. লিডারশিপের অভাব:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলনে অনেক সময় সঠিক নেতৃত্বের অভাব দেখা দেয়। একটি আন্দোলনে সঠিক নেতৃত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু অনেক সময় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের অভাব বা নেতৃত্বের অস্থিরতা আন্দোলনকে কম শক্তিশালী করে ফেলে। যেহেতু বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের মাঝে মতানৈক্য বা বিভাজন থাকতে পারে, তাই আন্দোলনের সফলতার সম্ভাবনা কমে যায়।
৫. সামাজিক মূল্যায়ন:
শিক্ষক সমাজের মধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলনকে সমর্থন না করা বা তাদের পাশে না দাঁড়ানো একটি বড় সমস্যা। তাদের সংগ্রামকে পুরোপুরি সমর্থন বা সমাজে কাঙ্ক্ষিত মর্যাদা প্রদান না হলে আন্দোলনের গতিশীলতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষকরা একে অপরের পাশে না দাঁড়িয়ে নিজেরাই আলাদা হয়ে আন্দোলনে অংশ নেন, যার ফলে আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করা কঠিন হয়ে পড়ে।
৬. সরকারের প্রতিশ্রুতির অভাব:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, সুবিধা বা অন্যান্য দাবি সংক্রান্ত সরকারের প্রতিশ্রুতি মাঝে মাঝে অঙ্গীকারের পর্যায়ে থেকে যায়, তবে বাস্তবায়ন অনেক সময় অনিশ্চিত থাকে। যেমনটা আমরা দেখতে পেয়েছি, বারবার দাবি, প্রতিশ্রুতি এবং আশ্বাসের পরেও বাস্তবে সেই প্রতিশ্রুতির কোনো পরিবর্তন বা সুফল পাওয়া যায় না। এবারও পাওয়া গেছে কিছু প্রতিশ্রুতি। কিন্তু পরিস্কার কোন আশ্বাস পাওয়া যায়নি।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য আন্দোলনে সফলতার পথে কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ:
উপসংহার:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য আন্দোলনে প্রাপ্তির খাতা কখনোই পূর্ণ হবে না যদি তারা তাদের দাবিকে সুনির্দিষ্ট, ঐক্যবদ্ধ এবং স্থিতিশীলভাবে উপস্থাপন না করে। আন্দোলনে নেতৃত্বের অবিচলতা, জনসাধারণের সমর্থন এবং সরকারের প্রতি সঠিক দাবি সমর্থন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা খাতের উন্নয়ন এবং শিক্ষক সমাজের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য সরকারের সুস্পষ্ট নীতি এবং কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
Leave a Reply