ভ্যাকসিন কি সবার প্রয়োজন
ভাবছেন আমি কি আবার ডাক্তার হয়ে গেলাম নাকি। নাহ আমি কোন ডাক্তার হইনি আমি আগেও যেমন ছিলাম এখন ঠিক তেমনি আছি। কিন্তু শিরোনাম তাহলে এমন দিলাম কেন দিলাম এই জন্য যে বর্তমানে আমাদের পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও আগ্রহের বিষয়বস্তু হলো ভ্যাকসিন। মানুষ এতদিন ভ্যাকসিন সমন্ধে যতটা জানত তার চেয়ে ঢের বেশি করোনাকালীন সময়ে জেনেছে। এই যেমন কোভিড এর ভ্যাকসিন কোনদিন পাওয়া যাবে। কত টাকায় পাওয়া যাবে, ফ্রিতে পাওয়া যাবে কিনা টাকা দিয়ে কিনে নিতে হবে। ভ্যাকসিন কতদিন ক্রিয়াশীল থাকবে। ভ্যাকসিন দিলে কোন প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিবে নাকি। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ও কোভিডে আক্রান্ত হবে নাকি ইত্যাদি ইত্যাদি। এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের জানতে হবে ভ্যাকসিন আসলে আমাদের দেহে কিভাবে কাজ করে। জানতে হবে মানবদেহ জীবানু বা অসুস্থতার সাথে কিভাবে লড়াই করে। দেহের ভিতরে যখন কোন জীবানু(ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া) আক্রমণ করে তখন তারা প্রথম যে কাজটি করে তা হলো তাদের বংশবৃদ্ধি করা। যারা ফলে দেহের ভিতরে ধীরে ধীরে জীবানুর পরিমাণে বাড়তে থাকে ফলে দেহের ভিতরে নানা মুখী সমস্যা তথা দেহের ভিতরে ইনফেকশন তৈরী করে। তখন আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধকারী ব্যবস্থা ঐ জীবানুদের আক্রমণকারী হিসাবে বিবেচনা করে। তাদের বিরুদ্ধে দেহের ভিতরে এন্টিবডি তৈরী করে। অ্যান্টিবডির 1ম কাজ হচ্ছে দেহকে সুস্থ করে তোলা। 1ম অবস্থায় অ্যান্টিবডিগুলি সঠিক ভাবে কাজ করতে নাও পারে। কারণ তারা তো প্রশিক্ষিত নয় যার ফলে তারা সঠিক ভাবে জীবানুগুলো নাও চিনতে পারে ফলে আমাদের সুস্থ হতে সময় লাগে। কিন্তু যদি দেহের ভিতরে একবার এন্টিবডি তৈরী হয়ে যায় তাহলে সেগুলো দেহের ভিতরে রক্ষের মধ্যে এন্টিবডি গুলো থেকে যায় এবং ভবিষ্যতে যদি আবারও ঐ জীবানু আমাদের দেহকে আক্রমণ করে তাহলে তারা খুব দ্রুত তা চিনতে পারে এবং সেগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। এমনকি বহু বছর পর ও যদি ঐ জীবানু আক্রমণ করে তাহলেও তাদের হাত থেকে আমাদের দেহ কে রক্ষা করে। এজন্য দেখা যায় অনেক মারাত্নক মরণঘাতি রোগ একবার হয় পরবর্তীতে আর হয় না।
তাহলে এখন যদি আমদের মধ্যে একটি প্রশ্নের উত্তর পেলাম যে ভ্যাকসিন কিভাবে আমদের দেহে কাজ করে। সরল ভাষায় যদি বলি তাহলে বিষয়টা এমন দাঁড়ায় যে- ভ্যাকসিন আমদের দেহে ইনজেকট করানো মানে যে রোগের জন্য আমি ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করলাম সেই রোগের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া গুলোকে একটি বিশেষায়িত প্রক্রিয়ার মধ্যে আমাদের দেহের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। সে গুলো দেহের ভিতরে প্রবেশ করার পর আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে লড়াই শুরু করে কিন্তু তাদের যেহেতু একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আমাদের দেহের মধ্যে প্রবেশ করানো হয় সেই কারণে তারা সাধরাণত ঐ রোগ সৃষ্টিকারী জীবানুর তুলনায় কিছুটা দুর্বল বা অ্যাটেনিওটেড প্রকৃতির ও নিস্ক্রিয় ভাইরাস হয় বা কখনও কখনও ঐ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার একটি অংশ ব্যবহার করা হয় বা অনেক সময় বিশেষ করে ব্যকটেরিয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের টক্সিন নেওয়া হয় এবং সেই টক্সিন শোধন করে ব্যবহার করা হয় যার ফলে তারা আমাদের দেহের ইমিউনো সিস্টেমের সাথে লড়াই করে পেরে উঠে না। কিন্তু এর ফলে আমাদের দেহের যে উপকারটি হয় তা হল আমাদের দেহ একটি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়। ফলে আমাদের দেহের বা আমাদের যে উপরকারটি হয় তাহল পরবর্তীতে ঐ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দেহকে আক্রমণ করতে আসলে প্রশিক্ষিত রোগ প্রতিরোধকারী সিস্টেমের সাথে আর পেরে উঠে না আক্রমনের শুরুতেই জীবানুগুলোকে শনাক্ত করতে পারে এবং ঐ জীবানুকে প্রবলভাবে আক্রমণ করে তাদের ধ্বংস করে ফেলে।
এখন প্রশ্ন হলো এই উপকারী অস্ত্রটি আমরা কিভাবে পেতে পারি বা আমরা আমাদের দেহের জন্য কিভাবে গ্রহণ করতে পারি। উদ্বেগটা এখানেই, আমাদের দেশে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য সরকার নীতিমালা তৈরী করার চেষ্ট করছে খুবই ভাল কথা কোন নীতিতে নীতিমালা তৈরী হচ্ছে তাই বোধগম্য নয়। কোন শ্রেণীর নাগরিক আগে ভ্যাকসিন পাবে কারা পরে পাবে তা পরিস্কার নয়।
আমাদের দেশের বিদ্যালয়গুলো বিগত মার্চ মাস থেকে বন্ধ। বিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেমেয়েগুলো ঘরে বসে আছে প্রায় 1 বছর হতে চলল। এর মধ্যে এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থীরা অটো পাস পেয়েছে স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা এক শ্রেণীর পড়া শুরু করতে না করতে নতুন বইয়ের গন্ধ না যেতেই নতুন অন্য একটি ক্লাশে প্রমোশন পেয়ে গেছে তাদের বিষয়ে আমাদের দেশের নীতি নির্ধারকদের কোন প্রকার মাথা ব্যাথা আছে বলে মনে হচ্ছে না। তাদেরকে কিভাবে ভ্যাাকসিনেশনের আওতায় আনা যায় কিভাবে তাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে সেই বিষয়ে পরিস্কার কোন প্রকার নির্দেশনা কোথায় নাই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিদ্যালয়গুলো আর কতদিন এভাবে বন্ধ থাকবে। কতদিন আর আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এভাবে বাড়িতে অলস সময় কাটাবে এভাবে কি আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত আমরা নিজেরাই নষ্ট করে ফেলছি না। করোনার ভয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের আমরা ঘরে আবদ্ধ জীবন যাপন করাচ্ছি কিন্তু এভাবে কি আমরা তাদের ভবিষ্যতকে আবার আবদ্ধ করে ফেলছি না তো।
আমাদের কৃষকেরা কিভাবে ভ্যাকসিন পাবে তা নিয়ে কি কোন প্রকার চিন্তা ভাবনা আছে নাই। অথচ কৃষক যদি সুস্থ না থাকে তাহলে কিন্তু আমাদের স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন স্বপ্ন আমরা রাতে না দেখে দিনে দেখা শরু করব। আমাদের সাধারণ জনগণ কবে কখন কিভাবে ভ্যাকসিন পাবে তার কোন প্রকার দিক নির্দেশনা কোথাও নাই। আর ছিন্নমুল মানুষের কথা তো না বাদই দিলাম। কিন্তু একটা কথা মনে হয় আমরা সবাই জানি দেশে যদি একটিও কোভিড আক্রান্ত রোগী থাকে তা থেকে সারা দেশ ছড়িয়ে পড়তে কিন্তু সময় লাগবে বলে মনে হয় না।
বর্তমানে যে ভ্যাকসিনগুলো পাওয়া যাচ্ছে তার কোনটির বিষয়ে সঠিক করে বলা যাচ্ছে না যে এটি কতদিন আমাদেরকে সুরক্ষিত করবে। তবে যতদুর ধারণা পাওয়া যাচ্ছে তা হলো 6মাস থেকে 1বছর। তহলে এই সময়ের মধ্যে কি আমাদের সকল শ্রেণীর জনগণকে ভ্যাকসিনের আওতায় না আনতে পারি তাহলে কি করোনা চেইন নষ্ট করতে পারব আমরা। আর চেইন যদি নষ্ট করতে না পারি তাহলে এই ভ্যাকসিন দেওয়ার সুফল কিন্তু আমরা পাব বলে মনে হয় না।
এখন পরম সত্য একটা কথা আমার বা আমাদের দেশের সকল মানুষের জানার আগ্রহ যে আমরা কি আদৌ ভ্যাকসিন পাব কি। কারণ ভ্যাকসিন দেওয়ার যে প্রক্রিয়ার কথা একটু আধটু শুনা যাচ্ছে যে ফ্রন্ট লাইনাররা আগে ভ্যাকসিন পাবে আসলে ফ্রন্টলাইনার বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে। আমার জানা মতে কোভিডের ক্ষেত্রে ফ্রন্টলাইনার হলো ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসা পেশার সাথে যুক্ত যারা। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো ফ্রন্টলাইনারদের সাথে ব্যাকলাইনারদের যুক্ত করা হবে নাতো। অথবা সবাই ফ্রন্টলাইনার হয়ে যাবে না তো। স্বজনপ্রীতি শুরু হবে না তো। দেখা যাচ্ছে আমরা সবাই চিকিৎসা পেশার সাথে যুক্ত হয়ে গেছি।
ভ্যাকসিন যে প্রক্রিয়ায় আমরা আনতে যাচ্ছি তাতে কি আমরা তা থেকে সুফল পাবো তো এবং তা যদি আমরা সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে না নিতে পারি তাহলে কিন্তু আরও বেশি প্রশ্নের মধ্যে পড়বে। এই জন্য জরুরি বিষয় হলো একটি সুশৃঙ্খল প্রটোকল তৈরী করা। যা আমাদের ভ্যাকসিনের সুফল বয়ে আনবে।
আসল কথা হল ভ্যাকসিন আমাদের সবার যেমন প্রয়োজন তেমনি এটি যার বা যাদের আগে প্রয়োজন তাদের আগে দিতে হবে যার একটু পরে হলেও হবে তাদের একটু পরে নিতে হবে।